সালমান শাহকে হারানোর দুই যুগ

সুপ্রভাত ডেস্ক :
জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা অবস্থায় ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মৃত্যু হয় চিত্রনায়ক সালমান শাহ; মৃত্যুর দুই যুগ পরও বাংলা চলচ্চিত্রের দর্শদের ‘অন্তরে অন্তরে’ রয়ে গেছেন এ তারকা অভিনেতা। ২৪তম মৃত্যুবার্ষিকীতে এসেও আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছেন এ অভিনেতা।
১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সিলেটে জন্ম নেওয়া শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন পরবর্তীতে খুলনায় এসে ভর্তি হন বয়রা মডেল হাইস্কুলে। পড়া শেষ হওয়ার আগেই চলে আসেন ঢাকায়। ধানমন্ডি আরব মিশন স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করেন। মূলত স্কুলজীবনেই অভিনেতা হওয়ার পোকাটা মাথায় ঢোকে তার। বন্ধুরাও উৎসাহিত করেছিলেন। খবর বিডিনিউজের।
প্রথমবারের মতো ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান আশির দশকের মাঝমাঝিতে। জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’র একটি গানে মডেলিংয়ের মধ্য দিয়েই ছোটপর্দায় অভিষেক হয়েছিল তাঁর। গানে একজন মাদকাসক্ত কিশোরের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি।
সালমানকে নিয়ে তখন পত্রপত্রিকায় বেশ লেখালেখি হয়েছিলো। ‘ইমন নামের একটি বালক’ শিরোনামে বেশকিছু সংবাদের পেপারকাটিং এখনো দেখা যায় ফেইসবুকে।
অল্প সময়েই পরিচালকদের নজরে আসেন। ‘পাথর সময়’ নামে একটি ধারাবাহিকে ডাক পান। এটিই তাঁর প্রথম নাটক। পরবর্তীতে ‘আকাশ ছোঁয়া’ নামে আরো একটি নাটকে দেখা যায় তাকে।
এরপর একে একে ‘দেয়াল’, ‘সব পাখি ঘরে ফিরে’, ‘সৈকতে সারস’, ‘পাথর সময়’ নাটকে অভিনয় করে পরিচিত পান। মাঝে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট ও ধানমন্ডির মালেকা সায়েন্স কলেজ থেকে বি.কম পাস করেন।
তবে সালমানের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় চমকটা আসে নির্মাতা সোহানুর রহমানের হাত ধরে। সেই সময়ের জনপ্রিয় হিন্দি চলচ্চিত্র ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’-এর বাংলায় পুনঃনির্মাণের কপিরাইট কিনে নেন সোহান।
সিনেমার জন্য তৌকির আহমেদকে অফার করা হলে তিনি রিমেক করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নেন। সেকারণে নতুন মুখ খুঁজছিলেন পরিচালক। সেই ছবিতে সালমানকে কাস্ট করেন।
সালমানকে কিভাবে খুঁজে পেলেন?
সোহান বলেছিলেন, ‘চিত্রনায়ক আলমগীরের স্ত্রী খোশনূর আমাকে ইমনের কথা জানিয়েছিলেন। প্রথম দেখাতেই পছন্দ হয়ে যায় ওকে। তবে ওর নামটা ইমন থেকে পরিবর্তন করে সালমান শাহ করি।’
তাঁর সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞাতাও জানালেন সোহান, ‘নতুন হলেও চরিত্রটা ঠিকঠাক মতো রিড করতে পেরেছিলো। আমি যেমনটা চেয়েছি তেমনই অভিনয় করে গেছে। আর সর্বদা ও খুব হাস্যোজ্জ্বল ছিল।’
সোহানের ভাষ্যে, ‘সালমানের মৃত্যুর পর তার শূন্যতা আজও পূরণ হয়নি। তিনি আমাদের সিনেমার জন্য সম্পদ। কখনো তার বিকল্প কাউকে পাবো না আর আমরা।’
ছবিটিতে জুটি বেঁধেছিলেন মৌসুমীর সঙ্গে। মুক্তি পাওয়ার পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। দেশজুড়ে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন তিনি।
এরপর ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘দেনমোহর’, ‘তোমাকে চাই’, ‘বিক্ষোভ’, ‘বিচার হবে’, ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’, ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘আশা ভালবাসা’, ‘জীবন সংসার’, ‘মহামিলন’, ‘স্বপ্নের পৃথিবী’, ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, ‘এই ঘর এই সংসার’, ‘আঞ্জুমান’সহ মোট ২৭টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। অধিকাংশ সিনেমাই দারুণ দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছিল। বেশিরভাগ সিনেমায় মৌসুমী ও শাবনূরের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি।
জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা অবস্থায় ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মৃত্যু হয় তাঁর। রাজধানী ঢাকার ইস্কাটনে তাঁর নিজ বাস ভবনে সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় তাঁর লাশ পাওয়া যায়।
ময়না তদন্ত রিপোর্টে ‘আত্মহত্যা’ বলে উল্লেখ করা হলেও তাঁর মৃত্যু নিয়ে রহস্য এখনও কাটেনি।