শুঁটকি তৈরির মৌসুমে যেন উৎসবের আমেজ

  • কর্ণফুলীর পাড়


সুমন শাহ্, কর্ণফুলী :

কর্ণফুলী নদীর পাড়ে বাঁশের মাচার উপরে চলছে সাগরের সুস্বাদু ফাইশ্যা মাছের শুটকি তৈরির ধুম। কর্ণফুলী উপজেলার ইছানগরের বিভিন্ন কলকারখানার ঠিক মাঝখানেই নদীর দক্ষিণ পাড়ে সারি সারি করে রোদে শুকানো হচ্ছে ফাইস্যাসহ বিভিন্ন জাতের মাছ। নদীর তীর জুড়ে কয়েকটি এলাকায় চলছে শুঁটকি শুকানোর ধুম।গত শনিবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে সরেজমিনে কর্ণফুলী উপজেলাধীন চরপাথরঘাটা, ইছানগর, খোয়াজনগর, জুলধা ডাঙ্গারচর, শিকলবাহা কালারপোল এলাকায় এখন চলছে শুঁটকি উৎসব। এ শুটকি শুকানোর কাজ আগস্ট থেকে শুরু হয়ে চলে ৯ মাস। শুকানো শেষে পাইকাররা নিয়ে যায় দেশের বিভিন্ন বাজারে। নদী তীরবর্তী হওয়ায় এখানে মাছ সংগ্রহ ও শুঁটকি বাজারজাত করা সহজসাধ্য। সারি সারি বাঁশের মাচা তৈরি করে তার ওপর মাছ রেখে শুকানো হচ্ছে। কেউ নৌকা থেকে মাথায় করে শুঁটকি খোলায় নিয়ে যাচ্ছেন মাছ। আর কেউ শুঁটকি তৈরির জন্য মাছ বাছাই করছেন। শুকানোর পর শুঁটকি ঝুড়িতে সাজিয়ে রাখছেন কেউ কেউ। প্রায় শতাধিক ‘মাচাংয়ে’ প্রতিদিন চলছে শুঁটকি শুকানোর কাজ। এসব মাচাংয়ে শতাধিক অধিক নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও হয়েছে এখানে।

নগরীর ফিশারিঘাট মৎস্য আড়ত মাঝিরঘাট কর্ণফুলী কোল্ডস্টোরেজ থেকে শুঁটকি তৈরি করার জন্য হিমায়িত মাছ সংগ্রহ করা হয়। সাগর থেকে মাছ ধরে কর্ণফুলী নদীতে আসা ফিশিং জাহাজ থেকেও সরাসরি সামুদ্রিক মাছ সংগ্রহ করে নদীর তীরবর্তী জাহাজ থেকে সহজে সংগ্রহ করে মাছ দ্রুত সময়ে মাচাংয়ে নিয়ে শুকানো হয়। ফলে শুঁটকির মান ও স্বাদ খুবই ভালো থাকে। এখানে শুঁটকি তৈরিতে খরচ তুলনামূলক অনেকটায় কম। নদী ও সাগর থেকে আহরণ করা মাছ সহজে ও কম পরিবহন খরচে এখানে আনা যায়। নৌপথে সহজে এখানের শুঁটকি নগরীর আছাদগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হয়ে থাকে। সরেজমিনে ঘুরে আরো দেখা যায়, ছুরি, লইট্ট্যা, ফাইস্যা, পোয়া, লাল পোয়া, চাপাকড়ি, কোরাল, চান্দা, কালো চান্দা, টইন, চাপিলা, মইল্যা, কামিলা, পোটকা, কলম্বো, চইক্কা, সলফিশ, মিশালি প্রজাতির মাছ শুকানো হচ্ছে বেশি। মাছ শুকাতে কোনো ধরনের কেমিকেল কিংবা বিষাক্ত কিছু মেশানো হয় না বলে জানিয়েছেন মহেশখালীর থেকে আসা জাগির আহমদ।

কর্ণফুলীর মুখরোচক শুঁটকি দেশের চাহিদা মিটিয়ে এখন বিদেশে রফতানি হচ্ছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য, হংকং, চীন ও তাইওয়ানের মতো দেশেও আমাদের শুঁটকির কদর রয়েছে।মাছ শুকানোর কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা আরো জানায়, ফাইস্যা মাছগুলো রোদে শুকাতে ৩ থেকে ৪ দিন লাগে। লবণ দিয়ে শুকালে ৩ দিন লাগে। লবণ ছাড়া শুকাতে ৪ দিন লাগে। মাসে ৭ থেকে ১০ বার শুঁটকি উঠে একটি মাচা থেকে। ছুরি, লইট্টা কিংবা কামিলা মাছ ঝুলিয়ে এবং মিশালি ও ছোট মাছগুলো মাচাংয়ের চাটাইয়ে ছড়িয়ে শুকানো হয়। বছরের নয় মাসই শুঁটকি তৈরির কাজ চলে। বাকি তিন মাস বর্ষার কারণে বন্ধ থাকে।

সারাদিন কাজ করলে দিনে ৫শ থেকে ৮শ টাকা মজুরি পান পুরুষ শ্রমিকরা। নারী শ্রমিকরা পান ৫শ থেকে ৬শ টাকা। কর্ণফুলী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (অতিরিক্ত) লুৎফুর রহমান বলেন, কর্ণফুলী উপজেলায় এসময়ে নদীর পাড়ে শুঁটকি শুকানোর কাজে ব্যস্ত থাকেন আড়তদার, জেলে ও ব্যবসায়ীরা। এরা যেন নির্বিঘেœ ব্যবসা করতে পারে সে জন্য ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিষমুক্ত শুঁটকি উৎপাদনের ক্ষেত্রে জেলেদের সচেতনতামূলক পরামর্শ দেয়া হয়েছে।