সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের অনুমতি

মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী মা ও মেয়ের থানায় অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক :
দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশ’র নিজস্ব প্রতিবেদক ফজলে এলাহী’র বিরুদ্ধে রাঙামাটির সাবেক সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ও তার মেয়ের থানায় জমা দেয়া দুটি অভিযোগের তদন্তের অনমুতি দিয়েছে রাঙামাটি চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।
জানা গেছে, ৩ ডিসেম্বর পাহাড়ের অনলাইন পোর্টাল ‘পাহাড়টোয়েন্টিফোর ডট কম’ এ প্রকাশিত ‘রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের ‘পাইরেটস’ বিড়ম্বনা’ শিরোনামের সংবাদে ‘অতিশয় বিরক্ত ও অপমানিত বোধ’ এবং ‘মানহানি’ ঘটেছে দাবি করে রাঙামাটির কোতোয়ালী থানায় ১২ ডিসেম্বর অভিযোগ দায়ের করেছিলেন রাঙামাটি থেকে সাবেক সংরক্ষিত সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনুর জ্যেষ্ঠ কন্যা নাজনীন আনোয়ার। অভিযোগপত্রেই যিনি নিজেকে ‘পাইরেটস রেস্টুরেন্টের একজন অংশীদার’ ও ডিসি বাংলো পার্ক ব্যবহারের অনুমতি গ্রহিতা মো. হোসেনের ‘কার্যকারক’ হিসেবে দাবি করেছেন।
এর একদিন পর ১৩ ডিসেম্বর নাজনীন আনোয়ারের মাতা, সাবেক সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ও রাঙামাটি জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ফিরোজা বেগম চিনু পৃথক আরেকটি অভিযোগে ‘অতিশয় বিরক্ত ও অপমানিত বোধ’ করা এবং ‘দীর্ঘ রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনের মানহানি’ ঘটেছে দাবি করে ‘আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে থানায় ফৌজদারি অভিযোগ’ দায়ের করেন।
দুটি অভিযোগের ভিত্তিতে কোতোয়ালী থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক আবুল খায়ের ১৪ ডিসেম্বর রাঙামাটির চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ‘অধর্তব্য অপরাধ তদন্তের অনুমতির আবেদন’ করলে ৩০ ডিসেম্বর শুনানি গ্রহণ করে রাঙামাটি সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে তদন্ত করার অনুমতি দেন আদালত। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুই অভিযোগকারিনীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট প্রতীম রায় পাম্পু।
পৃথক দুটি অভিযোগেই পাহাড়টোয়েন্টিফোর ডট কম ও দৈনিক পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পাদক ফজলে এলাহীর পাশাপাশি অভিযুক্ত করা হয়েছে রাঙামাটির আরেকটি অনলাইন পোর্টাল ‘আলোকিত রাঙামাটি’র সম্পাদককেও।
প্রসঙ্গত, ৩ ডিসেম্বর পাহাড়টোয়েন্টিফোর ডট ও ৪ ডিসেম্বর দৈনিক পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রকাশিত ‘রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের পাইরেটস বিড়ম্বনা’ শীর্ষক সংবাদে, ১ ডিসেম্বর রাঙামাটিতে সংবাদ সম্মেলনে দেয়া নাজনীন আনোয়ারের মৌখিক ও লিখিত বক্তব্য, মো. হোসেন এর সাথে জেলা প্রশাসনের চুক্তির কপি, এ সংক্রান্ত বিষয়ে গঠিত জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটির রিপোর্ট, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের প্রতিবেদন, একটি গোয়েন্দা সংস্থার সরকারের উচ্চ পর্যায়ে পাঠানো তদন্ত প্রতিবেদন, জেলা প্রশাসন ও রাঙামাটির বিভিন্ন প্রশাসনকে দেয়া এলাকাবাসীর লিখিত অভিযোগ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর থেকে নেয়া তথ্যই উদ্ধৃত করা হয়েছে।
এর আগে রাঙামাটির ডিসি বাংলো পার্কটি তিন বছর আগে মো. হোসেন নামের এক ব্যক্তিকে ১৩ শর্তে ব্যবহারের অনুমতি দেয় জেলা প্রশাসন। কিন্তু পার্কে ‘পাইরেটস’ নামে রেস্টুরেন্ট চালুর করেন তৎকালিন সংরক্ষিত সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনুর কন্যা নাজনীন আনোয়ার, যিনি নিজেকে মো. হোসেন এর ব্যবসায়িক অংশীদার বলে দাবি করছেন। পার্ক ব্যবহারের দুই বছর মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নতুন করে চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে অপারগতা জানান জেলা প্রশাসক। এনিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মধ্যেই জেলা প্রশাসক এবং তার বাসা ও অফিস কর্মচারীদের বিরুদ্ধে চারটি মামলা দায়ের করেন নাজনীন আনোয়ার। সর্বশেষ স্থানীয় দুইটি পত্রিকার সম্পাদকের বিরুদ্ধেও আইনগত প্রক্রিয়াতেই এগোলেন এই নারী।
পাহাড়টোয়েন্টিফোর ডট কম সম্পাদক ফজলে এলাহী জানিয়েছেন, সংবাদটি ৩ ডিসেম্বর পাহাড়টোয়েন্টিফোর ডট কম এ প্রকাশিত হওয়ার পরদিন দৈনিক পার্বত্য চট্টগ্রামেও প্রকাশিত হয়। অভিযোগকারীরা অনলাইন বা প্রিন্ট কোন মাধ্যমেই প্রকাশিত সংবাদটির কোন প্রতিবাদ পাঠাননি। এমনকি পত্রিকায় সংবাদটি প্রকাশিত হলেও শুধুমাত্র অনলাইনের নাম উল্লেখ করে অভিযোগ দায়ের করার বিষয়টি বিস্ময়কর। এমনকি লিখিত অভিযোগে সাবেক সংরক্ষিত এই সংসদ সদস্য ‘তার কাছে অতীতে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া’র অদ্ভূত তথ্যও সামনে এনেছেন। পুরো বিষয়টি, অতীতে বিভিন্ন সময় প্রকাশিত সংবাদসহ এই প্রতিবেদনটির জেরে তার ‘ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ’, যার মাধ্যমে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের চেষ্টাই প্রতিফলিত হচ্ছে।