সেই তিন প্রতারকের বিরুদ্ধে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন

চাকরি দেয়ার নামে প্রতারণা

নিজস্ব  প্রতিবেদক :

কাস্টমস, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থায় চাকরি দেয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে  পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই-মেট্টো)।

গতবছর ডিসেম্বর মাসে পিবিআই’র হাতে গ্রেফতার হয়েছিল ঝালকাঠির রাজাপুর থানার কৈবর্তখালী গ্রামের মজনু সিকদারের ছেলে রিপন সিকদার (৩০), ফেনীর পরশুরাম থানার সালামত আলি চৌধুরী বাড়ির মোস্তফা চৌধুরীর ছেলে আনোয়ারুল হোসেন ওরফে আতিকুর রহমান চৌধুরী ও নারায়ণগঞ্জের মৃত খবির উদ্দিনের ছেলে তোফাজ্জল হোসেন (৫৪)।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই তিন প্রতারক  কখনো পুলিশ সুপার, কখনো কাস্টমস কর্মকর্তা আবার কখনো সেনা কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেয়ার নামে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিতেন।  মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই’র পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা গণমাধ্যমকে জানান, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভুয়া নিয়োগপত্র, প্রবেশপত্র, বিভিন্ন নিয়োগের প্রশ্নপত্র, উত্তরপত্র, পুলিশ সুপারের কাছে প্রেরিত ভেরিফিকেশন পত্র, অফিসিয়াল চিঠি প্রেরণের নমুনাখামসহ সবকিছুই তারা তৈরি করতে পারে। বিভিন্ন হোটেলে এনে নিয়োগপ্রার্থীদের নিয়োগ পরীক্ষাও নেয়। টাকা বুঝে নেয়ার পর নির্ধারিত প্রতিষ্ঠানের সামনে নিয়োগ প্রার্থীকে নিয়োগপত্র বুঝিয়ে দিয়ে যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটি বন্ধ করে দেয়।

গ্রেফতারের পর প্রতারণার কথা স্বীকার করে গত বছরের ২০ ডিসেম্বর আদালতে জবানবন্দিতে আতিকুর রহমান বলেন,  ‘সরকারি চাকরি দেয়ার কথা বলে, তার কাছ থেকে ৭০ লাখ টাকা নিয়েছিলো সরকারি একটি সংস্থার একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা। কিন্তু ওই কর্মকর্তা চাকরিও দেয়নি টাকাও ফেরত দেয়নি। পরবর্তীতে আতিকুর ছদ্মনাম ধারণ করে রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও চট্টগ্রাম কাস্টমসে চাকরি দেয়ার কথা বলে বিভিন্নজনের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। প্রতারণার কাজটি খুবই নিখুঁতভাবে করেন আতিক। সংস্থার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আবেদন করা, নিয়োগ কমিটির চেয়ারম্যানের সই করা প্রবেশপত্র দেয়া, লিখিত, মৌখিক ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা, এমনকি পুলিশ ভেরিফিকেশনও হয়। সব প্রক্রিয়া শেষে নিয়োগপত্র নিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রার্থী যখন চাকরিতে যোগ দিতে যান, তখন বুঝতে পারেন তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। ততক্ষণে আতিক মোবাইল বন্ধ করে গা ঢাকা দেন। প্রতারণা করার সময় নিজেকে আনোয়ার হিসাবে পরিচয় দিতেন তিনি। চট্টগ্রাম কাস্টমস, এনবিআর ও সেনাবাহিনীতে চাকরি দেয়ার কথা বলে ৫২ জনের কাছে নিয়োগপত্রও পাঠিয়েছেন আনোয়ার। তফাজ্জল নিজেকে সরকারি কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে এনবিআর, কাস্টমস, বন্দর ও সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পদে চাকরির নকল আবেদনপত্র প্রার্থীদের দিয়ে পূরণ করাতো। চাকরি প্রার্থীদের নকল প্রবেশপত্র, ভুয়া প্রশ্ন, উত্তরপত্রও দিতো। পরবর্তীতে ভুয়া রেজাল্টশিট তৈরি করা হতো। চাকরি প্রার্থীদের পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের জন্য সংশ্লিষ্ট থানায় পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের কাগজও পাঠাতো। সব টাকা হাতে পাওয়া পর ডাকাযোগে প্রার্থীদের বাড়ির ঠিকানায় ভুয়া নিয়োগপত্র পাঠিয়ে মোবাইলটি বন্ধ করে দিতো। এ ধরনের ভুয়া নিয়োগপত্র পেয়ে মেজবাহ নামে একজন চট্টগ্রামে আসেন। তাকে দিয়ে একটি ফরম পূরণ করে চাকরিতে যোগদানের জন্য কাস্টমস হাউজে ঢুকিয়ে দিয়ে তারা সরে যান।