মুজিবনগর স্মৃতিসৌধে

আবু আফজাল সালেহ

তোমরা যেতে পারো বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাজধানী মুজিবনগরে। এটি মেহেরপুর জেলায় অবস্থিত। এখানে আমাদের অহংকার মিশে আছে। বাংলাদেশের প্রথম সরকারের শপথ গ্রহণ হয়েছিল ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরের আমের বাগানে। তখন এ জায়গাটির নাম ছিল বৈদ্যনাথতলা। ব্রিটিশ থেকে মুক্তিলাভের পর ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরুর মার্চ পর্যন্ত দীর্ঘ ২৩ বছরে বাঙালি মুক্তিকামীদের বিভিন্ন আন্দোলন ও পাকিস্তান কর্তৃক শোষণ-বঞ্চনার ইতিহাস স্মরণ করে ২৩ টি স্তম্ভ/দেওয়াল দিয়ে স্মৃতিসৌধটি নির্মাণ করা হয়েছে। বিখ্যাত স্থপতি তানভীর কবির এটির নকশা প্রণয়ন করেন; সেটি তোমরা অনেকেই জ্ঞাত আছো। ২৩ টি স্তম্ভের প্রথমটির উচ্চতা ৯ ফুট ৯ ইঞ্চি। যা নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের কথা বলে। এখানকার ১১ টি সিঁড়ি যুদ্ধকালীন ১১ টি সেক্টরের কথা বলা হয়েছে। ৩ ফুট বেদিতে অসংখ্য পাথর রয়েছে; যা যুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহীদের কথা স্মরণ করা হয়েছে। ভাষাশহিদদের স্মরণ করে লাল বেদি আছে সম্মুখভাগে।
এখানে মুজিবনগর কমপ্লেক্স তৈরি করা হয়েছে পরবর্তীতে। কমপ্লেক্সের ভেতর বাংলাদেশের বিশাল এক মানচিত্র রয়েছে। মানচিত্রে এগারোটি সেক্টরের অবস্থান ও সংক্ষিপ্ত ঘটনা ভাস্কর্যের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। মানচিত্রের নিচে বঙ্গোপসাগরের ছবিও আছে। এখানে যুদ্ধের বিভিন্ন ছবি সংরক্ষণ করা হয়েছে। মানচিত্রের চারপাশে উঁচু করে কয়েকধাপে ‘করিডোর’ আছে। আছে অনেক উঁচুতে বেশ কয়েকটি ‘ওয়াচটাওয়ার’। উঁচু থেকে মানচিত্র দেখতে খুব ভালো লাগে। আর মুজিবনগরের বিভিন্ন স্থাপনা, আমবাগান, ফুলবাগান আর চারপাশে দেখতে খুব ভালো লাগবে। আর একটা কথা বলি আমবাগানের শেষে ভারত সীমান্তে যেতে পারবে। জিরোপয়েন্টে কিছু জিনিসপত্র, ভ্রমণস্মারক কিনে নিতে পারো।
কমপ্লেক্সের বাইরে পাকিস্তানি কর্তৃক শোষণ-নির্যাতনের, বঙ্গবন্ধুর সাত মার্চের ইতিহাস সৃষ্টিকারী অমর ভাষণ, পাকি কর্তৃক বাংলাদেশের নারী নির্যাতন-অগ্নিসংযোগ, পাকিবাহিনীর আত্মসমর্পণের,বিভিন্ন বিষয় ভাস্কর্যের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। আছে ফুলের বাগান, অফিস আদালত, সীমিত আকারের থাকার ব্যবস্থা। এখানে আসলে ঘুরতে ঘুরতে বা দেখতে দেখতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের আগের ও পরের ইতিহাস অজান্তেই জানা হয়ে যাবে।
এখানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি নিয়ে একটি জাদুঘর আছে। বিভিন্ন চিত্র ও বিভিন্ন ব্যক্তিত্ব ও শহীদদের ভাস্কর্য আছে এর ভেতর। মানচিত্রের দক্ষিণ দিকেই এ জাদুঘর। এটাও দেখতে পারো।
আর একটা ইতিহাসও অবগত হতে পারবে। মুজিবনগর সংলগ্ন চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুরহুদা উপজেলার নাটুদহের ‘আটকবর’। মুক্তিযুদ্ধে রাজাকারের সহযোগিতায় আট বীরবাঙালিকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল পাকপিচাশেরা। আট শহিদের কবর ও যুদ্ধের স্মৃতি রক্ষার্থে এখানে একটা মিউজিয়ামও আছে। নাটুদহের পাশেই রাজা নফরপালের হাজারদুয়ারি বাড়ি ও তালসারি রোড দেখতে পারো। ১২-১৩ কিমি দূরে কার্পাসডাঙ্গায় খ্রিস্টান চার্চের কাছে জাতীয় কবির স্মৃতিবিজড়িত আটচালা ঘর ইচ্ছে করলে দেখতে পারবে। বলে রাখি মুজিবনগরের একটু দূরে(২০-২২ কিমি) পাশেই আমার বাড়ি। চুয়াডাঙ্গার মদনা গ্রামে। আমার বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। সবকিছু নিয়ে আমি গর্ব করতেই পারি। এখানে আসতে হলে বাসে চুয়াডাঙ্গা বা মেহেরপুরে এসে আবার বাসে/অটোতে মুজিবনগর স্মৃতিসৌধে যেতে হবে।