বাঁশখালীতে লিচুর বাম্পার ফলন, দামে চাষিরা খুশি

উজ্জ্বল বিশ্বাস, বাঁশখালী

বাঁশখালীর পাকা লিচু এখন হাট-বাজারে বিক্রয় হচ্ছে। গাছের পাকা লিচু রক্ষা করতে এখন লিচু বাগান গুলোতে দিনরাত পাহারা বসানো হয়েছে। নিশিরাতে পশুদের আক্রমণে ব্যাপক হারে লিচু নষ্ট রোধে বিভিন্ন ধরনের ঘণ্টি, বাদ্যযন্ত্র এবং আগুনের ফুলকি সাজানো হয়েছে। যাতে আওয়াজ শুনে নিশাচর প্রাণীরা পালিয়ে যায়।
বাঁশখালীর পূর্বাংশে ৩৩ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে মৌসুমের শুরুতে লিচু উৎসব চলছে । চড়া দামে বিক্রয় হচ্ছে লিচু। প্রতি শত এখন খুচরা বিক্রয় হচ্ছে ৩০০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা। তবে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ব্যবসায়ীরা পাইকারি হিসেবে কিনছেন কিছুটা কম দামে। তবে তা আগাম টাকা দিয়ে ব্যবসায়ীদের সাথে চুক্তিবদ্ধ ছিল প্রায় ৫ মাস আগে থেকেই।
সেই সাথে আত্মীয়-স্বজন এবং বিভিন্ন মহলের ব্যক্তিবর্গকে খুশি করতে কিংবা উপঢৌকন হিসেবে দেয়া হচ্ছে ঝুঁড়ি ভর্তি লিচু। হাট-বাজারগুলোর সর্বত্র পাইকারি-খুচরা লিচু বিক্রয়ের ধুম পড়ে গেছে। থোকা থোকা লিচু গাছগুলোকে মনোলোভা সৌন্দয্যের অধিকারী করেছে এবং এতে মানুষের আকর্ষণ বেড়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকারি ক্রেতারা প্রতিদিন বাঁশখালীর বিভিন্ন স্থান থেকে ট্রাকে ট্রাকে লিচু ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছে । বাঁশখালীর কালীপুরের লিচু দেশের খুব নাম করা হওয়াতে এই লিচু কিনতে কালীপুরেই ক্রেতাদের ভিড় বেশি। তবে লিচু চাষাবাদ শুধু কালীপুরেই সীমাবদ্ধ না হয়ে এখন পুরো বাঁশখালীতেই হচ্ছে। প্রাকৃতিক নিয়মেই এই লিচু উৎসব মাত্র আর ৮ সপ্তাহ চলবে। অর্থাৎ এসময়ের মধ্যে লিচু গাছগুলো লিচু শূন্য হয়ে যাবে। যে গাছে লিচু পাকে সেই গাছে লিচু দুই-এক সপ্তাহের অধিক রাখা যায় না। খুব দ্রুত বিক্রি হয়ে যায়। রসালো ও লোভনীয় এই ফলকে নিয়ে মানুষের উৎসাহের কমতি নেই। আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে গেলে এসময়ে বেশিরভাগ মানুষ থলে ভর্তি লিচু নিয়ে যায়। তাই হাট-বাজারে অধিকাংশ মানুষের হাতে নিত্যদিনই শুধু লিচুর থলে শোভা পাচ্ছে।
বাঁশখালীর লিচু ফলনজাত এলাকা কালীপুর, বৈলছড়ি, পুকুরিয়া, সাধনপুর, জলদি, চাম্বল, পুঁইছড়ি ইউনিয়নে ঘুরে চাষীদের সাথে কথা বলে সরেজমিনে দেখা গেছে, এবার অন্যান্য বছরের চেয়ে ফলন ভালো হয়েছে। অধিকাংশ গাছই লিচুতে পরিপূর্ণ। তবে মৌসুমের শুরুতে একটু বৃষ্টি হওয়ায় লিচু পাকতে একটি দেরি হয়েছে বলে চাষিরা জানান। তবে তারা জানান, গত বছরের তুলনায় নতুন লিচু গাছের সংখ্যা বেড়েছে। লিচু পাকার সময় বৃষ্টি না হওয়াতে পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ায় লিচুর দাম চড়া। ফলে চাষিরা লিচু বিক্রি করে আনন্দ পাচ্ছেন। খুচরা ও পাইকারী লিচু এখন শত প্রতি ৩০০/৩৫০টাকায় বিক্রয় হচ্ছে। বাঁশখালীর পূর্বাংশে পুকুরিয়া থেকে পুঁইছড়ি পর্যন্ত প্রায় ৩৩ কিলোমিটার এলাকার পাহাড়ি ও সমতল অংশে ব্যাপকহারে লিচুর ফলন হলেও কি পরিমাণ জমিতে লিচু ফলন হয় তারও সঠিক তালিকা নিরুপন করা যায়নি।
উপজেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে বাঁশখালীতে প্রায় সাড়ে ৭ শত হেক্টর জমিতে লিচু উৎপাদিত হয়। এবার তা আরো ১০ হেক্টর বৃদ্ধি পেয়েছে। কোন এলাকায় কী পরিমাণ তা সঠিক নিরুপণ নেই। এসব উৎপাদিত লিচুর মধ্যে কালীপুরের দেশীয় জাতের ৯০ ভাগ লিচু রয়েছে। বাকি ১০ ভাগ লিচু চায়না-থ্রি ও চায়না-টু জাতের। এ দুই জাতসহ মঙ্গলবারিয়া নামে আরো একটি জাতের লিচু কলমীর মাধ্যমে চাষ বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। চায়না থ্রি জাতের লিচুর শাস বড়, বিচি ছোট হয়। এ জাতের লিচুর ফলন একটু দেরীতে আসে। দেশীয় জাতের লিচুর বিচি বড়, শাঁস ছোট হয়। তবে এ জাতের লিচু খুব বেশি মিষ্টি হয়। প্রতিটি লিচু গাছ ৪০ থেকে ৪৫বছর পর্যন্ত বাঁচে। ১০ থেকে ১৫ বছর বয়সে লিচু গাছ বেশি ফলন দেয়।
পাইকারি লিচু ক্রেতা ঢাকার লিচু ব্যবসায়ী আবুল কালাম, নবী উদ্দিন, চন্দনাইশের আলাউদ্দিন প্রকাশ আলী সওদাগর এবং রামুর সেলিম উদ্দিন জানান, এবার লিচুর দাম খুব চড়া। আমাদেরকে হাজার প্রতি ২৫০০-৩০০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। গত বছর এসময় ১৬-১৭ শত টাকায় কিনেছি। তবে লিচুতে পোকা আক্রমণ না করায় বেশি দামে লিচু কিনেও আনন্দ লাগছে। তবে তারা কিছু কিছু লিচু হাজার প্রতি ১৬-১৭ শত টাকায়ও কিনছে বলে দাবি করেন। তবে এইগুলো জাতে খুব বেশি ভালো নয় এবং আকারেও ছোট ।
কালীপুরের নাছির উদ্দিন জানান, তার সব কয়টি বাগানে কম বেশি লিচু ধরেছে। একই রকম বক্তব্য দিয়েছেন লিচু চাষী পালেগ্রামের নুরুল আলম, আজি আহম্মদ এবং কালীপুরের মোঃ ইউছুফ। তারা আরো জানান , গত বছর একটু আগে লিচু পাকা শুরু হয়েছিল তাই এই সময়ে তারা ৩/৪ লাখ টাকার লিচু বিক্রয় করে লাভ করেছেন। এ বছর আরো বেশি মুনাফা অর্জন হবে। তবে পাইকারিভাবে লিচু বিক্রয় হচ্ছে স্থানীয় নিয়মে হাজার প্রতি মৌসুমের শুরুতে ২৫০০ টাকা থেকে ৩০০০ টাকা । তা পরে ৮০০ থেকে ১৭০০ টাকায় নামবে। স্থানীয় নিয়মে হিসাব করা হয় ১২ শত লিচুতে ১ হাজার লিচু ।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু ছালেক বলেন, ‘লিচু চাষের জন্য বাঁশখালীর মাটি খুবই উপযুক্ত হওয়ায় লিচুর ফলন হয় বেশি। ফলে চাষিরা লিচু বিক্রয় করে লাভবান হয়ে মহানন্দে আছেন।’