মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে

নগরীতে কর্মশালায় ভূমিমন্ত্রী জাবেদ

‘মাদক একটি বড় ধরনের সমস্যা। এ বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। ২০৪১ সালের মধ্যে জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত সোনার বাংলা বিনির্মাণে মাদকের বিরুদ্ধে সর্বত্র সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।’

গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টায় ‘মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার রোধকল্পে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন’ বিষয়ক কর্মশালার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপি এসব কথা বলেন।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সহযোগিতায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় এ কর্মশালার আয়োজন করে।
তিনি আরও বলেন, সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় নতুন প্রজন্মকে অবশ্যই মাদক থেকে দূরে রাখতে হবে। সরকারি-বেসরকারি গণমাধ্যমের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাদকের কুফল ও ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতনতাসহ ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রাখতে হবে।

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণে যেমন বলেছিলেন ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলতে হবে, ঠিক তেমনই মাদকের বিরুদ্ধেও ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলতে হবে। মাদক পুরোপুরি নির্মূল করা না গেলেও সচেতনতার মাধ্যমে মাদকের অপব্যবহার সহনশীল পর্যায়ে নিয়ে আসা সম্ভব হবে।’
তিনি বলেন, কিছু মাদক মেডিক্যালে রোগীদের কাজে ব্যবহার করা হয়। ফেনসিডিল ও গাঁজা থেকে মাদকের সূত্রপাত বলে মনে হয়। যারা ফেনসিডিল খায় তারা এখন ইয়াবাসহ অন্য মাদক সেবন করে। আনোয়ারা-বাঁশখালী রোড ব্যবহার করে একসময় মাদক পাচার হতো। এখনো বিভিন্ন রোড ব্যবহার করছে। প্রতিটি মহল্লায় মহল্লায় এ ধরনের কর্মশালা করতে হবে। ইন্টারনেট এসেছে, তার কারণে মাদক ব্যবহার কম হচ্ছে। ফেসবুক পছন্দ করি না। কাজে কর্মে যারা আছে তারাও ব্যবহার করছেন। যাদের প্রয়োজন নেই, তারাও ব্যবহার করছেন।
মন্ত্রী আরও বলেন, একসময় টেলিভিশনের ওপর নির্ভর করতাম। এখন তা করছি না। এখন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যে জানতে পারছি। আগামী প্রজন্মকে মাদকমুক্ত গড়ার জন্য প্রত্যেকের অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে। আগামী প্রজন্মকে প্রস্তুত করে যেতে না পারলে এই দেশ সোমালিয়া হয়ে যাবে। বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা শেখ হাসিনা তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন। ১৩ বছর এদেশ এগিয়ে গেছে। দক্ষ জনগোষ্ঠীর অভাব হয়েছে। তবে দক্ষদের চাকরি আছে, তাদের চাহিদা আছে।

বাংলাদেশ সঙ্গে পাকিস্তানের তুলনা করা হলে দিন ও রাতের পার্থক্য হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ।

পাকিস্তানের সঙ্গে এত পার্থক্য হবে, কেউ স্বপ্নে ভাবেনি জানিয়ে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেন, বাংলাদেশ যে শক্ত মজবুত জাতি হিসেবে দাঁড়িয়েছে তা বিশ্ব স্বীকৃত দিয়েছে। এটা সরকারের ধারাবাহিকতার জন্য সম্ভব হয়েছে। পাকিস্তানের টাকার মান আমাদের চেয়ে অনেক কম। আমাদের ১ টাকা পাকিস্তনের দেড় টাকার উপরে আমার জানা মতে। পাকিস্তনের চেয়ে সব ক্ষেত্রে আমাদের দৃঢ় অবস্থান রয়েছে। একটা সুন্দর ব্যালেন্স দেশ হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে।
টিসিবির গাড়ির দিকে মানুষ যাচ্ছে, তা দেখেছি জানিয়ে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেন, সরকার বসে নেই। সরকার কাজ করছে। এটাকে কমফোর্ট জোনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। কীভাবে সরবরাহ বাড়ানো যায় তা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। বাস্তবতাও মানতে হবে। যুদ্ধের বিষয়ে আমরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। করোনার সঙ্গে দুই বছর যুদ্ধ করেছে পৃথিবী। সমস্ত সরকারকে এটা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব তেলের বাজারে পড়েছে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. মোকাব্বির হোসেন বলেন, কারাগারে ৬০ শতাংশ মাদক মামলার আসামি। কারাগারে ডিমান্ড সৃষ্টি হচ্ছে, সেখানের অনেকে জড়িয়ে পড়ছে, যার ফলে চাকরিচ্যুত হচ্ছে অনেকে। ৫-৭ বছর পর, অক্ষম জনগোষ্ঠী হিসেবে পাব। যে জ্যামিতিক হারে চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে তা বন্ধ করার বিকল্প নেই।

স্বাগত বক্তব্যে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আব্দুস সবুর মণ্ডল বলেন, যুব সমাজ তথা জাতিকে মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসন থেকে রক্ষার লক্ষ্যে মাদকবিরোধী সর্বাত্মক সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির বিকল্প নেই।

সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিন বলেন, যদি মাদকের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে না পারি তাহলে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২০৩০ ও ২০৪১ এর উন্নত বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে না। সরকারি প্রচেষ্টার পাশাপাশি বেসরকারি খাতে নিরাময় কেন্দ্র পরিচালনা করে চিকিৎসার গুণগত মান বৃদ্ধি করে মাদকাসক্ত রোগীদের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিজিবি’র ডেপুটি রিজিয়ন কমান্ডার কর্নেল রাশেদ আজগর বলেন, অল্প পরিশ্রম আয় হচ্ছে সীমান্ত এলাকায়। সীমন্ত এলাকায় বর্ডার রিং রোড হচ্ছে। বিভিন্ন সীমান্তে যে গ্যাপ আছে, তা কমে যাবে। সম্পূর্ণ নিজেকে সুরক্ষিত রেখেছে আমেরিকা। তারপরও মাদক যাচ্ছে। সন্তানেরা মাদকের পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্ত হচ্ছে। তাদের এ ভয়াবহতা থেকে রক্ষায় পারিবারিকভাবে এগিয়ে আসতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. ইকবাল হোসেন বলেন, দেশের উন্নয়নের স্বার্থে জনগোষ্ঠীকে মাদকের ছোবল থেকে দূরে রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মজিবুর রহমান পাটওয়ারী। কর্মশালায় বিভাগের ১১ জেলার জেলা প্রশাসক, ডিডিএলজি, এডিএম, বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, সিভিল সার্জন, পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা, শিক্ষা কর্মকর্তা, সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, র‌্যাব ও কোস্টগার্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভাগীয় কারা উপমহাপরিদর্শক, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের চট্টগ্রাম বিভাগ ও জেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তা, গণমাধ্যমকর্মী, বিভাগ ও জেলা পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। বিজ্ঞপ্তি