শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত : ইতিবাচক, তবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ বাধ্যতামূলক

সরকার ৩০ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে ঈদুল ফিতরের পর মে মাসের ২৪ তারিখ। তার সপ্তাহখানেক আগে শিক্ষার্থীরা হলে উঠবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিকে পঞ্চম শ্রেণি, দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস নিয়মিত হবে। অন্যান্য শ্রেণির ক্লাসগুলি হবে সপ্তাহে ১দিন, পর্যায়ক্রমে তা বাড়ানো হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আগে শিক্ষকÑকর্মচারীদের করোনার ভ্যাকসিন প্রদান সম্পূর্ণ করতে হবে বলে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরও টিকা প্রদানের আওতায় আনা হবে। টিকা প্রাপ্তিতে কোনো সমস্যা হবেনা বলেও জানানো হয়েছে।
করোনা সংক্রমণ কমে আসায় বিশেষজ্ঞরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেছেন। যা হোক, এখন সংশ্লিষ্ট সকলে মিলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। দীর্ঘদিন শিক্ষা জীবনের বাইরে থাকায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা ও অস্থিরতাও দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতি শিক্ষাজীবন থেকে ঝরে পড়ার আশঙ্কাও সৃষ্টি করেছে।
করোনা প্রতিকারে যে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের বিষয় সরকার ও বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অভিভাবক, শিক্ষার্থী সকলকেই তা মানতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশের ঘাটতি রয়েছে ব্যাপক। এক বেঞ্চে ৪/৫ জন বসে, কক্ষ অপরিসর, প্রতিষ্ঠানের টয়লেট, স্যানিটেশন ও বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা একেবারেই অপ্রতুল অথচ সকল সময়ের জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা যে গুরুত্বপূর্ণ তা এই করোনার সময়ে আরো স্পষ্ট হয়েছে।
এ ব্যাপারে ঘাটতি পূরণকল্পে সরকার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিকে খোলার আগেই পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতেই একই রকমের অব্যবস্থা বিদ্যমান। শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে চাহিদা অনুসারে অবকাঠামো উন্নয়ন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়গুলিতে জোর দিতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, দেশে বিদেশে করোনা নিয়ন্ত্রণে আসেনি বরং এটির ধরণও পরিবর্তন হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা কবে এই মহামারি শেষ হবে বলতে পারছেন না। দেখা যাচ্ছে, নতুন নতুন রোগের আবির্ভাব হচ্ছে, কখন কোনটি ব্যাপক আকারে দেখা দেয় বলা মুশকিল। সুতরাং সকল সময়ের জন্যই আমাদের স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
আমরা মনে করি, শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আরো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন প্রয়োজন। শহর এলাকায় এটি আরো জরুরি হয়ে পড়েছে। সেই সাথে অবকাঠামো উন্নয়ন ও সকল প্রকার সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থাদি পর্যাপ্ত থাকা চাই। সন্তানদের স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে অভিভাবকদের সচেতন থাকতে হবে। আমরা আশা করি, সরকার শিক্ষকÑশিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা নেবে। টিকা প্রাপ্তি যাতে অব্যাহত থাকে সে ব্যাপারটিও নিশ্চিত করতে হবে। দেশের কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংকীর্ণ ও অপরিসর জায়গা নিয়ে গড়ে উঠেছে যা এসময় বেশ বিপজ্জনক। এগুলির দিকেও দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। স্বাস্থ্য সুরক্ষাকে শিক্ষাজীবনের অপরিহার্য একটি কর্তব্য হিসেবে বিবেচনায় নিতে হবে। অতীতে এই দিকটি অবহেলিত থেকেছে। করোনার সময় স্বাস্থ্য সুরক্ষার তাগিদটি স্পষ্টভাবে সামনে এসেছে। সুতরাং সেভাবেই আমাদের প্রতিকারমূলক প্রস্তুতি থাকা প্রয়োজন এবং এটি সকল সময়ের জন্য প্রযোজ্য।