ব্যবসার খরচ কমাতে : লজিস্টিক সাপোর্ট প্রয়োজন

ঢাকা চেম্বার আয়োজিত এক অনলাইন আলোচনায় ব্যবসার পরিচালন খরচ কমাতে লজিস্টিক (বাণিজ্য সহায়ক সুবিধা) নীতিমালা প্রণয়ন, সেবা প্রদানে আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়ের কথা বলেছেন ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ। বন্দর সুবিধা ও কাস্টমস ছাড়পত্রে দীর্ঘসূত্রতা পরিহার, কন্টেইনার ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ও উন্নত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বন্দরের গতিশীলতা বৃদ্ধি, গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপন, উন্নত দেশের মতো লজিস্টিক এবং ওয়্যার হাউস পার্ক স্থাপন, আমদানি করা কাঁচামাল সংরক্ষণে বন্ডেড ওয়্যার হাউস স্থাপন, রেলওয়ে কন্টেইনার সেবা বাড়ানো প্রভৃতি লজিস্টিক সুবিধা প্রদানে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
‘লজিস্টিক : বাংলাদেশের আন্তবাণিজ্যের বর্তমান প্রেক্ষিত ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনায় বিশ্বব্যাংকের বরাত দিয়ে বলা হয়, যানজট নিরসন ও লজিস্টিক ব্যবস্থাপনায় উন্নতি করা গেলে ব্যবসা পরিচালন ব্যয় ৭-৩৫ শতাংশ কমিয়ে আনা সম্ভব। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অবকাঠামো খাতে উন্নতি হলেও দেশে লজিস্টিক সুবিধা খুবই অপর্যাপ্ত, মহামারির সময় এ কারণে রপ্তানি প্রায় ১৭ শতাংশ কমেছে বলে ঢাকা চেম্বার সভাপতি উল্লেখ করেন। চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি চট্টগ্রামে ট্রাক টার্মিনাল না থাকায় প্রতিদিন ৮-১০ হাজার পণ্যবাহী ট্রাকের চলাচলের কারণে ভয়াবহ যানজট সৃষ্টি হয় বলে উল্লেখ করেন। মূল প্রবন্ধে অর্থনীতিবিদ সেলিম রায়হান লজিস্টিক সুবিধা প্রদানে পিছিয়ে থাকার কারণে-রপ্তানি বহুমুখিকরণ প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে উল্লেখ করে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে লজিস্টিক মানদ-ে বাংলাদেশকে উন্নতি করতে হবে বলে অভিমত রাখেন।
ব্যবসায় পরিচালন ব্যয় আমাদের দেশে নানা কারণে বেশি। আমাদের বৈদেশিক বাণিজ্য সামুদ্রিক বন্দর নির্ভর, এর প্রায় ৯০ ভাগ চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সম্পন্ন হয়। বন্দর এবং কাস্টমসের নানা আমলাতান্ত্রিক জট এবং পণ্য খালাসে বিলম্ব, কন্টেইনার জট প্রায়ই ঘটে থাকে। এ জন্য আর্থিক খেসারত দিতে হয় ব্যবসায়ীদের এবং বলা বাহুল্য, এই বাড়তি পরিচালন ব্যয় ভোক্তাদের কাছ থেকে আদায় করে নেওয়া হয়। দেশি বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতা বিদ্যমান, বিশেষ করে যোগাযোগ অবকাঠামো, গ্যাস বিদ্যুৎ প্রাপ্তি ও ব্যবসা শুরুর জন্য অনুমোদন পেতে নানা কাঠখড় পোড়াতে হয়। বেশ কিছু দিন আগে চট্টগ্রামের শিল্পপতিও ব্যবসায়ীরা কারখানা ও আনুষঙ্গিক কাজ সম্পন্ন করেও গ্যাস সংযোগের অভাবে উৎপাদনে যেতে পারেনি। পণ্য বহুমুখিকরণে এসএমই খাতে বিশেষ প্রণোদনা প্রয়োজন।
প্রস্তাবিত ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চলে ব্যবসার যাবতীয় সুযোগ, অবকাঠামোগত সুবিধা নিশ্চিতে পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে। পায়রা সমুদ্র বন্দর প্রকল্প চলমান, মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের কথাও আছে। চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে ২টি কন্টেইনার টার্মিনাল স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে। ১টির কাজ শেষ পর্যায়ে আরো ৩টি পাইপ লাইনে আছে। তবে চট্টগ্রাম মহানগরীর যানজট নিরসনে আশু পদক্ষেপ জরুরি।
লজিস্টিক সেবা ও সুযোগ বাড়াতে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ যে সব সুপারিশ করেছেন, সরকার সে অনুযায়ী সাধ্যমতো ব্যবস্থা নেবে বলে আমরা আশা করি। আমাদের অর্থনৈতিক কর্মকা- বাড়ছে। উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশ আলোচিত হচ্ছে দেশি-বিদেশি মহলে। সুতরাং অর্থনীতি এবং বাণিজ্যের অগ্রগতির স্বার্থেই সহায়ক সুবিধা সম্প্রসারণ অতীব প্রয়োজন।