বঙ্গবন্ধুর সংগ্রাম ও বিজয় প্রেরণার উৎস

সাইফ চৌধুরী »
বঙ্গবন্ধু বাঙালির অধিকারের প্রশ্নে কখনো আপোস করেননি। ফাঁসির মঞ্চেও তিনি বাংলা ও বাঙালির জয়গান গেয়েছেন। শৈশব-কৈশোর থেকে তিনি এ আদর্শ নিয়েই বড় হয়ে ওঠেন। নিজেই নিজেকে প্রস্তুত করে তোলেন। তাঁর এই চারিত্রিক দৃঢ়তার পেছনে ছিল গভীর অধ্যয়ন, জানা-চেনা শোনা ও দেখার গভীর অন্তর্দৃষ্টি। তিনি হৃদয়ের আবেগকে যথেষ্ঠভাবে ধারণ করতে সমর্থ হন। এর পেছনে ছিল মানুষকে ভালোবাসা ও সাহায্য করার জন্য তার দরদি মন। এই শিক্ষা তিনি অর্জন করেন তৃণমূল পর্যায়ে হতদরিদ্র ও অভাবগ্রস্ত গ্রামের মানুষকে এবং তাঁর পরিবারের মানুষদের দেখে। একজন মহান নেতা হওয়ার পেছনে যে সব গুণাবলী গুলো আমরা তার মধ্যে খুঁজে পাই সেগুলো সংক্ষিপ্তভাবে আলোকপাত করা হলো:-
১। বঙ্গবন্ধুর হৃদয়ে যা কিছু ছাপ রেখেছে বা প্রভাব ফেলেছে সেটা তিনি গভীরভাবে বিশ্লেষণ করেছেন। এই ক্ষমতা অল্প বয়স থেকে তাঁর আয়ত্তে ছিল। তাকে চিন্তাচ্ছন্ন এবং আবেগতাড়িত করত। জাতির পিতা বা বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠার পেছনে গ্রামের মানুষের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। এই ছোট অনুন্নত গ্রাম ও মানুষের মধ্যে তিনি লক্ষাধিক গ্রাম ও কয়েক কোটি মানুষের প্রতিচ্ছবি খুঁজে পেয়েছেন। আর সে জন্যই বাঙালি জাতির ভাগ্যকে জয় করতে গিয়ে তিনি নিজের জীবনের প্রতি তাকিয়ে দেখার সুযোগ পাননি।
২। বাংলার মানুষকে পরাধীনতার শিকল থেকে মুক্ত করার জন্য জীবনের ১২টি বছর জেল-জুলুম, রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র, শাসক গোষ্ঠীর অত্যাচার সব কিছু সহ্য করেছেন কিন্তু বাংলার মানুষের কাছ থেকে কখনো দূরে সরে যাননি। তিনি চেয়েছিলেন বাঙালি উন্নত জীবনের অধিকারী হোক। বিশে^ মাথা উঁচু করে দাঁড়াক।
৩। বঙ্গবন্ধু লেখাপড়ার পাশাপাশি স্কুলের দলের হয়ে ফুটবল খেলতেন। কেননা তার মা বাবার প্রচ- উৎসাহ ছিল এবং তীক্ষè দৃষ্টির পাশাপাশি শাসনও ছিল। তাঁর গৃহশিক্ষক কাজী আবদুল হামিদ ছিলেন একজন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দলনের কর্মী, যিনি আত্মগোপন করতে তাদের বাসায় আশ্রয় নেন। সেই শিক্ষকই শেখ মুজিবের জীবনকে আলোকিত করার প্রথমত প্রদীপটি জ¦ালান। তিনি তাকে ইতিহাসের শাসকদের গল্প শোনাতেন এবং বিপ্লব বিদ্রোহের কাহিনী ও শোনাতেন। বাঙালির কৃতিত্ব, শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতির জ্ঞানও তিনি ধীরে ধীরে গ্রহণ করেন। এর পাশাপাশি তিনি ব্রিটিশ শাসকদের শাসন ও শোষণ, গান্ধীজির আন্দোলন, রাজনৈতিক আন্দোলন, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, সামাজিক বিভিন্ন সমস্যাবলী, বন্যা, দুর্ভিক্ষ, খড়া, খাদ্যাভাব প্রমুখ তিনি খুব কাছ থেকে অনুধাবন ও বিশ্লেষণ করেছেন।
৪। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রতি ছিলো জনগণের গভীর আস্থা। কারণ তিনি জননেতা হিসেবে জনগণের মনের ভাষা উপলব্ধি করতে পারতেন। তাই লড়াই কিংবা সংগ্রামে বাঙালি হাত খুলে সমর্থন দিতে কার্পণ্য করেননি।
৫। বঙ্গবন্ধুর নীতি ও আদর্শের মূল মন্ত্র ছিলো দেশের জনগণের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা। তাই সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলতেন “বাংলার মানুষের প্রতি ভালোবাসাই আমার সবচেয়ে বড় শক্তি আর আমার সবচেয়ে বড় দুবর্লতাও এটা যে, আমি তাদেরকে অনেক বেশি ভালোবাসি”। আর তাই বঙ্গবন্ধুর কোমল হৃদয়ের ভালোবাসা দিয়েই করেছিলেন সাড়ে সাত কোটি জনগণকে ঐক্যবদ্ধ।
৬। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠন ও নতুন সমাজ নির্মাণ দর্শন তাঁর নিজস্ব ইতিহাস বোধ ও বিদ্যমান রাজনৈতিক চিন্তা চেতনা এবং অভিজ্ঞতা প্রসূত। তিনি প্রায়ই তাঁর বক্তৃতায় বলতেন “ দেশকে যে নিজের বলে ভাববে এই দেশ তার”। তাইতো তাঁর ছিলো অসাধারণ দেশপ্রেমের মোহনীয় আকর্ষণ ক্ষমতা।
৭। যারাই এই নেতার সংস্পর্শে এসেছেন তারাই বিমোহিত হয়ে পরিণত হয়েছিলো দেশপ্রেমে ও মুজিব আদর্শের যোদ্ধা হিসেবে। তাইতো বঙ্গবন্ধুকে বলা হতো “পয়েন্ট অফ পলিটিক্স”।
৮। পূর্ব বাংলার আনাচে কানাছে ঘুরে ঘুরে বাঙালির মুক্তির মর্মবাণী বঙ্গবন্ধু পৌঁছে দেন তৃনমূল মানুষের মণিকোঠায়। জনগণের অন্তর্নিহিত অপার শক্তি ও অসীম ক্ষমতার উপর বিশ^াস, জনগণ এবং কেবলমাত্র জনগণই ইতিহাস সৃষ্টি করে এই-ই ছিলো বঙ্গবন্ধুর চিন্তা-দর্শনের মূল ভিত্তি।
৯। ব্যক্তিগত জীবনে যেমন সাদামাটা জীবন যাপনে অভ্যস্ত ছিলেন ঠিক তেমনি রাষ্ট্রনায়ক হওয়ার পরও সাধারণ জীবন যাপনের কোন পরিবর্তন ঘটেনি। শুধু তাই নয় পুরো পরিবারকেও একই বলয়ে অভ্যস্ত করেছিলেন। প্রচ- ব্যক্তিত্ব নিয়ে চলতেন। ওনার মধ্যে এক ধরনের সম্মোহনী শক্তি ছিল। ঘণ্টার পর ঘণ্টা উনি বলে যেতেন আর অন্যরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনতো।
১০। তৃতীয় বিশে^র মুক্তিকামী মানুষের কাছে বঙ্গবন্ধুর সংগ্রাম ও বিজয় হয়ে দাঁড়ালো প্রেরণার উৎস। বঙ্গবন্ধু সারা জীবন সমতা ও বৈষম্যহীনতার কথা বলে গেছেন।
১১। বঙ্গবন্ধুর একটি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ছিল পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে অন্য দেশের রাষ্ট্রনায়ক বা নেতাদের সংগে সম্পর্ক স্থাপন, নিজের নীতি থেকে একচুল না সরে অন্যকে কোন রকম আঘাত না করে নিজের বক্তব্য বলা। এমনকি চরম অর্থনৈতিক সংকটের মুখেও তিনি একচুল নীতি বিসর্জন দেননি। বঙ্গবন্ধুর জীবনদশায়ই খুব কম সময়ের মধ্যে বিশে^র সব মুসলিম দেশের সংগে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে দিয়ে গেছেন। বঙ্গবন্ধুর তৈরি করা সেই পথে হেঁটেই পৃথিবীর সব দেশের সংগে দ্বি-পক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে আজকের বাংলাদেশের এ শক্তিশালী অবস্থান।
১২। দেশ ও মানুষকে তিনি তার হৃদয়ের আধেয় করে একজন আত্মত্যাগী দেশ-প্রেমিক নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে সমর্থন হন। বঙ্গবন্ধুর বই পড়ার অভ্যাস থাকায় তিনি ঘরে বসে একটি লাইব্রেরি গড়ে তোলেন। স্বচ্ছ মনের মানুষ ছিলেন, রাজনৈতিক চিন্তার দিক থেকে যেমন দূর দৃষ্টি সম্পন্ন ছিলেন তেমনি ছিলেন সাহসী, সৎ ও দৃঢ় চারিত্রিক আদর্শের অধিকারী। আন্তর্জাতিক অংগনে বঙ্গবন্ধুর ভাবমূর্তি ছিল উজ্জ্বল। জাতিসংঘ সহ সকল আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্য পদ সহ ১৪০টি দেশের স্বীকৃতি প্রাপ্তি নিঃসন্দেহে একটি বিরাট কূটনৈতিক সাফল্য। তেমনি সৌদি আরবের তদানীন্তন বাদশাহ ফয়সাল বিন আবদুল আজিজ বঙ্গবন্ধুকে “ শ্রেষ্ঠ মানব” হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। টাইম ম্যাগাজিন বঙ্গবন্ধুকে সে সময় “মহান ব্যক্তিত্ব” হিসেবে আখ্যায়িত্ব করেছিলেন।
১৩। নির্যাতিতের পক্ষে ও মানবাধিকারের প্রশ্নে বঙ্গবন্ধুর অনন্য সাধারণ নেতৃত্ব, প্রচেষ্টা ও সাহসিকতা দেখে ১৯৭৩ সালে কিউবার মহান নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর সেই বিখ্যাত উক্তি “ আমি হিমালয় দেখিনি, কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে দেখেছি। তাই হিমালয় দেখার সাধ আর আমার নেই”।
১৪। বঙ্গবন্ধুর দেশ ভাবনার পরিচয় পাওয়া যায় তাঁর নানা সময়ের ভাষণে। দেশপ্রেমের অসাধারণ পরিচয় পাওয়া যায় ১৯৬৪ সালের ১০ এপ্রিল চট্টগ্রামে দেওয়া একটি ভাষণে। ইত্তেফাক পত্রিকায় এই ভাষণের যে অংশ বিশেষ প্রকাশ করা হয়েছে তা এরকম “এই দেশ আমার, এই মাটি আমার, এই নদী আমার। এই দেশের সত্যিকার মুক্তির জন্য, এই মাটির আজাদীর জন্য, এই বাতাসকে নির্মল করার জন্য, এই নদীতে জোয়ার আনার জন্য আওয়ামী লীগ সংগ্রাম করিয়া যাইবে। শেখ মুজিবকে ফাঁসি দেওয়া সম্ভব কিন্তু ফাঁসির রক্তের প্রতি ফোঁটা হইতে লক্ষ লক্ষ মুজিব জন্মগ্রহণ করিয়া সংগ্রাম জোরদার করিবে”।
১৫। বঙ্গবন্ধুর মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত চার রাষ্ট্রনীতি যাতে কোনভাবেই বর্জিত না হয় সে ব্যাপারে ছিলেন কঠোরভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ। কারণ তিনি চেয়েছিলেন নতুন গণতান্ত্রিক পদ্ধতির শোষণ মুক্ত বাংলাদেশ যা সব নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য এবং স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত করা। বাংলাদেশ হবে প্রাণবন্ত সামাজিক সাংস্কৃতিক এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অভিষিক্ত আলোকিত দেশ। বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে সাধারণের মুক্তির লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব পর্যায়ের মানুষকে নিয়েই একটি রাষ্ট্র গঠন করতে চেয়েছিলেন যেখানে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চার নীতি বিরোধী ছাড়া দল মত নির্বিশেষে সবার হবে যে রাষ্ট্র।
১৬। বঙ্গবন্ধু দুস্থ হতদরিদ্র তাঁর ভাষায় “দুখি মানুষ” এর মুক্তির রাজনৈতিক কৌশল কর্মসূচি ও পরিকল্পনায় ছিলেন হাড়ে মজ্জায় নিখাদ এক জাতীয়তাবাদী নেতা। বাংলা ভাষা ও বাঙালিত্ব তাঁর চিন্ত চেতনা, অনুভব অনুভূতির মর্মমূলে ছিল ওতপ্রোতভাবে প্রথিত। ইতিহাস পাঠে নিষ্ঠা, বিশ^ব্যাপী গণতান্ত্রিক বিপ্লব ও দেশে দেশে গণতন্ত্রের ব্যবহারিক রূপ পর্যপেক্ষণ করেই তিনি ধনতান্ত্রিক গণতন্ত্রের ত্রুটি নির্ধারণ করেছিলেন এই ভাষায়, “বিশ^ আজ দুই ভাগে বিভক্ত একদিকে শোষক অন্যদিকে শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে এবং এ উদ্দেশ্যেই তিনি বাংলাদেশকে “শোষিতের গণতন্ত্র” প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হয়েছিলেন।
১৭। বঙ্গবন্ধু যে কী পরিমাণ স্বাধীনচেতা ছিলেন ও দেশের মানুষের সর্যদাকে যে সবার ওপরে স্থান দিতেন তার অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে। ৭৩ সালে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের শীর্ষ সম্মেলনে তাঁকে সমবেত নেতৃবৃন্দ বীরোচিত সংবধর্না দেন। ৭৪ সালে কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে ও জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বঙ্গবন্ধু বিশ^ নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে অনুরূপ অভিনন্দন ও সংবর্ধনা লাভ করেন। জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দানের মাধ্যমে বাংলা ভাষাকে তিনি আন্তর্জাতিক মর্যাদায় ভূষিত করেন। বিশ^ ফোরামে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর পরে এই প্রথম উচ্চারিত হলো বাংলা ভাষা।
১৮। বঙ্গবন্ধু সাড়ে তিন বছরের শাসনকালেই অনেক কিছুর পরিবর্তনের ওপর হাত দিয়েছিলেন। তবে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছিলেন শিক্ষা এবং কৃষি তথা খাদ্য উৎপাদনের ওপর। তিনি শুরুতেই বুঝতে পেরেছিলেন প্রাকৃতিক সম্পদ বিহীন একটি দেশকে দারিদ্য মুক্ত করার পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়নের একমাত্র উপায় হচ্ছে তার বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে জনসম্পদে রূপান্তর করা। শুরুটা করেছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা দিয়ে। দ্রুত তিনি প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করেন, যা ছিল যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
১৯। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে কখনো লোক দেখানো ভালোবাসা ছিল না, তিনি মনেপ্রাণে ভালোবেসেছিলেন এ দেশের দুঃখী মানুষগুলোকে। সে জন্য তাঁর একান্ত সচিব ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দীনকে প্রথম দিনে ব্রিফিংয়ে বলেছিলেন, বাবারে দেখ, আমার কাছে বহু রকমের লোক আসে। তাদের মধ্যে আমার অনেক বন্ধু চাষাভুষা, শ্রমজীবী, হতদরিদ্র মানুষ আসবে। ওদের তুই যদি আমার সাথে দেখা করতে না দিস, তাদের কাজ করতে সাহায্য না করিস, তাহলে তাদের কাজ কোন সময়ই হবে না। গ্রাম বাংলার মানুষ খুবই অসহায়। তিনি প্রমাণ করেছেন যে, সত্যিকার অর্থে মানুষের দুঃখ দূর করতে হলে প্রথমে হৃদয় নিংড়িয়ে ভালোবাসতে হবে।
২০। ৮ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে লন্ডনে পৌঁছেই সংবাদ সম্মেলনে দেয়া বিবৃতিতে বিশ^বাসীর কাছে বঙ্গবন্ধু দুটি আবেদন জানান দেন। প্রথমটি “বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করুন” আর দ্বিতীয়টি হলো “ আমার ক্ষুধার্ত কোটি প্রাণের সাহয্যার্থে এগিয়ে আসুন”।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বিশ^ দরবারে বাংলাদেশের স্বীকৃতির পথ সুগম করে দিল। ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা অর্জনে যেমন তেমনি দেশ গঠনেও তিনি অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত ক্ষতবিক্ষত অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত প্রশাসনবিহীন একটি দেশের দায়িত্ব নেয়া এবং তা পরিচালনার সুকঠিন চ্যালেঞ্জ বঙ্গবন্ধু সাহসিকতার সংগে গ্রহণ ও মোকাবেলা করেন। এক বছরের মধ্যে দেশকে তিনি আধুনিক গণতান্ত্রিক সমাজের উপযোগী একটি সংবিধানিক উপহার দেন। দেশকে স্বাধীন করে জাতির পিতা তাঁর জীবনের প্রথম লক্ষ্য পূরণ করেছেন। কিন্তু তার দ্বিতীয় লক্ষ্য ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন যা তিনি সমাপ্ত করে যেতে পারেননি। বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রী গ্রহণ করে দেখতে পেলেন বাংলার জনপদের যে ক্ষতি ও ধ্বংসযজ্ঞ করা হয়েছে তা দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময়েও কোন দেশের শক্রপক্ষ করেনি। বিশেষ করে অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ওপর এতটা পরিকল্পিত আঘাত আসেনি। এক কথায় নিষ্ঠুর ঔপনিবেশিক শোষণের অবসানে ৩০ লাখ শহীদ এবং মা বোনের আত্মাত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা পেল কিন্তু দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি বলতে কিছুই ছিল না, তা ধবংসের শেষ সীমাতেই এসে পৌঁছে ছিল। অর্থনৈতিক দুরবস্থার মধ্যেও দায়িত্ব নিয়ে রাত দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে দেশকে একটি অর্থনৈতিক ভিত্তির ওপর দাঁড় করতে চেষ্টা করেছিলেন। সেই লক্ষ্য পূরণ হতে চলেছে তাঁরই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। জাতির পিতার সেই স্বপ্নের স্বাধীন বাংলাদেশ আজ অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত সোনার বাংলায় রূপান্তরিত হয়ে তাঁরই স্বপ্নপূরণের পথে এগিয়ে চলেছে।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও সংস্কৃতিক সংগঠক