যেভাবে লড়ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা

বিআইটিআইডি হাসপাতালে অক্সিজেন সিলিন্ডার হাতে এক করোনাযোদ্ধা- সুপ্রভাত

শুভ্রজিৎ বড়ুয়া :
‘ক্লান্তি আমার ক্ষমা করো প্রভু, পথে যদি পিছিয়ে পড়ি কভু।’ কবিগুরু কবিতার এ বাক্য যেন রীতিমতো বলে চলছেন আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীরা। কেননা তাদের যুদ্ধ করতে হচ্ছে করানো আক্রান্তদের সুস্থ করার জন্য। তাদের সেবা-শুশ্রুষার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ড বয় ও ক্লিনাররা। এ কাজ করতে গিয়ে তাদের প্রথমে নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হয়। এজন্য টানা আট ঘণ্টা পর্যন্ত সুরক্ষার পোশাক (পিপিই) পরে থাকতে হয়। করোনাকে হার মানাতে কাঠফাটা গরমে এ পোশাকে তারা লড়ছেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে।
সুরক্ষা পোশাক (পিপিই) ব্যবহার প্রসঙ্গে জানতে চাইলেন ভাইরোলজি বিশেষজ্ঞ ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, ‘পিপিই অনেক ধরনের হতে পারে। এ ১২০ ন্যানোমিটারের একটি ভাইরাস থেকে আমাদেরকে যে পোশাক সুরক্ষা দেয় তা অবশ্য গরমে খুব অস্বস্তিকর । কিন্তু নিজের সুরক্ষা প্রথমে চিন্তা না করলে অন্যকে আরোগ্য করে তোলা খুব কঠিন ব্যাপার হয়ে যায়। তাই গরম হলেও এই পোশাকটি আমাদেরকে যতক্ষণ ডিউটিতে থাকতে হয় ততক্ষণ করতে হয়। পিপিই একবার পরার পর ডিউটি শেষ না করে খোলার কোনো সুযোগ নেই। কেননা পিপিই’র সংকট শুধুমাত্র আমাদের দেশে নয় সারা বিশ্বে।’
একবার পিপিই পরিধান করার পর খাওয়া-দাওয়া কিংবা ওয়াশরুমে যাওয়ার ব্যাপারে কী করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আসলে একবার পিপিই পরিধান করার পর খাওয়া-দাওয়া কিংবা ওয়াশরুমে যাওয়ার কোন সুযোগ থাকে না। ফলে ডাক্তার নার্স ও হাসপাতালের অন্যান্য সকল স্টাফ, যারা করোনা রোগীদের ট্রিটমেন্ট দিচ্ছেন তারা অল্প খেয়ে বা একদম না খেয়ে ডিউটি করেন। ডিউটি শেষে তারপর তারা খাওয়া-দাওয়া করেন। আসলে এটি সুরক্ষার প্রয়োজনে করতে হচ্ছে। আর পিপিই খুলে ওয়াশরুমে যাওয়ার কোনো সুযোগ না থাকায় অনেকে ডায়পার ব্যবহার করেন।’
এ বিষয়ে সরাসরি বিআইটিআইডি হাসপাতালের আইসোলেশন বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক এইচ এম হামিদুল্লাহ মেহেদী বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে এক শিফটে একজন ডাক্তার দুইজন সিস্টার ও দুইজন ওয়ার্ড বয় একসাথে কাজ করেন। কাজের শুরুতে আমাদের সবাইকে একসাথে কাজ করতে হয়। পরে আমরা রুমে এসে বসি। এরপর কোনো কল আসলে আমাদের আবার যেতে হয়। আর এ পিপিই পড়ে এক ঘণ্টা থাকতেও অনেক কষ্ট হয়। কিন্তু আমাদের কর্তব্যরত সময়ে নিজেদের সুরক্ষার কথা ভেবে পিপিই পরে থাকতে হয়। তবে আমরা বাঙালিরা ছোটবেলা থেকেই এডজাস্ট (মানিয়ে নিতে) করতে শিখে গেছি বলে আমাদের যে কোন কিছুতেই প্রথমদিকে সমস্যা হলেও পরে সেটা আর সমস্যা থাকে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘আসলে এখানে শুধু ডাক্তার নন, নার্স ওয়ার্ড বয় ও অন্যান্য স্টাফদের কথাও বলা প্রয়োজন। কেননা তারা এই গরমের মধ্যে পিপিই পরেই না খেয়ে ডিউটি করে।’
এ নিয়ে কথা হয় বিআইটিআইডি হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স তানজিমা চৌধুরীর সাথে। তিনি বলেন, ‘আসলে নিজেদের সুরক্ষার কথা ভেবে সব ধরনের প্রতিবন্ধকতার সাথে লড়াই করে আমাদের রোগীদের সুস্থ করতে হয়। সে ক্ষেত্রে আমাদের বেশ কিছু অসুবিধা হয়। কিন্তু আমাদের তা মানিয়ে নিতে হয়। কেননা পিপিই নিয়ে সারা বিশ্বের মতো আমাদের দেশেও সংকট আছে। আমরা বিআইটিআইডিতে এন-৯৫ মাস্ক এখনো পাইনি। কেএন-৯৫ মাস্ক ব্যবহার করছি। তাই এর নিচে ও উপরে সার্জিক্যাল মাস্ক ব্যবহার করি। এখন সব জায়গাতেই সবকিছুর সংকট। তাই কোন একটা কিছু খুলে দ্বিতীয়বার ব্যবহার করার কোন সুযোগ আমাদের নেই। ফলে আমরা পানি বা অন্য কোন কিছু খেতে পারি না। এমনকি ওয়াশরুমে যাওয়ারও সুযোগ থাকে না। তবে আমরা ডায়াপার ব্যবহার করার চিন্তা করছি। এটা আমাদের নিজেদের কিনে নিয়ে ব্যবহার করতে হবে। নিজেদের সুরক্ষার পাশাপাশি শারীরিক অসুস্থতার বিষয়টি আমাদের ভাবতে হচ্ছে। এছাড়া কাজ করলেই তো ক্লান্তি আসে। তবু আমরা ক্লান্তিকে পিছনে ফেলে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছি হাসপাতালে আসা আক্রান্ত ব্যক্তিদের সুস্থ করার জন্য।’