পেঁয়াজ আমদানি : চাষিদের স্বার্থরক্ষা সর্বাগ্রে

গত দুই বছরে পেঁয়াজ পরিস্থিতি ভোক্তাদের অসহনীয় করে তুলেছে। প্রধানত আমদানিতে একটি দেশের ওপর অধিক নির্ভরতা আমাদের গত ২ বছর ভুগিয়েছে, এক সময় পেঁয়াজের কেজি ৩০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে যা অভাবনীয় ও অচিন্তনীয়। সরকারের দূরদর্শিতার অভাবে জাতীয় চাহিদা নিরূপণ এবং যথাসময়ে আমদানির ব্যবস্থা না করায় এই পরিস্থিতি দীর্ঘদিন চলেছে, গত ১ বছর যাবত পেঁয়াজ ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা নানা ছলছুতো করে ভোক্তাদের পকেট কেটেছে। পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি চাষীদের কিছুটা সুবিধা করে দিলেও সার্বিক পরিস্থিতি কখনো তাদের অনুকূলে যায়নি। সংরক্ষণের অভাবে পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে, ফড়িয়ারা চাষিদের এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েছে। পেঁয়াজ সংকটে আমদানিকারকরাও সময়মতো দ্রুত পেঁয়াজ বাজারে সরবরাহ করতে পারেনি। আবার নানা ঝামেলায় পড়ে পেঁয়াজের সরবরাহ বিঘিœত হয়েছে। প্রশাসনের অভিযান ব্যবসায়ীদের আরো উদগ্র মুনাফামুখি করেছে। এর মাশুল দিতে হয়েছে ভোক্তাসাধারণকে। সরকার থেকে নেওয়া কোন পদক্ষেপই কাজ দেয়নি, এমন কি টিসিবি’র পেঁয়াজও বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পারেনি। টিসিবি’র সরবরাহ প্রয়োজনের তুলনায় সামান্যই বলা চলে। এত দীর্ঘদিন ধরে পেঁয়াজের মূল্য বেশি থাকা, বাজার অস্থিতিশীল থাকা সামগ্রিক বাজার ব্যবস্থাকেই বিপর্যস্ত করে দিয়েছে।
ভারত এ পর্যন্ত ২বার আকস্মিকভাবে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়, আমাদের সরকারও এ ব্যাপারটি সম্যক অবহিত ছিলো না। আমদানিকারকরাও বেশিরভাগ পেঁয়াজ আমদানি করতেন ভারত থেকে, ফলে তাদেরও অন্যান্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আনতে সময় বেশি লেগে যায়। এতে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের দর অস্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে যায়। যেখানে সরকারি প্রশাসন মূল্যবৃদ্ধি রোধে তেমন কিছুই করতে পারেনি।
ভারত সম্প্রতি বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানির ঘোষণা দেয়ার সাথে সাথেই ভারতীয় পেঁয়াজ বাজারে এসে যায়। বাজারে কেজি প্রতি ১০ থেকে ২০ টাকায় দাম কমে যায়। এই পরিস্থিতি আমাদের দেশীয় পেঁয়াজ চাষিদের দুর্ভোগের মধ্যে নিপতিত করে, দেশীয় পেঁয়াজের দাম পড়তে শুরু করে এবং ভারতীয় পেঁয়াজ আসার গতি বাড়লে দাম এমনভাবে পড়বে চাষিরা ন্যায্যমূল্যতো দূরে থাক, উৎপাদন খরচ তুলে আনতে পারবেন না। এই অবস্থার অবসানে পেঁয়াজ আমদানি ও বাজারে সরবরাহ ব্যবস্থায় একটা ভারসাম্যমূলক অবস্থা আনা চাই যাতে পেঁয়াজ চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত না হন।
গত দুই বছরের অভিজ্ঞতায় সরকার, ভোক্তা এবং বিশেষজ্ঞরা দেশীয় পেঁয়াজের উৎপাদন বৃদ্ধি, সংরক্ষণ ব্যবস্থা উন্নতকরণের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। দেশীয় উৎপাদনকারীরা চাহিদার কাছাকাছি উৎপাদন করলেও সংরক্ষণের অভাবে অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। এ অবস্থার তাই পরিবর্তন প্রয়োজন যাতে আমরা কারো ওপর নির্ভরশীল হয়ে না পড়ি। মুনাফা শিকারিদের কবল থেকেও বাজারকে রক্ষা করা চাই। এ অবস্থায় আমরা মনে করি পেঁয়াজ চাষিরা যাতে ন্যায্যমূল্য পান, সে জন্য আমদানিতে ৫ শতাংশ শুল্ক পুনর্বহাল করা প্রয়োজন। বাজারে দাম স্বাভাবিক ও প্রতিযোগিতামূলক থাকলে ভোক্তারাও প্রতারিত হবেন না। তবে সরকারকে পূর্বাহ্নেই বাজারের গতি প্রকৃতি, আন্তর্জাতিক উৎপাদন পরিস্থিতি এসব বুঝে আমদানির পদক্ষেপ নিতে হবে।
আমরা মনে করি উৎপাদনে স্বনির্ভর হতে পারলে যে কোন ধরনের সিন্ডিকেট ভাঙা সম্ভব। আমাদের মনে রাখতে হবে কোভিড কালে কৃষিপণ্য উৎপাদন ও সরবরাহে চাষিরা প্রধান ভূমিকা পালন করেছেন যা জাতিকে প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করেছে।