‘বঙ্গবন্ধু আজীবন অসাম্প্রদায়িকতার চর্চা করেছেন’

জেলা শিল্পকলায় একাডেমিতে গ্রুপ আর্ট প্রদর্শনী শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক :
‘বঙ্গবন্ধু মানুষের জন্য রাজনীতি করেছেন। সারাজীবন মানুষের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। রাজনীতিক জীবনে বহু কঠিন সিদ্ধান্ত তাঁকে নিতে হয়েছে। কিন্তু কখনোই তার কোনো সিদ্ধান্ত মানুষের বিপক্ষে ছিল না। বরং গণমানুষের অধিকার আদায়ের জন্য নানা মেয়াদে জীবনে ১৪টি বছর তাঁকে কারাগারে কাটাতে হয়েছে। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে সামরিক রক্ত চক্ষুকে বার বার তিনি চ্যালেঞ্জ করেছেন সাহসের সাথে। মনুষ্যত্বের আহ্বান করে তিনি বলেছিলেন ‘আমরা যেন পশু না হই, আমরা যেন মানুষ হই। যদি মনুষ্যত্ব হারিয়ে ফেলি তাহলে আমি মানুষ কোথায়।’
গতকাল শুক্রবার বিকাল ৪টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধা জানাতে চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী ‘বঙ্গবন্ধু-স্টেটসম্যান অব দ্য এরা’ শীর্ষক গ্রুপ আর্ট প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।
ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টার, ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন, চট্টগ্রামের ভারতীয় সহকারী হাইকমিশন জেলা শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতায় এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।
বক্তারা আরো বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু আজীবন অসাম্প্রদায়িকতার চর্চা করেছেন। মুসলিম লীগ দিয়ে তার রাজনীতি জীবনের শুরু, কোনো সাম্প্রদায়িক ভাবনা থেকে নয়। সমাজে পিছিয়ে পড়া, বঞ্চিত মুসলমানদের অধিকার আদায়ের জন্য কাজ করেছেন। নিম্ন বর্ণের সনাতনীদের অধিকার আদায়ের জন্যও তিনি কাজ করেছেন। ১৯৪৬ এর দাঙ্গায় বিহারের পাটনায় ছুটে গিয়েছেন নির্যাতিত মুসলমানদের উদ্ধার করে নিয়ে আসতে, তেমনি ১৯৪৮ সাল থেকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে নির্যাতিত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সংবিধানে তিনি ধর্মনিরপেক্ষতাকে মূলনীতি হিসেবে সংযোজন করেছেন। ব্যক্তি জীবনে অসাম্প্রদায়িকতা চর্চার পাশাপাশি আশা করেছেন এদেশের মানুষ তাঁর রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের কর্মীরাও অসাম্প্রদায়িক হবেন। ১৯৭৪ সালে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে কর্মীদের উদ্দেশ করে তিনি বলেছিলেন ‘রাজনীতিতে যারা সাম্প্রদায়িকতার সৃষ্টি করে তারা সাম্প্রদায়িক, হীন, নীচ তাদের অন্তর ছোট। যে মানুষকে ভালোবাসে সে কোনোদিন সাম্প্রদায়িক হতে পারে না। আওয়ামী লীগের কর্মীরা তোমরা কখনো সাম্প্রদায়িকতা পছন্দ করোনি, তোমরা জীবনভর এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছ তোমাদের জীবন থাকতে বাংলার মাটিতে কেউ যেন সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন করতে না পারে।’
ভারতের সহকারী হাই কমিশনার অনিন্দ্য ব্যানার্জীর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন, সংসদ সদস্য ওয়াসিকা আয়েশা খান, জেলা কালচারাল অফিসার মোসলেম উদ্দিন আহমেদ।
সভাপতির বক্তব্যে অনিন্দ্য ব্যানার্জী বলেন, ‘ভারত গর্বের সাথে দাবি করে বঙ্গবন্ধু আমাদের ইতিহাসের অন্তর্ভুক্ত এবং আমরা বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী হওয়ার সুযোগ পেয়েছি। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশের মানুষের কাছে যতটা শ্রদ্ধাশীল ঠিক তেমনি ভারতেও ততটা। বঙ্গবন্ধু আধুনিক বাংলাদেশের স্থপতি। তিনি বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রভাবশালী এবং সাহসী নেতা ছিলেন। তিনি সারাজীবন গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারকে জয়যুক্ত করেছিলেন। বাংলাদেশের জন্য তাঁর ত্যাগ বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ মানুষের অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বাংলাদেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য এবং একটি সোনার বাংলা গড়ার লড়াই করেছিলেন। আজ তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ সোনার বাংলার বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে এগিয়ে চলেছে।’
অনুষ্ঠানের শুরুতে মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্বলন করেন অতিথিবৃন্দ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে শুরু হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এরপর অতিথিরা চিত্র প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন।
প্রদর্শনীটি তৈরি করেছেন আর্টকনের কিউরেটর রিপন। এতে ১২ শীর্ষস্থানীয় বাংলাদেশের চিত্রশিল্পীর বিভিন্ন মাধ্যমের শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হচ্ছে।
শিল্পীরা হচ্ছেন আবদুল মান্নান, মো. মুনিরুজ্জামান, সৈয়দা মাহবুবা করিম মিনি, কাদের ভূঁইয়া, সঞ্জিব দাস অপু, কৃতি রঞ্জন বিশ্বাস, প্রশান্ত কর্মকার বুদ্ধ, এসএম মিজানুর রহমান, মো. জাকির হোসেন পুলক, মনজুর রশিদ, সৌরভ চৌধুরী ও মানিক বনিক।
প্রদর্শনী রোববার পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।