বখাটের উৎপাতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন কলেজছাত্রী

মিরসরাই

নিজস্ব প্রতিনিধি, মিরসরাই :
মিরসরাইয়ে বখাটের হুমকিতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন এক কলেজছাত্রী। উপজেলার মিরসরাই সদর ইউনিয়নের আবুনগর গ্রামের ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী উপজেলার প্রফেসর কামাল উদ্দিন চৌধুরী কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীতে অধ্যয়নরত। বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি দেওয়ায় গত ১১ জানুয়ারি চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বখাটে ইকবাল হোসেনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছে ওই শিক্ষার্থীর মা। আদালতে মামলা হলেও ইকবাল এখনো গেফতার হয়নি বলে জানা গেছে। ইকবাল হোসেন একই গ্রামের মরহুম নুরুল আলমের ছেলে।
জানা গেছে, স্থানীয় আবুনগর গ্রামে মিঠাছরা ইসলামিয়া ফাযিল মাদরাসার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আবদুর রউফের বাড়িতে দীর্ঘদিন যাবৎ আশ্রিত ছিলো ভূমিহীন নুরুল আলমের পরিবার। গত বছর নুরুল আলমের পরিবার ওই বাড়িতে স্থায়ীভাবে ঘর করার চেষ্টা করলে বাধা দেয় আবদুর রউফ। এসময় গ্রাম্য শালিসি বৈঠকে নুরুল আলমের পরিবারকে অন্যত্র চলে যাওয়ার বিনিময়ে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা দেওয়ার জন্য আবদুর রউফকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী গত ডিসেম্বরে তিন ধাপে নুরুল আলমের পরিবারকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা দেয় আবদুর রউফ। টাকা পাওয়ার পর নুরুল আলমের পরিবার বাড়ি ছেড়ে দিলেও তার ছেলে বখাটে ইকবাল হোসেন (৩২) আবদুর রউফের পরিবারকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে আসছে।
গত ৫ জানুয়ারি আবদুর রউফ এর কলেজ পড়ুয়া দুই মেয়েকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি দিয়ে যায় ইকবাল। সর্বশেষ ৯ জানুয়ারি দুপুরে আবদুর রউফের ঘরে ঢুকে তার মেয়েদের না পেয়ে তার স্ত্রীকে শারীরিক ভাবে লাঞ্ছিত করে ইকবাল। এসময় তার চিৎকার শুনে বাড়ির আশে পাশের লোকজন এগিয়ে আসলে ইকবাল পালিয়ে যায়।
আবদুর রউফ জানান, গ্যাংরিং রোগে আক্রান্ত হওয়ায় ২০০১ সালে অস্ত্রপচারের মাধ্যমে তাঁর দুই পা কেটে ফেলা হয়। এরপর থেকে পঙ্গু হয়ে হুইল চেয়ারে করে ঘরবন্দি জীবনযাপন করছেন তিনি। স্ত্রী আর দুই মেয়েকে নিয়ে কোন ভাবে জীবন পার করছি। জায়গার অভাবে থাকতে না পারায় আমি নুরুল আলমের পরিবারকে আমার বাড়িতে বিনা পয়সায় থাকতে দিই। সেটাই এখন আমার কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। নুরুল আলমের ছেলে ইকবাল হোসেন আমার বাড়ি দখল করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। সে আমার মেয়ে, স্ত্রীকে নিয়মিত হুমকি দিচ্ছে। আমার মেয়ে এবং স্ত্রী ইকবালের নিয়মিত হুমকিতে এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছে। সে তাদেরকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি দিচ্ছে। ইকবাল সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী। সে নিজেকে পুলিশের সোর্স দাবী করে; তার বিরুদ্ধে আমরা কোন আইনগত সহায়তা পাবো না মর্মে বিভিন্ন জায়গায় বলে বেড়াচ্ছে। আমার স্ত্রী বাদি হয়ে চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে তাকে আসামি করে মামলা করায় সে আমাদের ফাঁসানোর বিভিন্ন চক্রান্ত করছে।
এ বিষয়ে ইকবাল হোসেন তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি এই ধরনের কোন হুমকি দেয়নি। বরং তারা সন্ত্রাসী দিয়ে আমার মোটরসাইকেল পুড়ে দিয়েছে।
মিরসরাই সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এমরান উদ্দিন বলেন, ইকবাল হোসেন সাবেক শিক্ষক আবদুর রউফের পরিবারকে বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করছে। আমাকে জানানোর পর আমি থানায় অভিযোগ দেওয়ার জন্য বলেছি। তিনি আরো বলেন, ইকবাল নিজেকে পুলিশের সোর্স দাবি করে নিবির্ঘ্নে মাদক ব্যবসা করে আসছে। সে বখাটে ও সন্ত্রাসী প্রকৃতির ছেলে।
মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমান বলেন, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আবদুর রউফের পরিবারকে হুমকির বিষয়ে থানায় কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।