মার্কিন দূতাবাস বন্ধের নির্দেশ চীনের

সুপ্রভাত ডেস্ক :

চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শহর চেংডুর মার্কিন দূতাবাস বন্ধ করে দেয়ার আদেশ দিয়েছে চীনের কর্তৃপক্ষ। চীন-মার্কিন সাম্প্রতিক দ্বন্দ্বের প্রেক্ষিতে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ হিসেবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে চীন।

চীন জানিয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টনে চীনা দূতাবাস বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্তের ‘অত্যাবশ্যক প্রতিক্রিয়া’ ছিল এটি।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র হিউস্টনের দূতাবাস বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কারণ চীন বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ ‘চুরি’ করছিল। গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে অস্থিরতা বাড়ছেই।

বাণিজ্য এবং করোনাভাইরাস মহামারি নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন বারবার বেইজিংয়ের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে। পাশাপাশি হংকংয়ে চীনের বিতর্কিত নিরাপত্তা আইন জারি করা নিয়েও চীনের সমালোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

চীনের প্রতিক্রিয়া কী?

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে দূতাবাস বন্ধ করার সিদ্ধান্ত ‘যুক্তরাষ্ট্রের নেয়া অযৌক্তিক পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় যথাযথ এবং জরুরি’ পদক্ষেপ।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়: “চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার বর্তমান পরিস্থিতি যেরকম, চীন তা চায় না। আর এর পুরো দায়ভার যুক্তরাষ্ট্রের।”

চেংডুর মার্কিন দূতাবাস ১৯৮৫ সালে স্থাপন করা হয়েছিল এবং বর্তমানে এখানে কর্মকর্তা, স্টাফ মিলিয়ে ২০০’র বেশি মানুষ কাজ করে।

বিবিসি প্রতিনিধিদের মতে, স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল তিব্বতের নিকটবর্তী হওয়ায় এই দূতাবাসটি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

যুক্তরাষ্ট্র কেন চীনা দূতাবাস বন্ধ করলো?

মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে চীনকে জানানো হয় যে এই সপ্তাহ শেষ হওয়ার আগে টেক্সাসের হিউস্টনের চীনা দূতাবাস বন্ধ করে দিতে হবে।

সেদিন সন্ধ্যায়ই অজ্ঞাত কয়েকজন ব্যক্তিকে হিউস্টনের ঐ ভবনের চত্বরে কাগজ পোড়াতে দেখা যায়।

মাইক পম্পেও জানিয়েছেন যে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কারণ চীন ‘শুধু যে আমেরিকার বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ চুরি করছিল তাই নয়, ইউরোপের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদও চুরি করছে যার ফলে লাখ লাখ মানুষ কর্মসংস্থান হারাচ্ছে।’

তিনি বলেন, “আমরা পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে দিতে চাচ্ছি যে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির কাছ থেকে কী ধরণের ব্যবহার আমরা আশা করছি। আর যখন তারা তা করবে না, আমরা পদক্ষেপ নেবো।”

যুক্তরাষ্ট্রে চীনের পাঁচটি দূতাবাসের একটি ছিল টেক্সাসের হিউস্টনের দূতাবাসটি। কেন ঐ একটি দূতাবাসই বন্ধ করার সিদ্ধান্ত দেয়া হলো, তা পরিষ্কার নয়।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মার্কিন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে মন্তব্য করেছেন যে দূতাবাস বন্ধ করে দেয়ার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের দেখানো কারণ ‘অবিশ্বাস্যরকম হাস্যকর।’

চীন আর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অস্থিরতা কেন বাড়ছে?

সম্প্রতি চীন আর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অস্থিরতা বাড়ার পেছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে।

প্রথমত, মার্কিন কর্মকর্তারা সারাবিশ্বে কোভিড-১৯ ছড়িয়ে যাওয়ার দায় চাপিয়েছেন চীনের ওপর। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এমন অভিযোগ তুলেছেন যে ভাইরাসটি চীনের ল্যাবরেটরি থেকে উদ্ভূত হয়েছে, যদিও তার নিজের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোই বলেছেন যে ভাইরাসটি ‘মানবসৃষ্ট বা জিনগতভাবে পরিবর্তিত’ নয়।

চীন আর যুক্তরাষ্ট্র ২০১৮ থেকে এক ধরণের শুল্ক যুদ্ধেও লিপ্ত রয়েছে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চীনের বিরুদ্ধে অনেক আগে থেকেই অন্যায্যভাবে বাণিজ্য পরিচালনা ও বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ চুরির অভিযোগ তুলেছেন। তবে বেইজিংয়ের একটি ধারণা হলো, অর্থনৈতিক পরাশক্তি হিসেবে চীনের উত্থান ঠেকানোর চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র।

আর দুই দেশের মধ্যে সাম্প্রতিক দ্বন্দ্বের কারণ হংকংয়ে চীনের জারি করা নিরাপত্তা আইন। এই আইন বাস্তবায়ন করার পর যুক্তরাষ্ট্র ঐ অঞ্চলের বিশেষ অর্থনৈতিক সুবিধা বাতিল করে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প আরও একটি আইন প্রয়োগ করেছেন যেটি অনুযায়ী হংকংয়ে মানবাধিকার ক্ষুন্ন করা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে যুক্তরাষ্ট্র।

বেইজিং যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপকে চীনের ঘরোয়া বিষয়ে ‘হস্তক্ষেপ’ হিসেবে চিহ্নিত করে এবং এর সমুচিত জবাব দেয়ার প্রতিজ্ঞা করে।