শনিবারের সাপ্তাহিক ছুটি বাতিলও ভাবনায়

 সুপ্রভাত ডেস্ক :

করোনাভাইরাস সঙ্কটে টানা দুই মাস বন্ধের কারণে যে কাজগুলো জমছে, তা দ্রুত শেষ করতে শনিবারের সাপ্তাহিক ছুটি বাতিলের বিষয়টি আছে প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ভাবনায়।

তবে এখনও সেই পরিস্থিতি হয়নি উল্লেখ করে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলছেন, প্রয়োজন হলে তা করা যাবে।

গত ২৬ মার্চ থেকে শুরু হওয়া সাধারণ ছুটি কয়েক দফায় বেড়ে ৩০ মে পর্যন্ত গেছে। পরিস্থিতির উন্নতি দেখলে এরপর অফিস-আদালত খুলতে পারে।

লকডাউনের মধ্যে জরুরি সেবার অফিসগুলো খোলা থাকলেও অন্যান্য সরকারি অফিস থেকে যাদের নিয়মিতভাবে বিভিন্ন সেবা নিয়ে কাজ করতে হয় তারা বিপাকে পড়েছেন। বেশিরভাগ সরকারি অফিসগুলোতে অনেক কাজ ঝুলে গেছে। আদালতে বাড়ছে মামলাজট।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সেজন্যই মাথায় এসেছে সাপ্তাহিক ছুটি এক দিনে নামিয়ে আনার বিষয়টিতে।

এই ভাবনায় সমর্থন দিচ্ছেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিষয়টি আমি পজিটিভলি দেখছি। অফিস-আদালতে ছুটি কমানো প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।”

সাপ্তাহিক ছুটি তুলে দিলে তাতে সুবিধা পাওয়া যাবে কি না- সেই জিজ্ঞাসায় তিনি বলেন, “ছুটি কমালে অবশ্যই সুবিধা পাওয়া যাবে। কাজের সময় বাড়লে কাজ বেশি হবে।”

সাবেক আরেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইয়া মনে করেন, এক্ষেত্রে সার্বিক দিক বিবেচনায় রেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সরকার সবকিছু বিবেচনা করেই (শনিবারের সাপ্তাহিক ছুটি নিয়ে) সিদ্ধান্ত নেবে, এটা একটা অপশন হতে পারে।”

লকডাউনের কারণে কোন অফিসে বা কোন ধরনের প্রতিষ্ঠানে কী পরিমাণ কাজ জমেছে, তা হিসাব করার উপর জোর দেন মোশাররাফ হোসাইন।

“আরেকটি বিবেচ্য বিষয় হবে… ইকোনমিকে আবার অ্যাক্টিভেট করার জন্য যেসব পদক্ষেপ নিতে হবে, তখন সব মিনিস্ট্রি বা সব ডিপার্টমেন্টের কাজ সমান হবে না। কোনো কোনো মন্ত্রণালয় বা কোনো কোনো বিভাগের কাজ বেশি হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি যারা বাস্তবায়ন করে তাদের কাজ একটু বেশি হবে।

“বেসরকারি সেক্টরে যাদের প্রোডাকশন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের তা পুষিয়ে নিতে হবে। তাদের তো বেশি কাজ করতেই হবে। সেটা মেজারমেন্ট করে কাপল অব মেজার্স নিতে হবে। এটা (শনিবারের ছুটি বাতিল) একটা বিকল্প হিসেবে হয়ত তখন সরকার বিবেচনা করতে পারে। তবে পেন্ডিং ওয়ার্ক এবং রিকস্ট্রাকশন করতে কী পরিমাণ কাজ করতে হবে তার উপর নির্ভর করবে। আই হোপ গভর্নমেন্ট সব কিছু বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নেবে।”

স্বাধীনতার পর দেশে সাপ্তাহিক ছুটি ছিল শুধু রোববার। এরশাদ আমলে সাপ্তাহিক ছুটি রোববারের পরিবর্তে প্রথমে শুক্র ও শনিবার করা হয়। পরে তা শুধু শুক্রবার করা হয়। ১৯৯৬ সাল ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকার সাপ্তাহিক ছুটি পুনরায় দুদিন করে।

সাপ্তাহিক ছুটি কমানো বা বাড়ানোর বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে উদ্যোগ নিতে হয়। তাতে প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিলে নির্বাহী আদেশে সরকার তা কার্যকর করে।

২০১৩ সালে বিরোধী জোট বিএনপির লাগাতার হরতালের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় শনিবারের সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল করতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব পাঠালেও তাতে সায় মেলেনি।

লকডাউন শেষে যখন অফিস-আদালত খুলবে তখন শনিবারের ছুটি বাতিল করা নিয়ে সরকারের কোনো চিন্তাভাবনা আছে কি না- জানতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সাপ্তাহিক ছুটি কমানোর প্রয়োজন এখনও তারা না দেখলেও প্রয়োজনে তা হতেও পারে।

তিনি বলেন, “এখনও বিষয়টি মাথায় নেই। কারণ জরুরি প্রয়োজনের অফিসগুলো ২৪ ঘণ্টাই চলছে। শুক্র-শনিবারেও আমরা কাজ করছি, কোনো কিছু ডিউ রাখছি না। বাসায় বসেও কাজ হচ্ছে, যে কোনো সময়ই আমরা ফাইল সই করতে পারি।

“সরকারের কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক কাজ করছেন। মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দিনরাত বলে এখন কিছু নেই, তাদের উপর দিয়ে ঝড় বয়ে যাচ্ছে। অনেকে আক্রান্ত হয়েছেন, ফ্রন্ট লাইনে কাজ করতে গেলে এটা হবেই।”

লকডাউনের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলোর কাজ ‘খুব বেশি পেন্ডিং নেই’ জানিয়ে ফরহাদ বলেন, সাপ্তাহিক ছুটি কমানোর মতো পরিস্থিতিতে আমরা এখনও পড়িনি।

“চিন্তাভাবনাটা (শনিবারের ছুটি বাতিল) নতুন, পরিস্থিতি হলে অবশ্যই এ রকম হতে পারে। যেহেতু মাঠ পর্যায়ে প্রচুর কাজ হচ্ছে, আমাদের ওই প্রেসারটা এখনও নেই যে সাপ্তাহিক ছুটি কমাতে হবে। তবে প্রয়োজন হলে এ রকম কিছু অবশ্যই হবে, যেহেতু এগুলোর প্র্যাকটিস আছে। তবে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে সে সিদ্ধান্ত হতে হবে।”