বিয়ের জৌলুস নেই, ‘নগদ’ আবদার বেড়েছে যৌতুকের

আনোয়ারা-কর্ণফুলী কমিউনিটি সেন্টারগুলোতে ভিন্নচিত্র

সুমন শাহ্, আনোয়ারা  :

করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলার কমিউনিটি সেন্টারগুলোতে নিভে গেছে নীল-লাল বাতি। বন্ধ রয়েছে কমিউনিটি সেন্টারগুলো। বিয়ের পাকাপাকি কথার পরও দিনের পর দিন পিছিয়ে যাচ্ছে বিয়ের তারিখ।

এদিকে করোনার কারণে সীমিত আয়োজন ও পরিসরে যেসব বিয়ে হচ্ছে তাতে বদলে গেছে চিরায়ত ধরণ। বরযাত্রী, খাবারের জৌলুষ, আলোকসজ্বা সবই কমে গেছে। তবে এসব খাতে খরচ কমার অজুহাতে অনেক বিয়েতে বরপক্ষে যৌতুকের চাহিদা বেড়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কেউ কেউ খাবারের আয়োজন সীমিত করে সেই টাকা নগদে পরিশোধের দাবি করছেন বলেও জানা গেছে। তবে মেয়ের সুখ শান্তির কথা ভেবে পরিচয় প্রকাশ করে কেউই এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

চট্টগ্রাম শহরের কাছের উপজেলা আনোয়ারা-কর্ণফুলীতে গড়ে উঠেছে অন্তত অর্ধশত কমিউনিটি সেন্টার। এর মধ্যে অন্তত ২০টি কমিউনিটি সেন্টারে শীতাতপ ব্যবস্থাসহ নানা অভিজাত সুবিধা রয়েছে। যে গুলোতে শুধু এক বেলা অনুষ্ঠান আয়োজনের খরচ ৫০ হাজার টাকার বেশি। কমিউনিটি সেন্টার মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব কমিউনিটি সেন্টারে প্রতিমাসে কমপক্ষে এক হাজার বিয়ে, জন্মদিন ও অন্যান্য অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকত। এর মধ্যে বৃহস্পতি, শুক্র, শনি এই তিনদিনে অনুষ্ঠান হতো বেশি। গত মার্চে করোনা ছড়িয়ে পড়ার পর গত ৪ মাসে কোন অনুষ্ঠান নেই বললেই চলে। এ ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা পড়ছেন বিপাকে পড়েছেন। টানা ৪ মাস ধরে বুকিং না থাকায় প্রায় পথে বসতে চলেছেন অনেক ব্যবসায়ী।

আনোয়ারা উপজেলার জুঁইদন্ডি এলাকার এক অভিভাবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিয়েতে এখন বেশি বরযাত্রী খাওয়াতে হচ্ছে না। তাতে খাওয়া খরচ কমেছে বটে। কিন্তু সেই টাকা নগদ পরিশোধ করতে বলেছে বরপক্ষ।

আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলার বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টারে গুলোতে গিয়ে দেখা যায়, করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে সারা দেশে সব ধরনের ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন রয়েছে বন্ধ। যেসব শ্রমিকদের দম ফেলার ফুসরত থাকার কথা নয়, ওই শ্রমিকেরা চলে গেছেন তাদের বাড়িতে। কেউ বা বসে অলস সময় পার করছেন।

আনোয়ারা উপজেলার চাতরী চৌমুহনী বাজারের বাবুল মাইক সার্ভিসের মালিক মোহাম্মদ বাবুল বলেন,

হাতে গোনা যে কয়টি বিয়ে হচ্ছে তাও ঘরোয়া পরিবেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সাদামাটা আয়োজনে দুপক্ষের কয়েকজনের উপস্থিতিতে ঘরেই রান্নাবান্নার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক কর্ণফুলী উপজেলার ক্রসিং এলাকার এক কমিউনিটি সেন্টারে দায়িত্বে থাকা ম্যানেজার বলেন, বিগত ৪ মাস ধরে  সেন্টারের সব অনুষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। যাদের অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে তারা টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য বার-বার বিরক্ত করছে। কিন্তু টাকা তো আমরা মালিককে দিয়ে দিয়েছি। এখন তো মালিকও শহরে গিয়ে বসে আছে। অনেকে পরিস্থিতি ভালো হলে আবার অনুষ্ঠান করবেন বলে টাকা ফেরত নিচ্ছেন না।

চট্টগ্রাম জজ আদালতের এডভোকেট এম. লোকমান শাহ্ বলেন, বিভিন্ন দেশে থাকা প্রবাসীরা এ সময়টায় দেশে ফিরেছেন। সমাজ বাস্তবতায় প্রবাসে কাজ করা ছেলের ‘পাত্র’ হিসেবে অনেক চাহিদা বেশি। আর এই অবরুদ্ধ অবস্থায় বিয়ে দিয়ে ফেলার চেষ্টা করেন অনেক অভিভাবকেরা।

আনোয়ারা উপজেলার বারশত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম. এ কাইয়ূম শাহ্ বলেন, অনেক বিয়েতে তেমন যাওয়া হয়নি করোনা সংক্রমণের ভয়ে। আবার সম্পর্কটা অটুট রাখতে অনেকে বিয়েতে না গেলেও উপহার সরূপ পাঠিয়ে দিয়েছি। আর করোনাকালে ছেলে মেয়ের বিয়েতে কমে গেছে আত্মীয় স্বজনদের খাওয়া দাওয়ার বিষয়টা। বেশিভাগ মানুষই এসবই খরচ বাবদ নগদ টাকা নিয়ে সেরে পেলছেন বিয়ের আয়োজন। ধরতে গেলে এটাও এক ধরণের যৌতুক। যেটা কারো কাম্য নয়। আমরাও নজর রেখেছি আমার এলাকায় যেন কোনো মেয়ে বাল্য বিবাহের শিকার না হয়।

আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ জোবায়ের আহমেদ বলেন, বাল্য বিবাহ হয়েছে এরকম কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। যদি কেউ প্রমাণ সহকারে দিতে পারে তাহলে দু’পক্ষের অভিভাবক ও কাজীসহ জড়িতদের প্রচলিত আইনের আওয়াতায় আনা হবে এবং যে কাজী বিয়ে পড়িয়েছে তার বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।