পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা ভারতের : পেঁয়াজের বাজার অস্থির

গত বছরের সেপ্টেম্বরে ভারতীয় পেঁয়াজের রপ্তানি বন্ধের পুনরাবৃত্তি ঘটলো এবারও। গত সোমবার ভারত বন্যায় ক্ষতির অজুহাত দেখিয়ে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলো। ভারতীয় ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের রপ্তানি মূল্য তিনগুণ বাড়িয়েছে, ফলে ভারতীয় পেঁয়াজের ট্রাক সীমান্তে আটকা পড়েছে। ইতোমধ্যে দেশে পেঁয়াজের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। একদিনেই খুচরা বাজারে দাম বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ, এই মূল্যবৃদ্ধি প্রবণতা অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে বাড়তেই থাকবে। গত বছরও কেজি প্রতি পেঁয়াজের দর উঠেছিলো ২৫০/৩০০ টাকায়। ভারতের এ ধরণের আকস্মিক নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত অনভিপ্রেত। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন বলছে, দেশে ৫ লাখ টন পেঁয়াজের মজুদ রয়েছে, এতদসত্ত্বেও দাম এভাবে লাফিয়ে বাড়ার কারণ বোধগম্য নয়, তাছাড়া বর্তমানে ব্যবসায়ীদের আনা পেঁয়াজ অনেক আগেরই কেনা। মূল্যবৃদ্ধির আশংকায় কিছু ভোক্তা হামলে পড়েছে প্রয়োজনের বাইরে পেঁয়াজ কিনতে, এতেও ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ার সুযোগ পেয়েছে। এ রকম পরিস্থিতি গত বছরও ছিলো। গত বছরের মতো অস্বাভাবিক চড়ামূল্য পেঁয়াজের আর কখনো দেখা যায়নি। সরকারি অভিযান ও কোন ফল দিতে পারেনি।
দেশে বছরে ২৫ লাখ টনের মতো পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে, এই পরিমাণ দেশে মোটামুটি উৎপাদিত হলেও সংরক্ষণের অভাবে ৫/৬ লাখ টন পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। ফলে আমদানি করতে হয় ৬/৭ লাখ টন আর ৯০ শতাংশ আমদানি হয় ভারত থেকে। গত বছর আফগানিস্তান, মিয়ানমার, পাকিস্তান, তুরস্ক, মিশর থেকে আমদানি করে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিলো। ট্যারিফ কমিশন এবারও এসব দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির সুপারিশ করেছে কিন্তু তা দেরিতে করা হয়েছে, সময়মতো হয়নি। ভারতের ওপর অধিকাংশে আমদানি নির্ভরতা আমাদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়েছে। গত বছরের তিক্ত অভিজ্ঞতা সত্ত্বেও আমরা কোন শিক্ষা নিইনি। টিসিবি কর্তৃক আমদানির সুযোগ অবারিত করা বাঞ্ছনীয়। অন্যদিকে দেশীয় পেঁয়াজ সংরক্ষণে পদক্ষেপ নেয়া উচিত।
আমাদের দেশের বাজার প্রায় সময় অস্থির করে তোলা হয় সিন্ডিকেটের কারসাজিতে, এরা বাজারকে কখনই প্রতিযোগিতামূলক করতে দেয় না। এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও বেশ চড়া; চাল, ভোজ্যতেল, সবজি, ডিম, আদাÑএসবের দাম বেড়েছে। করোনার অভিঘাতে মানুষ এমনিতেই বিপর্যস্ত এর সাথে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি গরিব, নি¤œবিত্ত, মধ্যবিত্তদের আরো বিপদে ফেলবে। সীমিত আয়ের মানুষের কষ্ট হবে সীমাহীন। করোনা, বন্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, নিত্যপণ্যের নিয়মিত মূল্যবৃদ্ধি মানুষকে দিশেহারা করে তুলছে, সরকারের উচিত পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে নিয়মিত বাজার মনিটরিং, সময়মতো আমদানি, চাষীদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা, সরবরাহ ঠিক রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। আমরা আশা করি, সরকার দ্রুত অন্যান্য দেশ থেকে আমদানির ব্যবস্থা করে পেঁয়াজের সংকট সামাল দেবে।