যেভাবে সময় কাটাচ্ছেন আইসোলেশনের রোগীরা

চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালের আইসোলেশন শয্যা- সুপ্রভাত

সরেজমিন: বিআইটিআইডি ও ফিল্ড হাসপাতাল

শুভ্রজিৎ বড়ুয়া :
‘আমরা যদি সময়ের যত্ন নিই, তবে সময় আমাদের জীবনের যত্ন নেবে।’ বিখ্যাত আইরিশ লেখিকা মারিয়া এজগ্রোথের এ উক্তিটির মর্মার্থ যেন হাসপাতালের আইসোলেশনে থাকা রোগীরাই বুঝতে পারছেন। তাদের আশপাশে কোনো স্বজন নেই, নেই তাদের প্রিয়মুখ। একটি বদ্ধ কক্ষে নিজেকে সুস্থ করার চেষ্টায় তারা আজ ব্যস্ত। ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডি হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালে তাদের আইসোলেশনের দিনগুলো কীভাবে কাটছে?
বিআইটিআইডি’র আইসোলেশন ইউনিট সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায়, প্রতিটি কক্ষে নিরাপদ দূরত্বে সাজানো আছে চারটি শয্যা। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি কক্ষে আইসোলেট করে রেখেছে তিনজন রোগী। রোগীদের সেবা দেয়ার জন্য ডাক্তার নার্সসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে রোগীদের পাশে যাচ্ছেন এবং সেবা দিচ্ছেন। এছাড়া রোগীদের পাশে অন্য কারো যাওয়ার কোন নিয়ম না থাকায় তারা পরিবার-পরিজনদের সাথে দেখা করতে পারছেন না। তারা মুঠোফোনে পরিবারের সাথে কথা বলছেন এবং জানাচ্ছেন তাদের শারীরিক অবস্থার কথা।
অন্যদিকে ফিল্ড হাসপাতালের আইসোলেশনে রোগীরা একটি সজ্জিত কক্ষে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করছেন। তাদেরও একই অবস্থা। রোগীদের মধ্যে বন্ধুত্বও হচ্ছে। একে অন্যের সাথে পরিচিত হয়ে, গল্প করে করে এবং নিজেদের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার কথা ভাগাভাগি করছে কাটছে সময়।
বিআইটিআইডি হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডা. ফারজানা আক্তারের কাছে জানতে চাওয়া হয় আইসোলেট রোগীদের দিন কিভাবে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘বিআইটিআইডিতে আমরা একটি কক্ষে তিনজন রেখেছি। তারা যখন শারীরিকভাবে সুস্থ থাকেন একে অপরের সাথে গল্প করছেন। এছাড়া মোবাইলে তাদের ঘরের মানুষদের সাথে কথা বলেন। তাদের কক্ষ থেকে বের হওয়ার নিয়ম না থাকলেও অনেকে বের হয়ে যেতে চান। সেক্ষেত্রে আমরা তাদের বের না হওয়াটা নিশ্চিত করছি।’
তাদের কিভাবে সেবা দেয়া হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা তাদেরকে সার্বক্ষণিকভাবে নজরে রাখছি। তাদের জন্য যা যা প্রয়োজন তা করার চেষ্টা করছি। আপনারা জানেন বিআইটিআইডি হাসপাতালটি এ করোনা আসার কারণে পুরোদমে চালু হয়েছে। তাই এতে সুযোগ সুবিধার পরিমাণ আনুপাতিকভাবে কম। এরপরেও আমরা আমাদের সাধ্যমত তাদের সেবা নিশ্চিত করছি। তাদের দৈনন্দিন ওষুধগুলো আমাদের সিস্টাররা নিয়ম করে তাদের দিচ্ছেন। এছাড়া ওয়ার্ড বয় ও ক্লিনাররা নিয়মিত তাদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহ করছেন। এছাড়া তাদের শারীরিক অবস্থার উন্নতি নিশ্চিত করার জন্য আমরা (চিকিৎসকরা) কাজ করছি।’
একই প্রশ্নে ফিল্ড হাসপাতালের প্রধান উদ্যোক্তা ডা. বিদ্যুৎ বড়–য়া বলেন, ‘আমরা রোগীদের সেবা নিশ্চিত করার জন্য তাদের প্রোপারলি মনিটর করছি। আমাদের ভোলান্টিয়াররা স্বেচ্ছায় তাদের সেবা দিচ্ছেন। রোগীরা নিজেদের মধ্যে গল্পগুজব করছেন। আমাদের হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার পর অনেক রোগী আমাদের এমনও জানিয়েছেন, তারা ঘরের চেয়ে বেশি সেবা আমাদের কাছে পেয়েছেন। অনেক রোগী যাওয়ার সময় কান্না করছেন, তা দেখে আমাদেরও খারাপ লাগছে। কিন্তু আমরা তো চাই আমাদের কাছে কেউ না থাকুক, সকলে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাক।’