সংবাদপত্র শিল্পের দুঃসময়ে সরকারি সহযোগিতা জরুরি

করোনাভাইরাস মহামারিতে দেশের অর্থনীতি, সমাজজীবনে যে বিপর্যয় নেমে এসেছে তার অভিঘাতে দুঃসহ সময় পার করছে দেশের সংবাদপত্র শিল্প। প্রথম কয়েকমাস লকডাউন ও পরিবহন বন্ধ থাকায় সংবাদপত্রের বিপণন ও সরবরাহ ব্যবস্থা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে। মানুষের বাসাবাড়িতে হকারদের প্রবেশাধিকার সীমিত হয়েছে, অনেক গ্রাহক সংবাদপত্র নেয়া বন্ধ করেছেন। অর্থনীতির সীমিত সক্ষমতা, ব্যবসা বাণিজ্যে দীর্ঘদিনের স্থবিরতার ফলে পত্রিকার বিজ্ঞাপন একেবারেই কমে গেছে। এতদসত্ত্বেও রাজধানী ও মফস্বলের বেশ কিছু সংবাদপত্র প্রবল অর্থনৈতিক ক্ষতি স্বীকার করে পত্রিকা সীমিত কলেবরে হলেও চালু রেখেছে। সাংবাদিকরা বিপদ এবং ঝুঁকি নিয়ে খবরের সন্ধানে ছুটেছেন, অনেক সাংবাদিক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, কয়েকজন সাংবাদিকের মৃত্যুও ঘটেছে করোনা সংক্রমণে। করোনা মহামারির অবসান কবে হবে তা কেউ বলতে পারছেন না, দুর্যোগের কাল সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের ঘিরে রেখেছে। সংবাদপত্র শিল্পের সমস্যা, নানা সংকট সাংবাদিকদের দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করে তুলেছে। সংবাদপত্র শিল্পের এই দুঃসময়ে সরকার থেকে সাহায্য সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। সরকার অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে কিন্তু সেবা শিল্প হিসেবে সংবাদপত্র শিল্প এই দুর্দিনে সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ফল হয়েছে, দেশে অনেক সংবাদপত্র বন্ধ হয়ে গেছে, যেগুলি চালু আছে, সেগুলি নানাভাবে ব্যয় সংকোচন করতে বাধ্য হচ্ছে। গ্রাহক কমেছে। বিজ্ঞাপন যৎসামান্য, ছাপা ও অন্যান্য খরচ বেড়েছে, এর মধ্যে নানাভাবে সরকারকে ট্যাক্সও দিতে হচ্ছে। ইতিমধ্যে সংবাদপত্র মালিক সমিতি (নোয়াব) সংবাদপত্রের কর্পোরেট ট্যাক্স কমানো, নিউজপ্রিন্ট আমদানির ওপর ভ্যাটমুক্ত সুবিধা দেওয়া অথবা সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ ভ্যাট নির্ধারণ করা সহ বিভিন্ন দাবি ও সুবিধা পেতে সরকারের প্রতি সম্প্রতি এক বিবৃতিতে আহ্বান জানিয়েছে। সমিতি সংবাদপত্র শিল্পকে রক্ষায় সহজ শর্তে ঋণ ও প্রণোদনা প্রদান, সরকারের কাছে পাওনা বিপুল বিজ্ঞাপন বিল দ্রুত প্রদানের ব্যবস্থা, সংবাদপত্র শিল্প সংশ্লিষ্ট শুল্ক, ভ্যাট ইত্যাদি নিয়ে জটিলতা নিরসনে দ্রুত ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে অনুরোধ জানিয়েছে। বাংলাদেশ সংবাদপত্র সম্পাদক পরিষদ সেবা শিল্প হিসেবে সংবাদপত্র সরকারের কাছ থেকে সাহায্য সযযোগিতা পায়নি বলে সম্প্রতি সংবাদপত্রে দেয়া এক বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে। ডিজিটাল আইনের উদ্দেশ্যমূলক ব্যবহারে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের পৃথক রক্ষাকবচ অনুপস্থিত বলেও সম্পাদক পরিষদ বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে।
সংবাদপত্র সভ্যতা ও সংস্কৃতির বাহন। জনগণকে তথ্য জানানো, জনমত গঠন, বস্তুনিষ্ঠ সংবাদের মাধ্যমে প্রশাসনকে সমাজ ও মানুষের সত্যিকার অবস্থা অবহিতকরণ সংবাদপত্রের দায়িত্ব। বর্তমান করোনার সময়ও এই দায়িত্ব পালন থেকে সাংবাদিকরা বিরত থাকেনি। করোনাকালীন দেশ-বিদেশের খবর, প্রতিষেধক আবিষ্কার, স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে অব্যাহত প্রচার, মানুষের পাশে দাঁড়ানো ব্যক্তি-সংগঠনের ভূমিকা, সরকারের সকল প্রকার তথ্য ও করণীয় সাংবাদিকরা প্রতিনিয়ত তুলে ধরছেন। সংবাদপত্র যদি অস্তিত্বের সংকটে থাকে তখন সাংবাদিকদের দায়িত্ব পালন কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। বর্তমান দুঃসময়ে সাংবাদিকদের সুরক্ষা ও সংবাদপত্র শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের সহযোগিতা ও প্রণোদনা ছাড়া বিকল্প নেই।