সুয়্যারেজ সিস্টেম : শত বছর পিছিয়ে চট্টগ্রাম

DCIM100MEDIADJI_0190.JPG

ঢাকায় সুয়্যারেজ সিস্টেম চালু হয় ১৯২৩ সালে

নিজস্ব প্রতিবেদক »

সুয়্যারেজে ঢাকা থেকে ১০৩ বছর পিছিয়ে চট্টগ্রাম। ঢাকা ওয়াসা ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও ঢাকায় সুয়্যারেজ সিস্টেম চালু হয় ১৯২৩ সালে। ৫০ কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যমে তারা এই সুয়্যারেজ প্রকল্প চালু করেছিল। পরবর্তীতে ১৯৭৭ সালে ব্যাপকহারে সুয়্যারেজ সিস্টেম চালু করে ঢাকা ওয়াসা। এখন পর্যন্ত ঢাকার ২০ শতাংশ এলাকা সুয়্যারেজের আওতায় এসেছে। কিন্তু দেশের দ্বিতীয় প্রধান নগরী চট্টগ্রামে ১৯৬৩ সালে ওয়াসা প্রতিষ্ঠিত হলেও দীর্ঘ ৫৭ বছর সুয়্যারেজ নিয়ে অন্ধকারেই ছিল চট্টগ্রাম। চলমান প্রকল্পটি ২০২৬ সালে শেষ করা গেলে তখন থেকে চট্টগ্রামে চালু হবে সুয়্যারেজ সিস্টেম। সেই হিসেব ঢাকার ১০৩ বছর পর চট্টগ্রামে চালু হতে যাচ্ছে সুয়্যারেজ সিস্টেম।

২০১৭ সালের ১২ মার্চ পতেঙ্গায় বোট ক্লাব চত্বরে চট্টগ্রাম ওয়াসার ‘শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার’ প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামে সুয়্যারেজ সিস্টেম চালুর কথা বলেন। কর্ণফুলী নদীকে বাঁচাতে এবং পরিবেশের স্বার্থে তিনি চট্টগ্রামে এই প্রকল্প তৈরির জন্য তখন নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সেই নির্দেশনার পর প্রকল্প তৈরি, মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন, পরিকল্পনা কমিশন ও একনেক ঘুরে তা অনুমোদন পায় ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর। অনুমোদনের পর পরামর্শক নিয়োগ এবং দরপত্র আহবান করতে লেগে যায় আরো দুই বছরের বেশি সময়। দরপত্র জমাদানের শেষ সময় আগামী জানুয়ারি। তাহলে দেখা যাচ্ছে ১৯৬৩ সালে চট্টগ্রাম ওয়াসা প্রতিষ্ঠার ৫৭ বছর পর চট্টগ্রামে শুরু হচ্ছে সুয়্যারেজ প্রকল্পের কাজ। তাহলে এতো বছর এই প্রকল্পটি নেয়া হয়নি কেন?

৩ হাজার ৮০৪ কোটি ৫৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকার সুয়্যারেজ প্রকল্পের পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, ওয়াসা এতোবছর পানি সরবরাহ নিয়েই ভেবেছে। নগরীর পানি সঙ্কট নিরসনে কাজ করেছে। এখন পানির ভাবনা শেষ হয়েছে; তাই নেয়া হয়েছে সুয়্যারেজ প্রকল্প । চলমান প্রকল্পটি ২০২৬ সালের মধ্যে শেষ করা যাবে বলে মনে করছি। নগরীর হালিশহর আনন্দবাজার সাগরপার এলাকায় ১৬৫ একর জায়গায় গড়ে উঠছে এই প্রকল্পটি।

সারাবিশে এপর্যন্ত ৪০ শতাংশ শহরে সুয়্যারেজ সিস্টেম চালু রয়েছে উল্লেখ করে আরিফুল ইসলাম বলেন, সুয়্যারেজ একটি ব্যয়বহুল ও কঠিন প্রক্রিয়া। তাই ধীরে ধীরে এর পরিধি বাড়াতে হয়। ঢাকা শহরে এপর্যন্ত ২০ শতাংশ এলাকা সুয়্যারেজ নেটওয়ার্কের আওতায় এসেছে।

তাহলে চট্টগ্রাম শহরে সুয়্যারেজ চালু হতে কতটা সময় লাগবে জানতে চাইলে আরিফুল ইসলাম বলেন, চলমান প্রকল্পটি ২০২৬ সালের মধ্যে শেষ হবে। এছাড়া নগরীর বাকি ৫টি জোনে ইতিমধ্যে প্রিপ্রকল্প তৈরি হয়েছে এবং সেই অনুযায়ী দাতা সংস্থা খোঁজার কাজ চলছে।

সেপটিক ট্যাংকবিহীন নগর হবে চট্টগ্রাম

এই প্রকল্পের আওতায় নগরীতে কোনো সেপটিক ট্যাংক থাকবে না। প্রতিটি বাসা থেকে পয়োঃবর্জ্য সরাসরি পাইপের মাধ্যমে চলে যাবে সুয়্যারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে। এতে কোনো ভবনে আর সেপটিক ট্যাংক থাকবে না।

জানা যায়, একটি ঘরে তিনটি উৎস থেকে পানি আসে। একটি হলো বৃষ্টির পানি, অপরটি রান্নাঘরের ও গোসলখানার ব্যবহার্য পানি এবং টয়লেটের  লাইনের পানি ও বর্জ্য। সুয়্যারেজ প্রকল্পের আওতায় বৃষ্টির পানি চলে যাবে ড্রেনে, আর বাকি সব পানি পাইপলাইনের মাধ্যমে সুয়্যারেজ লাইনে চলে যাবে। এজন্য পুরো নগরীতে সর্বোচ্চ ২০ ইঞ্চি ও সর্বনিম্ন ৪ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ বসানো হবে। এসব পাইপ দিয়ে বর্জ্য ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে যাবে। সেখানে পরিশোধন হবে।

সব এলাকায় পাইপ বসানো যাবে কি-না জানতে চাইলে ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘যেসব এলাকায় পাইপলাইন বসানো যাবে না, সেসব এলাকা থেকে গাড়িতে করে সø্যাজগুলো ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে নিয়ে যাওয়া হবে।’

প্রথম পর্যায়ে কোন কোন এলাকায় এই সুয়্যারেজ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে জানতে চাইলে প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুল বলেন, ‘নগরীর ছয়টি জোনে ছয়টি সুয়্যারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট হবে এবং পুরো নগরীতে দুটি ফিকেল সø্যাজ শোধনাগার থাকবে। ছয়টি জোনের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে একটি জোন বাস্তবায়ন করা হবে। আর এই জোনে রয়েছে কোতোয়ালী, বাটালিহিল, মাঝিরঘাট, মাদারবাড়ি, আগ্রাবাদ, টাইগারপাস, আমবাগান, নয়াবাজার, চৌমুহনী, উত্তর হালিশহর, হালিশহর আনন্দবাজার এলাকার প্রায় ২০ লাখ মানুষ।’