মানুষের ভালোবাসায় আমি মুগ্ধ

চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন ডা. ফারহানা মমতাজ রানু-সুপ্রভাত
কর্ণফুলীর শিকলাবাহায় বিনামূল্যে রোগীদের সেবা দিচ্ছেন ডা. ফারহানা

নিজস্ব প্রতিনিধি, আনোয়ারা :

বাবা ছিলেন ইউপি চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি। ছোটবেলা থেকেই বাবার সঙ্গে স্কুলে যেতেন, তখন থেকে বলতেন আমার মা ডাক্তার হবে। আমার শিকলবাহা এলাকায় হাসপাতাল হবে। সেখানে বিনামূল্যে সবাই সেবা পাবেন। তখন থেকেই ইচ্ছে জাগলো বড় হয়ে ডাক্তার হবো। বাবার স্বপ্নকে পূরণ করব, তাই নিজের জীবনের গতিপথ ঠিক করে নিয়েছিলাম বড় হয়ে আমি ডাক্তার হবে, আর বাবার মত মানুষের সেবা করব।

বুধবার বিকালে এসব কথা বলছিলেন চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের আবুল কালাম চৌধুরী বকুলের একমাত্র কন্যা ডা. ফারহানা মমতাজ রানু।

ডা. ফারহানা মমতাজ রানু মাধ্যমিক দিয়েছেন সেন্ট স্কলাস্টিকা গালস হাই স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে এবং পড়ছেন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চট্টগ্রামে। চেম্বারও করেন সেখানে। তার পিতা কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও শিকলবাহা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন। ৫৮ বয়সে স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন রেখে গত ১৭ জুন বুধবার চট্টগ্রাম নগরীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস’ায় মারা যান তিনি। দীর্ঘদিন ধরে অসুস’তায় ভুগছিলেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরেও নেওয়ার কথাও ছিলো। কিন’ করোনা পরিসি’তিতে তা আর হয়ে উঠেনি। দেশের করোনা পরিস্থিতিতে বকুল বাংলোতে বিনামূল্যে নিয়মিত রোগী দেখছেন তিনি। এখানে প্রতিদিন এ ইউনিয়ন ছাড়াও আসছেন উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের মানুষ সেবা নিতে। যে কোনো মূহূর্তে দিচ্ছেন মুঠোফোনে পরামর্শও।

ডা. ফারহানা মমতাজ রানু জানান, ‘আমার বাবা হচ্ছে সে প্রদীপ, যার আলোতে আমি আলোকিত’ বাবার স্বপ্ন পূরণে আমার ডাক্তার হওয়া। তিনি সবসময় বলতেন আমার এলাকার মানুষ হচ্ছে আমার অক্সিজেন। আর আমারও আশা ভরসা ছিলো উনাকে নিয়ে। আমার কোনো কিছুই তিনি অপূরণ রাখেন নি। যখন যা চেয়েছি সেটায় এনে দিয়েছে। উনার আত্মবিশ্বাস আর ভালোবাসার সবটুকু জুড়ে ছিলাম শুধু আমি। হারিয়ে ফেলার পর বুঝতেছি কি হারিয়ে ফেলছি। বাবার স্বপ্ন যেন কোথাও হারিয়ে না যায় সেজন্য ছুটে এসেছি নিজ গ্রামে। গ্রামের মানুষদের বাবার মত সেবা করতে, তাদের পাশে দাঁড়াতে। তিনি আরো জানান, এখানে আসার পর মানুষের ভালোবাসায় আমি মুগ্ধ হয়ে গেছি। যে ভালোবাসাই আমার বাবা মুগ্ধ হয়েছিলেন, তাইতো বাবা শিকলবাহার মানুষকে এতো ভালোবাসতেন।

তিনি বলেন, ডাক্তারি পেশাটার প্রতি অন্যরকম ভালোবাসা জন্ম নিয়েছিল বাবার কারণে। তিনি সব সময় বলতেন, আমি চাই আমার মেয়ে বড় ডাক্তার হবে, মানুষের সেবা করবে। আমাকে নিয়ে চিনত্মা করো না, আমি ঠিক হয়ে যাব। তবে বাবার শেষ কথাগুলো মনে গেঁথে গিয়েছিল। ডাক্তার হতে হবে, মানুষের সেবা করতে হবে। ‘কখনো যদি হতাশা আঁকড়ে ধরে, তখন বাবার কথা স্মরণ করি, ক্লানিত্ম দূর হয়ে যায়, অদ্ভূত শক্তি এসে জড়ো হয় মনের ভেতর। নিজের কাজটাকে প্রচণ্ড ভালোবাসি, এখানে আসা রোগীদের সঙ্গে নিজের পরিবারের সদস্যদের মতোই ব্যবহার করি। মানুষ গুলোই যেন আমার প্রিয়জন। দেশের এই কঠিন সময়ে মানুষকে সচেতন করতে সরকারের পাশাপাশি এগিয়ে আসতে হবে আপনাকে আমাকে সবাইকে।