বাবার স্বপ্ন ছিল বঙ্গবন্ধুর নামে বড় কিছু করার

টানেলের নামকরণের প্রস্তাবক শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেল
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের প্রস্তাবক ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এবং তা সমর্থন করেছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। এই নামকরণের নেপথ্য এবং আগামীর চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা নিয়ে নিয়ে সুপ্রভাতের সাথে কথা হয় ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের।

সুপ্রভাত বাংলাদেশ: আপনি বঙ্গবন্ধুর নামে এই টানেলের নামকরণের প্রস্তাব করেছিলেন?

ব্যারিস্টার মহীবুল হাসান চৌধুরী নওফেল : আমার বাবা মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্বপ্ন ছিল  বঙ্গবন্ধুর নামে কিছু করার। তিনি আমাকে প্রায়ই বলতেন চট্টগ্রামে বড় কিছু হলে তা বঙ্গবন্ধুর নামে করার জন্য। চট্টগ্রামে একটি রোডের নাম রয়েছে শেখ মুজিব রোড। কিন্তু টানেল হলো এই উপমহাদেশের প্রথম একটি প্রকল্প। তাই বড় এই প্রকল্পটির আমার বাবার ইচ্ছে অনুযায়ী কেবিনেট সভায় উপস্থাপন করলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে সম্মতি দেন।

সুপ্রভাত : আপনার বাবা তো কর্ণফুলীতে ঝুলন্ত ব্রিজের পক্ষে অনেক আন্দোলন করেছিলেন-

নওফেল : হ্যাঁ, কর্ণফুলী নদীর তীরে গড়ে উঠা চট্টগ্রাম বন্দর হলো দেশের অর্থনীতির প্রাণ। পিলার সেতু নির্মিত হলে পলিজমে কর্ণফুলী নদী নাব্যতা হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে চট্টগ্রাম বন্দরকে। আর সেজন্যই আমার বাবা ঝুলন্ত ব্রিজের কথা উল্লেখ করেছিলেন এবং প্রয়োজনে টানেল নির্মাণের কথা বলেছিলেন। কিন্তু তখনকার সময়ে তা করা হয়নি। পরবর্তীতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসে টানেল প্রকল্প অনুমোদন করেছেন। তিনি টানেলের বোরিং কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও আমার বাবার কথা বলেছেন।

সুপ্রভাত : চট্টগ্রাম শহরের সম্প্রসারণে এই টানেল কী ভূমিকা রাখবে?

নওফেল : চীনের সাংহাই শহরের মতো ওয়ান সিটি টু টাউনের আদলে চট্টগ্রাম বেড়ে উঠবে। নদীর এপ্রান্তে আর শহর সম্প্রসারণের সুযোগ নেই। এই টানেলের মাধ্যমে অপর প্রান্তে এখন শহর গড়ে উঠবে। পৃথিবীর সব শহরেই এভাবে সম্প্রসারণ হয়ে থাকে। চট্টগ্রামও সম্প্রসারিত হবে। নদীর ওপারে যেমন শিল্পায়ন বাড়বে তেমনিভাবে আবাসনও গড়ে উঠবে। আর এতে প্রধান নিয়ামক হবে এই টানেল।

সুপ্রভাত : এই টানেল বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কীভাবে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন?

নওফেল : বর্তমান সরকার চট্টগ্রাম অঞ্চলে অর্থনৈতিক অনেক উদ্যাগ গ্রহণ করছে। মিরসরাই বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের সাথে টেকনাফ পর্যন্ত যোগাযোগের জন্য সাগরপার দিয়ে একটি মেরিন ড্রাইভ নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে। একইসাথে মহেশখালীর মাতারবাড়িতে সমুদ্রবন্দর, টেকনাফের সাবরাংয়ে বেজার পর্যটন প্রকল্প, চট্টগ্রাম বন্দরের বে টার্মিনালসহ পূর্বমুখী নেটওয়ার্কের জন্য এই টানেল হবে প্রধান মাধ্যম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও চট্টগ্রামকে গুরুত্ব দিয়ে ব্লু ইকোনমি এগিয়ে নিতে চান।

সুপ্রভাত : ব্লু ইকোনমি এগিয়ে নিতে চট্টগ্রাম কীভাবে কাজ করবে বলে মনে করছেন?

নওফেল : দেখেন যেকোনো কিছু বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন দক্ষ জনশক্তি। ব্লু ইকোনমি বাস্তবায়ন করতেও জনশক্তির প্রয়োজন। আর এই জনশক্তি তৈরি করতে কর্ণফুলীর তীরে হামিদচরে গড়ে তোলা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সাগরতলের সম্পদ আহরণ, প্রাণিসম্পদ, খনিজ প্রভৃতি বিষয় নিয়ে শিক্ষার্থীরা পড়বে এবং তারা দক্ষ জনসম্পদ হিসেবে বেড়ে উঠবে।

সুপ্রভাত : সরকার উপকূলীয় এলাকার দিকে বেশি জোর দিচ্ছে কেন?

নওফেল : মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি ভিশন হলো কৃষিজমি যাতে নষ্ট না হয়। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষিজমি অক্ষত রাখতে হবে। চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায় ভূমি জেগে উঠার হার যেমন বেশি তেমনিভাবে ভাঙ্গনও কম। তাই মিরসরাইতে ৩০ হাজার একর জায়গায় গড়ে তোলা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর। চট্টগ্রাম, মহেশখালী ও কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকাগুলোতেও প্রকল্প নেয়া হচ্ছে।