বিজ্ঞান : ইগ্লো ও ইটের ভাটা

সাধন সরকার :

ইগ্লো :

ছোট্ট বন্ধুরা, চলো প্রথমে জানা যাক ‘ইগ্লো’ সম্পর্কে। ইগ্লো হলো উত্তর মেরু অঞ্চলের বরফের তৈরি এক প্রকার ঘর। ওই অঞ্চলে বসবাস করে এস্কিমো নামের উপজাতিরা (তারাও আমাদের মতো মানুষ)। এস্কিমো উপজাতিরা মূলত এই ঘর তৈরি করে থাকে। উত্তর আমেরিকা ও পূর্ব সাইবেরিয়া অঞ্চলে তাদের বাস। উত্তর মেরুর এই অঞ্চলে শুধু বরফ আর বরফ! প্রায় সারা বছরই বরফে ঢাকা থাকে। প্রচ- ঠান্ডা থেকে বাঁচতে এস্কিমোরা (বরফের ওপর তীব্র শীতের মধ্যে বসবাস করা মানুষ) এই ঘরে কিছুটা তাপ তৈরির চেষ্টা করে। এস্কিমোরা মূলত বরফের ওপর বাস করে। বরফের  নিচে বিশাল সমুদ্র! সেই বরফের সমুদ্রে আছে মাছ, উদ্ভিদ ও অন্যান্য ছোট ছোট প্রাণি। এই বরফ কিছুটা লোনা (লবণাক্ত)। এস্কিমোরা এই বরফের ওপর জমাট বাঁধা তুষারের ব্লক দিয়ে ঘর তৈরি করে। ঘরের ভেতরের বরফ খুঁড়ে খুঁড়ে ঘরের আকৃতি দেওয়া হয়। তীব্র শীতের কবল থেকে বাঁচতে ঘরের মাঝে ছোট্ট পরিসরে আগুন জ¦ালানো হয়। এতে ঘর কিছুটা গরম হয়! এস্কিমোদের প্রধান খাদ্য হলো মাছ। বরফের মধ্য থেকে তারা মাছ শিকার করে। এস্কিমোদের জীবন বড়ই বৈচিত্র্যময়! এস্কিমোরা বরফের ওপর চলাফেরা করতে কুকুরের টানা গাড়ি ব্যবহার করে থাকে। সময়ের সাথে সাথে এস্কিমোদের জীবনও বদলে যাচ্ছে। মজার বিষয় হলো, এখন এস্কিমোদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। কেননা তারা বরফ অঞ্চলে যাযাবর শিকারি জীবন ছেড়ে আমাদের মতো স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসছেন!

 

ইটের ভাটা :

এবার জানা যাক ‘ইটের ভাটা’ সম্পর্কে। বন্ধুরা, আমাদের চারপাশে ইটের তৈরি দালান-কোঠা দেখা যায়। ইটের তৈরি পাকা ঘড়বাড়ি আমাদের চারপাশেই রয়েছে। মাটিকে আয়তঘনক (ইটের মতো) আকারে ছাঁচে ঢেলে ভিজিয়ে কাঁচা ইট তৈরি করা হয়। কাঁচা ইট রোদে শুকানো হয়। তারপর এই কাঁচা ইট পোড়ানো হয়। এই পোড়া ইট দিয়ে তৈরি হয় আমাদের চারপাশের ছোট-বড় দালান-ঘর। এই ইট যেখানে পোড়ানো হয় সেটাই ইটের ভাটা। অর্থাৎ ইট তৈরির ক্ষেত্রকে বলা হয় ইটের ভাটা। ইটের ভাটার চারপাশে কাঁচা বা পাকা ইট থাকে আর মাঝে বড় চুল্লির মতো চিমনি থাকে। এই চুল্লির নিচে বানানো ঘরের মধ্যে ইট পোড়ানো হয়। ইটের ভাটায় ইট পোড়ানো হয় মূলত কয়লা দিয়ে (যদিও নিয়ম লঙ্ঘন করে কাঠ দিয়েও ইট পোড়ানো হয়)। ইটের ভাটায় প্রচুর জ¦ালানি (আগুন দিয়ে ইট পোড়ানোর জন্য) প্রয়োজন হয়। তবে বন্ধুরা, নিয়ম লঙ্ঘন করে ইটের ভাটায় কাঠ পোড়ানোর ফলে আমাদের বৃক্ষ সম্পদ কমে যাচ্ছে। পরিবেশবান্ধবভাবে (পরিবেশের কোনো ক্ষতি না করে) ইটের ভাটা তৈরি হওয়ার কথা থাকলেও বেশিরভাগ ইটের ভাটা পরিবেশবান্ধব নয়! ফলে ইটভাটা থেকে বায়ু দূষণ হয়ে থাকে। মূলত ইটের ভাটায় গাছ তথা কাঠ পোড়ানোর ফলে এই বায়ুদূষণ বেড়েই চলেছে। ইটের ভাটাতে উঁচু চিমনি ব্যবহার না করার ফলে দূষণ আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে পড়ছে। ঢাকা শহরে বায়ু দূষণের জন্য ঢাকার আশপাশের ইটের ভাটা অনেকাংশে দায়ী।

বন্ধুরা, এখন কিন্তু আমাদের দেশে ‘না পোড়ানো পরিবেশবান্ধব ইটের’ উৎপাদনও হচ্ছে। এই না পোড়ানো ইট হুবহু ইটের মতো। বালু, সিমেন্ট ও অন্যান্য উপাদান মিশিয়ে এই ইট তৈরি করা হয়। পরিবেশবান্ধব এই ইট দিয়ে এখন দালান-কোঠা তৈরি করা হচ্ছে। (চলবে…)