পাহাড় কেটে ইউপি চেয়ারম্যান মাছচাষ ও মাটিবিক্রয় করছেন

বাঁশখালীতে অবৈধ ব্রিকফিল্ড

নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁশখালী
বনবিভাগের বাঁশখালীর কালীপুর রেঞ্জ অফিসের ২ কিলোমিটার দূরে লটমনি পাহাড়। ওই পাহাড়ে বাঁশখালীর বনবিভাগ ও বাণীগ্রাম তহসিল অফিসের অধীনে ৪৫ হেক্টর পাহাড় রয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ওখানকার ১২ হেক্টর পাহাড় দখল করে অবৈধ ব্রিকফিল্ড ও মাছচাষ করছেন সাতকানিয়া উপজেলার এঁওচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মানিক ও তার ভাই মো. হারুন। এছাড়া তারা ওইসব পাহাড় থেকে শত শত ট্রাক মাটি বিক্রয় করছেন প্রতিনিয়ত। ব্রিকফিল্ডের ধোয়ায় গাছ মরে গিয়ে ১৫ হেক্টর সামাজিক বনায়নের পাহাড় মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে।
গতকাল সকাল ১১টায় সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, বিশাল লটমনি পাহাড় কাটার দৃশ্য। পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে আছে ৭টি এক্সকেভেটর। যন্ত্রগুলো অবিরত মাটি কাটছে আর ট্রাকে মাটি ভরে নিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন দূর দূরান্তে। প্রতি ট্রাক মাটির দাম ২৪০০ টাকা। দৈনিক ৭/৮টি ট্রাকে করে অন্তত ৩৫০ ট্রাক মাটি বিক্রয় হয়। মাটি কেটে পাহাড়ের তলদেশে ১০/১২ ফুট গভীর করে মাছচাষ হচ্ছে। যাতে প্রশাসন তদন্ত করতে আসলে বোঝানো যায় এটা আসলে সমতলভূমি। অর্থাৎ এখানে সমতল ছিল বলে পুকুরে মাছচাষ হচ্ছে। এভাবে পাহাড়ের অন্ততঃ ১২ হেক্টর জায়গা প্রভাব খাাটিয়ে দখল করে রেখেছেন তারা। ওইসব পাহাড়ে ঘুরেফিরে মনের মতো করে ছবি তোলার সুযোগও নেই। ছবি তুলতে গেলে তেড়ে আসে লাঠিসোঁটা নিয়ে ব্রিকফিল্ডের ১০/১২ জন শ্রমিক। লটমনি পাহাড়ে স্থাপিত ব্রিকফিল্ডের নাম কেবিএম ২।এই পাহাড়ের সাথে লাগোয়া সাতকানিয়া উপজেলার বনভূমি। সাতকানিয়া উপজেলার বনবিভাগের জায়গা দখল করে রয়েছেন চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মানিকের এই ব্রিকফিল্ডের পাশে কেবিএম ১ ও কেবিএম নামের আরও ২টি ব্রিকফিল্ড রয়েছে। একটি ব্রিকফিল্ডেরও লাইসেন্স নাই। ওখানে মাছের পুকুর রয়েছে ১২টি। বনবিভাগের জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে আলিশান ব্যক্তিগত বাংলো। বাঁশখালী ও সাতকানিয়া উপজেলার বনবিভাগের ৩ বর্গ কিলোমিটার জায়গা দখল করে রাখা ওই চেয়ারম্যানের বিশাল অবৈধ সাম্রাজ্যে প্রশাসনের কর্মকর্তারাও তেমন একটা যেতে আগ্রহী নয়।
বাঁশখালীর বাসিন্দা নুরুল আবছার, গোলাম মোস্তফা, জয়নাল আবেদীন ও ফারহানা বেগম বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), পরিবেশ অধিদফতর, বনবিভাগ, স্থানীয় প্রশাসনে ১৭বার অভিযোগ দিয়েছি। বনবিভাগের কর্মকর্তা ও স্থানীয় তহশিলদার এসে চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মানিকের বিশাল বাংলোতে বসে হিসাব-নিকাশ করে চলে যান। বাঁশখালীর বাসিন্দা অভিযোগ করলে বলেন, এসব জায়গা সাতকানিয়ার। সাতকানিয়ার বাসিন্দা অভিযোগ করলে বলেন, এসব জায়গা বাঁশখালীর। এভাবে জবাব দিয়ে চেয়ারম্যানকে সহযোগিতা করছেন সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্মকর্তারা।
বাঁশখালীর বাণীগ্রামের তহশিলদার আতিকুর রহমান বলেন, আমি সরেজমিন তদন্ত করেছি। চেয়ারম্যান কিছু জায়গা দখল করে রেখেছেন। তার খাজনা দেয়ার জন্য উনাকে বলেছি। তবে পাহাড় কাটতে দেখিনি। অন্য জায়গাগুলো সাতকানিয়া উপজেলার।
বাঁশখালীর কালীপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘জায়গাটি আমার রেঞ্জের ২ কিলোমিটারের মধ্যে হলেও বাঁশখালীর প্রান্তে যোগাযোগের রাস্তা নেই। তাই সাতকানিয়া উপজেলা হয়ে যেতে হয়। চেয়ারম্যান খুব প্রভাবশালী হওয়ায় লোকবলের অভাবে বনবিভাগের জায়গা উদ্ধার করতে পারছি না।
বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার বলেন, ‘চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মানিকের পাহাড় কাটার অভিযোগ পেয়েছি। আমি বিষয়টি সাতকানিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। যেহেতু জায়গাটিতে সাতকানিয়ার ওপর দিয়ে যেতে হবে সেজন্য দুই উপজেলার যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করব শীঘ্রই।’
সাতকানিয়া উপজেলার এঁওচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মানিক বলেন, ‘আমি পাহাড় দখল করিনি ও পাহাড়ও কাটিনি। বনবিভাগের কর্মকর্তা ও বাণীগ্রামের তহশিলদার আতিকুর রহমান তদন্ত করে গেছেন। আমার ব্রিকফিল্ড পাহাড়ের ভিতরে হলেও সমতল জায়গায় আছে। পরিবেশ অধিদফতর ও দুদক কর্মকর্তারাও তা জানেন। আইন অনুসারে তারা আমার লাইসেন্সবিহীন ব্রিকফিল্ডে অভিযান চালাতে পারেন না।’