সুপ্রভাতের প্রতিষ্ঠাকালীন সম্পাদক সৈয়দ আবুল মকসুদ আর নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক <<
সুপ্রভাত বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাকালীন সম্পাদক ও বিশিষ্ট লেখক গবেষক কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ আর নেই। গতকাল রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। (ইন্নালিল্লাহে…. রাজেউন)।
তাঁর এই আকস্মিক মৃত্যুতে সুপ্রভাত পরিবার গভীরভাবে শোকাহত। সুপ্রভাতের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে কয়েক বছর তিনি তাঁর অভিজ্ঞতা ও রাজনৈতিকÑসামাজিক দূরদর্শিতা নিয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন। স্বল্পভাষী, সজ্জন এই মানুষটি চট্টগ্রামের সাহিত্যও সাংস্কৃতিক মহলের শ্রদ্ধা লাভ করেছেন। প্রকাশের পর পত্রিকাটির পাঠকপ্রিয়তার পেছনে ছিলো তাঁর প্রজ্ঞাধর্মী পরামর্শ, শ্রম; পত্রিকাটিকে একটি মানে পৌঁছাতে তাঁর ঐকান্তিক বাসনা আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে।
লেখালেখিই সৈয়দ আবুল মকসুদের সারাজীবনের সাধনা। তাঁর গবেষণাকর্ম আমাদের গবেষণার ক্ষেত্রটিকে সমৃদ্ধ করেছে। তথ্য সংগ্রহে তিনি ছিলেন ক্লান্তিহীন, নিজেও ছিলেন তথ্যের ভাণ্ডার। তাঁর কলামগুলি অসামান্য পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। এগুলিতে তাঁর রসবোধের পরিচয় পাওয়া যায়। আমাদের সমাজ, রাজনীতি, শিক্ষা ও সংস্কৃতির সংকট তিনি গভীরভাবে উপলব্ধি করেছেন। উত্তরণের পথও বাতলিয়ে দিয়েছেন তাঁর কলামে। আদিবাসী, সংখ্যালঘু, দলিত ও প্রান্তিক জনগণের দুঃসময়ে তাদের পাশে থেকেছেন। সহিষ্ণুতা, সংযম ও যুক্তিতর্কের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলি পরিচালিত হোক এটি তাঁর কামনা ছিল। নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, শিক্ষা ও সংস্কৃতির আন্দোলন এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা, মানবাধিকার ও পরিবেশ আন্দোলনে তিনি সতত সক্রিয় থেকেছেন।
তাঁর ছেলে সৈয়দ নাসিফ মকসুদ জানান, মঙ্গলবার বিকালে হঠাৎ শ্বাসকষ্ট শুরু হলে তার বাবাকে স্কয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। চিকিৎসকরা সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বাংলা একাডেমি পুরস্কার পাওয়া আবুল মকসুদ পরিচিত ছিলেন সমাজ, সংস্কৃতি ও রাজনীতির সমসাময়িক ঘটনাবলী নিয়ে সংবাদপত্রে লেখা কলাম এবং গবেষণামূলক প্রবন্ধের কারণে। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১৯৪৬ সালের ২৩ অক্টোবর মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলার এলাচিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন সৈয়দ আবুল মকসুদ। ১৯৬৪ সালে এম আনিসুজ্জামান সম্পাদিত সাপ্তাহিক নবযুগ পত্রিকায় তার কর্মজীবন শুরু হয়। পরে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি সমর্থিত সাপ্তাহিক জনতা’য় কাজ করেন কিছুদিন। ১৯৭১ সালে যোগ দেন বাংলাদেশ বার্তা সংস্থায়। ২০০৮ সালের ২ মার্চ তিনি সেখানকার সম্পাদকীয় বিভাগের চাকরি ছেড়ে দেন।
পত্রিকায় সহজিয়া কড়চা এবং বাঘা তেঁতুল শিরোনামে কলাম লিখে পরিচিত পান সৈয়দ আবুল মকসুদ। তার সাহিত্যচর্চার শুরু হয় ষাটের দশকে, কবিতা, গল্প ও প্রবন্ধ দিয়ে।
১৯৮১ সালে তার কবিতার বই ‘বিকেলবেলা’ প্রকাশিত হয়। ১৯৮৭ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘দারা শিকোহ ও অন্যান্য কবিতা’। মানবাধিকার, পরিবেশ, সমাজ ও প্রেম নিয়েও তিনি লিখেছেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বুদ্ধদেব বসু, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর মত প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও রাজনীতিবিদদের জীবনী ও কর্ম নিয়ে গবেষণা করেছেন আবুল মকসুদ।
আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে নিয়ে তিনি লিখেছেন ‘মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষানীর জীবন, কর্মকাণ্ড, রাজনীতি ও দর্শন (১৯৮৬) ও ভাসানী কাহিনী’। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহকে নিয়ে লিখেছেন ‘সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর জীবন ও সাহিত্য’, ‘স্মৃতিতে ওয়ালীউল্লাহ’।
এছাড়া বিভিন্ন সময়ের সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক বিভিন্ন বিষয়ে তার পর্যবেক্ষণ এসেছে পত্রিকায় প্রকাশিত তাঁর কলামগুলোতে।আবুল মকসুদের লেখা বইয়ের সংখ্যা চল্লিশের বেশি। সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৯৫ সালে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান। সৈয়দ আবুল মকসুদ স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন।