পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা : কেউ জবাবদিহির বাইরে নয়

রোববার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজের আড়তে অভিযান চালিয়ে বাড়তি দাম রাখা এবং ইনভয়েস ছাড়া বেচাকেনা করার অপরাধে ১০টি আড়তকে ৭৭ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এই অভিযানের জেরে সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দোকান বন্ধ রেখেছেন অর্ধশত আড়তদার। এছাড়া সকাল থেকে আড়তদাররা দিনের বিভিন্ন সময় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন। এতে পণ্যের লোড আনলোড বন্ধ ছিল।
এ সময় পেঁয়াজের আড়তগুলোতে তালা ঝুলিয়ে রাস্তায় শত শত আড়তদার ও কর্মচারী বসে পড়েন। তারা প্রশাসনের অভিযানের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন। আবু আহমেদ নামের এক আড়তদার জানান, এখানে আমরা পেঁয়াজ বিক্রির বিনিময়ে কিছু কমিশন পাই। মূলত আমদানিকারক যে দরে পেঁয়াজ বিক্রি করতে বলেন আমরা সেই দরে পেঁয়াজ বিক্রি করি। কিন্তু প্রশাসন গত রোববার সম্পূর্ণ অযৌক্তিকভাবে আমাদের জরিমানা করেন। এমনিতে করোনার কারণে ব্যবসা বাণিজ্য অনেকটা স্থবির। তার ওপর প্রশাসনের অভিযান। এভাবে হলে তো আমরা ব্যবসা করতে পারব না।
হামিদুল্লাহ মিয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে দোকান বন্ধ রাখা কিংবা বিক্ষোভের কোনো কর্মসূচি ছিল না। মূলত গত রোববার ম্যাজিস্ট্রেটের অভিযানে ক্ষুব্ধ কিছু আড়তদার সংগঠিত হয়ে দোকান বন্ধ রেখে বিক্ষোভ করছেন। তাদের আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশ করে আরো কিছু আড়তদার যোগ দিয়েছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে আমার আড়ত খোলা রেখেছি। তিনি বলেন, বর্তমানে খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজ নিয়ে কোনো ধরনের কারসাজি হচ্ছে না। সম্প্রতি ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি কমে গেছে। এছাড়া ভারতে বন্যা ও বৃষ্টিতে পেঁয়াজের ফলন ক্ষতি হয়েছে। যার ফলে ভারতের বাজারেও পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এর প্রভাবে বাজার কিছুটা চাঙা ছিল। তবে গত কিছুদিন ধরে আবার দাম কমছে। প্রশাসনের অতর্কিত অভিযানের কারণে সাধারণ আড়তদাররা দোকান বন্ধ রেখেছেন। যদিও আজ (সোমবার) সন্ধ্যা ৬টা থেকে তারা আবার দোকান চালু হয়েছে। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, খাতুনগঞ্জের বাজারে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের পর থেকে ভোগ্যপণ্যের বেচাবিক্রিতে ধস নেমেছে। এরমধ্যে গত রোববার প্রশাসনের অভিযানের প্রেক্ষিতে পেঁয়াজের আড়তদাররা দোকান বন্ধ রেখে বিক্ষোভ করছেন। যদিও আমাদের সংগঠন তাদের এই কর্মসূচি সমর্থন করে না। তবে আমরা মাননীয় জেলা প্রশাসক মহোদয়কে সার্বিক বিষয় অবহিত করে চিঠি লিখব। বর্তমান পরিস্থিতিতে অভিযান পরিচালনা করলে স্বাভাবিকভাবে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখিন হবেন।
পেঁয়াজের বাজারের দরবৃদ্ধি ঠেকাতে পাইকারি বাজারের পর এবার খুচরাতেও অভিযান চালিয়েছে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানে নগরীর চৌমুহনী বাজার এবং ষোলশহর দুই নম্বর গেটের কর্ণফুলী মার্কেটের ৯ দোকানিকে ১৪ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. উমর ফারুক বলেন, খুচরা দোকানগুলোতে কম দামে পেঁয়াজ কেনা থাকলেও তারা বেশিদামে পেঁয়াজ বিক্রি করছিল।
মান ও দোকানভেদে পাইকারি বাজারের দর থেকে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে দেখেছেন সাংবাদিকরা। অনেক দোকানদার তাদের মূল্য তালিকায় পেঁয়াজের দাম ঘষামাজা করে লিখে রেখেছেন। যে যার মতো করে দাম নিচ্ছেন এটা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। বাজার মনিটরিং করা কিংবা পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার নানা উদ্যোগ নিতে পারে কিন্তু তার প্রতিক্রিয়ায় বাজার বন্ধ রাখা যৌক্তিক নয়, সমর্থনযোগ্য নয়, মনে রাখতে হবে রাষ্ট্রে কেউ জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে নয়।