শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে

আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে দিনাজপুরে, ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকালও দিনাজপুরেই দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেই হিসাবে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আরও কমেছে ২৪ ঘণ্টায়। আবহাওয়াবিদদের মতে, সোমবারও তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। এর চেয়ে হয়তো কমবে না। তবে মঙ্গলবার থেকে তাপমাত্রা একটু করে বাড়তে শুরু করবে। আগামী বুধবার থেকে দেশের কিছু স্থানে বৃষ্টিরও সম্ভাবনা আছে। বৃষ্টির পর কুয়াশা অনেকটা কেটে যাবে। শীতও কমতে শুরু করতে পারে।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, ডিসেম্বরের ২০ এবং ২১ তারিখে সারাদেশে যে তাপমাত্রা, তা গত ৩০ বছরের একই সময়ের স্বাভাবিক তাপমাত্রার গড়ের চেয়ে বেশ কম।
দেশের বিভিন্ন স্থানে তাপমাত্রা রাতে গড়ে ৯-১৫ ডিগ্রি এবং দিনের বেলায় ২২-২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এই তাপমাত্রা গত ৩০ বছরের এই সময়ে দেশের স্বাভাবিক তাপমাত্রার গড়ের চেয়ে এক থেকে পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কম। একারণেই দেশের ১০টি জেলায় মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্য প্রবাহ চললেও, সারাদেশেই স্বাভাবিকের চেয়ে কম তাপমাত্রা অনুভূত হচ্ছে।
শীত উচ্চবিত্তদের জন্য অবকাশ যাপনের সুযোগ এনে দিলেও যারা দিনে এনে দিনে খায় তাদের জন্য কষ্ট বয়ে আনে। তাদের কাজ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। যারা ছিন্নমূল, যাদের ঘরবাড়ি নেই, তাদের দুঃখ-কষ্টের যেন শেষ নেই। সন্ধ্যা হলেই শীতের কারণে তারা থাকে আতঙ্কে। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গেই ছিন্নমূল মানুষেরা আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করে। যারা ফুটপাত, পার্কে বা খোলা আকাশের নিচে রাত যাপন করতে বাধ্য হয়
তাদের দুর্দশার শেষ থাকে না।
শীতে কষ্ট বাড়ে বয়স্ক ও শিশুদের। ঠাণ্ডাজনিত অসুখে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বাড়ে এসময়। হাসপাতাল-ক্লিনিকে ভর্তি হওয়া রোগীদের বেশিরভাগই ঠাণ্ডাজনিত অসুখে আক্রান্ত। এসবের পাশাপাশি আছে ডেঙ্গু ও নতুন ভ্যারিয়েন্টের করোনার আশঙ্কা। সবকিছু মিলিয়ে দেশের সিংহভাগ মানুষ ভালো নেই। কাজেই এ সময় শীতার্ত, বিপন্ন, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো কর্তব্য হয়ে উঠেছে। এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। বেসরকারি সংস্থা, বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের তৎপরতাও চোখে পড়েনি।
একটি সময় ছিল যখন মানুষের দুর্যোগে সবার আগে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিত তরুণ-যুবক শ্রেণি। এখন তাদের মধ্যেও একধরনের নিস্পৃহতা লক্ষ করা যাচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও তেমন উদ্যোগ এখন চোখে পড়ে না। এমন অবস্থায় গরিব অসহায় লোকগুলো যাবে কোথায়, বেঁচে থাকবে কী করে?
তারপরও আমরা আশা করব মানুষ জেগে উঠবে। মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়াবে। কারণ মানুষ হিসেবে জন্ম নেওয়ার দায় কিছুটা হলেও মোচন করতে হবে।