সর্ববৃহৎ আশ্রয়ণ প্রকল্পের উদ্বোধন খুরুশকুলের চেহারা বদলে যাবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ গণভবন থেকে ভিডিও কানফারেন্সের মাধ্যমে কক্সবাজারে ‘খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্প’ নামে এই প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার :

জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য কক্সবাজার সদরের খুরুশকুলে নির্মিত বিশ্বের সর্ববৃহৎ আশ্রয়ন প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে খুরুশকুলের চেহারা বদলে যাবে। কক্সবাজারকে উন্নত পর্যটননগরী হিসেবে গড়ে তোলা হবে। বিশ্বের মানুষ যাতে এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন সে লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। দেশের কোনো মানুষ গৃহহীন থাকবে না।

গতকাল সকাল ১১টা ২০ মিনিটে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে আশ্রয়ণকেন্দ্রটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। উদ্বোধন শেষে জলবায়ু উদ্বাস্তুু ৬০০ পরিবারের কাছে ফ্ল্যাটের চাবি হস্তান্তর করেন তিনি। বাকি যারা আছেন তারাও পর্যায়ক্রমে ফ্ল্যাট পাবে।

এতে শুভেচ্ছা বক্তব্যে রাখেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন। সকাল থেকে নির্ধারিত অনুষ্ঠানস্থলে কক্সবাজারের আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত হন।

তাদের মধ্যে ছিলেন জাফর আলম এমপি, আশেক উল্লাহ রফিক এমপি, সাইমুম সরওয়ার কমল এমপি, কানিজ ফাতেমা আহমদ এমপি, প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মাহবুব হোসেন, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার এবিএম আযাদ, সেনাবাহিনীর দশম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি এবং এরিয়া কমান্ডার মো. মাঈন উল্লাহ চৌধুরী, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমদ, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন, কক্সবাজার জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক ও পৌরমেয়র মুজিবুর রহমান, সাবেক এমপি এথিন রাখাইন, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল, খুরুশকুল ইউপি চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন প্রমুখ। এছাড়া প্রশাসন, সামাজিক, রাজনৈতিক ও সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য নির্মিত প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে  ফ্ল্যাটের চাবি হস্তান্তর করেন এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল, পৌরমেয়র মুজিবুর রহমান।

গত ১৪ জুলাই লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত ১৯টি পরিবারকে চাবি বুঝিয়ে দেয়া হয়। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে প্রাথমিকভাবে ৬০০ পরিবারকে আবাসন বুঝিয়ে দেয়া হবে। মোট ২৫৩ একর জমির প্রকল্পে পাঁচতলা বিশিষ্ট ১৩৯টি ভবনে পুনর্বাসন করা হচ্ছে ৪৪০৯টি পরিবার। ২০২৩ সালে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। ৫ তলাবিশিষ্ট ভবনের দ্বিতীয়তলা থেকে পঞ্চমতলা পর্যন্ত প্রত্যেক তলায় ৮টি করে ৪৫৬ বর্গফুট আয়তনের মোট ৩২টি করে ফ্ল্যাট রয়েছে। প্রত্যেকটি ভবনের নিচতলা উম্মুক্ত রাখা হয়েছে। এখানে অসম্পূর্ণ একটিসহ ২০টি অত্যাধুনিক ভবনের নামকরণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই করেছেন।

নামগুলো হচ্ছে সাম্পান, কেওড়া, রজনীগন্ধা, গন্ধরাজ, হাসনাহেনা, কামিনী, গুলমোহর, গোলাপ, সোনালি, নীলাম্বরী, ঝিনুক, কোরাল, মুক্তা, প্রবাল, সোপান, মনখালী, শনখালী, দোলনচাঁপা, ইনানী ও বাঁকখালী।

১৯৯১ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে উদ্বাস্তুু হওয়া লোকজনের জন্য এ প্রকল্প। খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্পে যাদের পুনর্বাসিত করা হচ্ছে তারা সবাই কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কুতুবদিয়া পাড়া ও সমিতি পাড়ার বাসিন্দা। বিমানবন্দর সম্প্রসারণের কারণে ক্ষতিগ্রস্তরা যাতে আশ্রয়হীন হয়ে না পড়ে তার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, যে ঘরবাড়িগুলো করে দিলাম, সেগুলো যতœ করে রাখবেন। এ ফ্ল্যাটগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ করবেন। পরিবেশ বজায় রাখবেন। পর্যাপ্ত গাছ লাগাবেন। এখানে পুকুর কাটা হয়েছে। সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুলিশ ফাঁড়ি করা হয়েছে। এছাড়া এখানে যারা বসবাস করবেন, তারা অধিকাংশই মৎস্যজীবী। তারা যেন মাছ ধরে শুঁটকি করতে পারে এবং এখানে যেন শুঁটকির বিশাল একটি বাজার গড়ে ওঠে সে ব্যবস্থা আমরা করব। এখানে এমন নয়নাভিরাম দৃশ্য করা হবে, যেন পর্যটকেরা ওই এলাকায় আসে এবং শুঁটকি কিনতে পারে।

উল্লেখ্য, দেশে এটিই প্রথম সর্ববৃহৎ এবং সর্বাধিক বাজেটের আশ্রয়ণ প্রকল্প। প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে প্রায় ২৫৩ দশমিক ৩৫০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। এ প্রকল্পে ১৩৯টি ৫তলা ভবন নির্মাণ করা হবে। যার মধ্যে শেখ হাসিনা টাওয়ার নামে একটি ১০তলা বিশিষ্ট সুউচ্চ ভবনও থাকবে।

সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ২০১৭ সালে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের বাকি ভবনগুলোর কাজও এগিয়ে চলছে। এ প্রকল্পে বসবাসকারী পরিবারগুলোর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে স্কুল-মসজিদ, স্বাস্থ্যসেবার জন্য হাসপাতাল ইত্যাদির ব্যবস্থা থাকবে। বিনোদনের ব্যবস্থাও রাখা হবে। পাশাপাশি প্রকল্প এলাকায় আশ্রয় পাওয়া মৎস্যজীবীদের কর্মসংস্থানের জন্য নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে।