মাতামুহুরীর গর্ভে বিলীন হচ্ছে বদরখালী-বাঘগুজারা সড়ক

দুর্ভোগে লক্ষাধিক মানুষ

এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া :

মাতামুহুরী নদীর ভাঙন তা-বে প্রতিনিয়ত বিলীন হচ্ছে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার উপকুলীয় জনপদের  কোনাখালী বদরখালী সড়ক। বছরজুড়ে ভাঙন তা-বে সড়কটি একেবারে সরু হয়ে পড়েছে। এ অবস্থার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে সবধরনের যানবাহন চলাচল। এতে যাতাযাতের ক্ষেত্রে চরম দুর্ভোগে পড়েছে কোনাখালী ইউনিয়ন ছাড়াও উপকুলীয় জনপদের অন্তত লক্ষাধিক মানুষ। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমের অবিরাম ভারী বর্ষণ ও মাতামুহুরী নদীতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের অস্বাভাবিক প্রভাব এবং সামুদ্রিক জোয়ারের পানির ধাক্কায় এবছর সড়কটির অধিকাংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে পড়েছে। সড়কের ভাঙা স্থান দিয়ে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন চলাচল করছে জনসাধারণ। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দাবি, সড়কে এ ভাঙন চলছে অন্তত পাঁচ বছর ধরে। বর্তমানে সড়কটির বেহাল দশা পরিলক্ষিত হলেও টেকসই প্রকল্প বাস্তবায়নে এলজিইডি কিংবা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কোন নজরদারি নেই বলে অভিযোগ তুলেছেন এলাকার জনপ্রতিনিধিরা। সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা গেছে, চকরিয়া পৌরশহরের চিরিঙ্গা-জনতা মার্কেট হয়ে কোনাখালী ইউনিয়ন পর্যন্ত যান চলাচল উপযোগী থাকলেও কোনাখালীর বাঘগুজারাস্থ মাতামুহুরী নদীর উপর নির্মিত সেতু থেকে বাংলাবাজার হয়ে বদরখালী বাজার পর্যন্ত মাতামুহুরী নদীর তীর ঘেঁষেই সড়কটি চলে গেছে।  প্রায় ১২ কিলোমিটার আয়তনের সড়কটির অন্তত এক কিলোমিটার সড়ক বর্তমানে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলেছেন, কোনাখালী-বাঘগুজারা-বদরখালী সড়কটি মূলত পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মিত বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ। মানুষের যাতায়াত ও যানবাহন চলাচলের সুবিধার্থে এই বাঁধটি সড়ক হিসেবে ব্যবহার জন্য বিগত ২০০৪ এবং ২০০৯ সালে দুই দফায় সড়কটিতে কার্পেটিং ও ঢালাইকাজ করে চলাচল উপযোগী করে দেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সড়কটির মেরামত ও সংস্কার কাজে কেউ এগিয়ে না আসায় এ বেহাল দশা হয়েছে। কোনাখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম বলেন, সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন কম হলেও প্রায় ১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রী এবং কোনাখালী- ঢেমুশিয়া ইউনিয়নের বিপুল জনসাধারণ যাতায়াতের ক্ষেত্রে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কিন্তু সড়কটি মেরামতের ব্যাপারে এলজিইডি ও পানি উন্নয়ন বিভাগ কোন ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে না।  দীর্ঘ ৯বছর ধরে সড়কের বড় কোন সংস্কার কাজ হয়নি। কোনাখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান দিদারুল হক সিকদার বলেন, কোনাখালী বাঘগুজারা-বদরখালী সড়কটি মূলত আমার ইউনিয়নের রক্ষাকবচ। এটি বর্তমানে যানবাহন চলাচলের সড়ক হলেও একসময় ছিল নদীর বেড়িবাঁধ। বিকল্প চলাচলের সুবিধার্থে এটিকে সড়কে রূপান্তর করেন এলজিইডি বিভাগ। কিন্তু প্রতিবছর ভয়াবহ বন্যা এবং সামুদ্রিক অস্বাভাবিক জোয়ারের প্রভাবে সড়কটি নদীতে বিলীন হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এনিয়ে কোন মাথাব্যথা নেই। মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন চলাচল করছে হাজারো জনসাধারণ। ঘটছে নানা দুর্ঘটনাও।সর্বশেষ সপ্টেম্বর মাসে চকরিয়া উপজেলা পরিষদের মাসিক উন্নয়ন সভায় সড়কটি মেরামতে আমি দাবি জানিয়েছি। সভায় উপস্থিত স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ জাফর আলম, উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী এবং ইউএনও সৈয়দ সামসুল তাবরীজ উপস্থিত ছিলেন। ইউএনও সৈয়দ সামসুল তাবরীজ সড়কটি পরির্দশন পরবর্তী প্রদক্ষেপ নেয়ার আশ^াস দিয়েছেন। চকরিয়া উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী কমল কান্তি পাল বলেন, সড়কটি টেকসইভাবে নির্মাণের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। বাঘগুজারা সেতু থেকে বদরখালী পর্যন্ত সড়কটি মেরামতের বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাবনা প্রেরণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, আগে সড়কটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ ছিল। নদীর তীরের ভাঙ্গনকৃত স্থানসমূহ পানি উন্নয়ন বোর্ড মেরামত করে দিলেই এলজিইডি দপ্তর থেকে সড়ক মেরামতের কাজ বিলম্ব হবেনা।