বিলুপ্তির পথে কর্ণফুলীর ‘ফাজিলখার’ হাট

শতবছরেও লাগেনি উন্নয়নের ছোঁয়া
জমি প্রভাবশালীদের দখলে

নিজস্ব প্রতিনিধি, কর্ণফুলী
দক্ষিণ চট্টগ্রামের ঐহিত্যবাহী হাট কর্ণফুলীর ‘ফাজিলখার’ হাট। কৃষকরা উৎপাদিত সবজি ও ফলমূল হাটে বিক্রি করার জন্য নিয়ে আসত কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়নের ফাজিলখার হাটে। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্য ক্রয় বিক্রয় করতে আসতো। এমন চিত্র আর দেখা মিলছে না। শত বছরের হাটে লাগেনি কোনোদিন উন্নয়নের ছোঁয়া, কাদা পানি ও ময়লা আবর্জনায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে এ হাটটি। যেন দেখার কেউ নেই।
ঐতিহ্যবাহী এ হাটের সিংহভাগ সরকারি জমি এলাকার প্রভাবশালীদের দখলে রয়েছে। হাটের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে বেদখল হওয়া জমি উদ্ধার করারও আহ্বান জানান স্থানীয়রা।
বুধবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, নেই পুরনো সেই রূপ। ক্রমেই ছোট হয়ে গেছে হাট বসার জায়গা। বিভিন্ন ছোট ছোট আগাছায় ভরে গেছে চারপাশ। মাটির তৈরি দোকানগুলোর টিনের চালে জং ধরে ভেঙে পড়ছে। নেই কোনো ক্রেতাদের হাটার ব্যবস্থাও। কাদা পানিতে সয়লাব হয়েছে পুরো হাটের জায়গা জুড়ে। কোমলমতি ছেলেরা করছে খেলাধুলাও। সম্প্রতি করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির কারণে এ হাটকে হস্তান্তর করে নেওয়া হয়েছে মহা সড়কের পাশে। সেখানেও রয়েছে কাদা পানি ও ময়লা আবর্জনায় ভরপুর। ক্রেতা বিক্রেতাদের চলাচলের নেই কোনো ব্যবস্থা।
এ হাটের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ জাবেদ বলেন, এখানে হাট বসলে নিরাপদে বাজার করতে পারতো এলাকার মেয়েসহ নানা বয়সের মানুষ। করোনা পরিস্থিতির কারণে হাটটি মহাসড়কের পাশে নিয়ে যাওয়ার কারণে দুর্ঘটনার ভয়ে অনেক মানুষ বাজার করতে যায় না এখানে। অনেক সময় রাস্তা পাড় হতে গিয়ে শিকার হয়েছে দুর্ঘটনারও।
স্থানীয় বাসিন্দা শংকর দাশ বলেন, বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে দেখছি এ হাটে বিভিন্ন উপজেলা থেকে মানুষকে আসতে। প্রতিবছর অনেকজনই ইজারা নেন এ হাটের। কিন্তু সরকার বা ইজারাদারদের কোনোদিন দেখিনি কোনো উন্নয়ন বা সংস্কার করতে।
স্থানীয় বড়উঠান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান খান বলেন, দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার মানুষ অপেক্ষা করত এ হাটের জন্য। উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় হাট ছিল ফাজিলখার হাট। বর্তমান সময়ের মতো হাট-বাজার না থাকায় মানুষ অনেকটা নির্ভরশীল ছিল এ হাটের ওপর। পূর্বপাশ দিয়ে বসত গরুর হাট। হরেক রকমের বাহারি পণ্যসামগ্রী কিনতে মানুষ ভিড় করত এখানে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর পাশাপাশি যাবতীয় জিনিসপত্রসহ সব পাওয়া যেত হাটে। দীর্ঘ ৪০ বছরের মধ্যে কোন উন্নয়ন বা সংস্কার না হওয়ায় তা এখন বিলুপ্তির পথে। হাটের আশপাশের জমিসহ অনেক জমিও দখল করে ফেলেছেন অনেকেই।
কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরী বলেন, এ উপজেলার জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ হাট এটি। হাট সংস্কার ও উন্নয়নের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিনা সুলতানা বলেন, হাটের আশপাশের সরকারি খাস জমি দখল করে যারা আছে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং শিগগিরই উচ্ছেদ অভিযানও পরিচালনা করা হবে।