পুনর্গঠন হচ্ছে মন্ত্রিসভা : চট্টগ্রামের তিন নেতা আলোচনায়

সালাহ উদ্দিন সায়েম :
সরকারের মন্ত্রিসভা পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও ১৪ দলীয় জোটের শরিক দল তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীকে অন্তর্ভুক্ত করার কথা আলোচনা চলছে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের মহলে। এছাড়া মন্ত্রিসভা পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল প্রতিমন্ত্রী হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ার কথাও আলোচনা হচ্ছে দলীয় মহলে।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, আগামী রোববার থেকে শুরু হওয়া সংসদ অধিবেশন শেষে মন্ত্রিসভা পুনর্গঠন করা হতে পারে।
গত বছরের ৭ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে। ওই দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২৪ জন মন্ত্রী, ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী ও তিনজন উপমন্ত্রী নিয়ে ৪৭ সদস্যের মন্ত্রিসভার যাত্রা শুরু হয়। এ পর্যন্ত দুই দফা মন্ত্রিসভা অল্পবিস্তর পুনর্গঠন ও রদবদল হয়েছে। এবার তৃতীয় দফা মন্ত্রিসভা পুনর্গঠন হতে যাচ্ছে।
মন্ত্রিসভা পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় আলোচনায় আছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মিরসরাই আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। তিনি ২০১৪ ও ২০০৮ সালে সংসদ নির্বাচনের পর গঠিত আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের দুই দফা মন্ত্রী হন।
মন্ত্রিসভায় এবার আওয়ামী লীগের কয়েকজন অভিজ্ঞ ও প্রবীণ নেতাদের অন্তর্ভূক্ত করার কথা আলোচনা চলছে দলীয় মহলে। এ সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদে গঠিত মন্ত্রিসভায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য আমীর হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদের সাথে বাদ পড়েন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনও। এসব নেতা সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে গঠিত মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন।
জানতে চাইলে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন সুপ্রভাতকে বলেন, আমি এ পর্যন্ত দুই বার মন্ত্রী হয়েছি। তাই এটা নিয়ে আমার কোনো কৌতূহল নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি আমাকে আবার প্রয়োজন মনে করেন তাহলে স্থান পেতে পারি।
এদিকে মন্ত্রিসভা পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় চট্টগ্রামের কোতোয়ালী আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল শিক্ষা উপমন্ত্রী থেকে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে পদোন্নতি পেতে পারেন বলে আলোচনা হচ্ছে আওয়ামী লীগের মহলে।
জানতে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সুপ্রভাতকে বলেন, বিষয়টি সম্পূর্ণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার।
মন্ত্রিসভা পুনর্গঠনে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে ধর্ম মন্ত্রণালয় নিয়ে। গত ১৪ জুন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি গঠিত মন্ত্রিসভায় টেকনোক্র্যাট কোটায় ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছিলেন তিনি।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের শূন্যপদে আসার ক্ষেত্রে ফটিকছড়ি আসনের সংসদ সদস্য ও তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী ছাড়াও আলোচনায় আছেন আওয়ামী লীগের তিন সংসদ সদস্যও। এরা হলেন- পটুয়াখালী-১ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শাহজাহান মিয়া, ঝালকাঠি-১ আসনের সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুন এবং ময়মনসিংহ-৭ আসনের সংসদ সদস্য রুহুল আমিন মাদানী।
জানা গেছে, নজিবুল বশর সুফি আক্বীদায় বিশ্বাসী হলেও তাঁর সাথে কওমি আলেমদের সুসম্পর্ক রয়েছে। এছাড়া হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাথেও সুসম্পর্ক রয়েছে নজিবুল বশরের। তিনি এ সংগঠনটির উপদেষ্টা পদে রয়েছেন।
২০১০ সালের ২৯ জুন তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিবের দায়েরকৃত এক মামলায় গ্রেফতার হয়েছিলেন জামায়াতের আমীর মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদ ও নায়েবে আমীর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী।
২০১৫ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদ অধিবেশনে ফটিকছড়ির সংসদ সদস্য নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব করেছিলেন।
২০১৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সকল দলের অংশগ্রহণ নিয়ে যখন সংশয় তৈরি হয়েছিল তখন নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর নেতৃত্বে তরিকত ফেডারেশনই প্রথম নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেয়।
নজিবুল বশরের এসব ভূমিকার কারণে তাঁকে প্রধানমন্ত্রী মূল্যায়ন করতে পারেন বলে মনে করছে ১৪ দলীয় জোটের নেতারা।
জানতে চাইলে সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী সুপ্রভাতকে বলেন, ২০০৮ ও ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রিসভায় ১৪ দলীয় জোটের বিভিন্ন শরীক দলের নেতারা স্থান পেয়েছেন। কিন্তু আমি তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান হিসেবে আওয়ামী লীগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেও মন্ত্রিসভায় স্থান পাইনি। আশা করছি, আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদের মন্ত্রিসভায় ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলের নেতা হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে মূল্যায়ন করবেন।