পানচাষিদের কপালে দুশ্চিন্তার রেখা

খরচ উঠিয়ে নেয়াই দায় হয়ে উঠেছে

রাজু কুমার দে, মিরসরাই :

মিরসরাইয়ে পানের বরজে মড়ক দেখা দিয়েছে। ফলে পানের উৎপাদন কমে যাওয়ার পাশাপাশি উপযুক্ত দাম পাচ্ছে না পান চাষিরা। অথচ কৃষি প্রধান বাংলাদেশে নানা চাষাবাদের মধ্যে পান চাষ অন্যতম। কারণ একবার পান চাষ শুরু করলে তার সুফল পাওয়া যাওয়া যায় বছরের পর বছর ধরে। শুধু মাত্র পরিচর্যার মধ্যে দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে উৎপাদিত ফসলের মূল্য পাওয়া যায়। অনেকেই আছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম পান চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। মিরসরাই কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, উপজেলায় বর্তমানে শুধু মাত্র ২নম্বর হিঙ্গুলী ইউনিয়নের পান চাষ হয়ে থাকে। আগে ওয়াহেদপুর ইউনিয়নেও পান চাষ হতো। কিন্তু সীমানা ভাগের পর ওয়াহেদপুরের ওই অংশ সীতাকুন্ড উপজেলায় অন্তর্ভূক্ত হয়ে যায়। উপজেলা কৃষি অফিসের হিসেব মতে মিরসরাইয়ে ২ হেক্টর বা ১৫ বিঘা জমিতে পান চাষ হয়ে থাকে। প্রায় ২৫ জন চাষি এই পান চাষ করে থাকেন। উপজেলায় বছরে ২৫ মেক্ট্রিকটন পান উৎপাদন হয়ে থাকে। সরেজমিনে গিয়ে উপজেলার ২নম্বর হিঙ্গুলী ইউনিয়নের মেহেদী নগরগ্রামের ভোলা কুমার দের পানের বরজে গিয়ে দেখা যায়, পানের পাতা ও কা-ে পচন দেখা দেওয়ার পাশাপাশি গোড়া পচা রোগ দেখা দিয়েছে। ক্ষেতে মড়ক দেখা দেওয়ায় এবার লোকসানের আশঙ্কাও করছেন তিনি। পানের পাতায় কালো ও হলুদ বর্ণে পান বিবর্ণ হয়ে গেছে। ভোলা কুমার দে প্রায় ২৮ শতক জমিতে দুই বছর আগে পান চাষ শুরু করেন। এতে তার মোট খরচ ব্যয় হয় প্রায় ৯০ হাজার টাকা। তিনি হালের বলদ বিক্রি করে উক্ত টাকার জোগান দেন। পানের বিরা (১৮ খন্ডা) বর্তমান মূল্য ৪৫- ৫০ টাকা। সম্প্রতি তার বরজে নানা ধরণের রোগ দেখা দিলে তার কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে। তিনি বারইয়ারহাট বাজারের ডিলার অহিদ অ্যান্ড ব্রাদার্স ও আবুল হোসেন অ্যান্ড সন্স এই দুই দোকান থেকে বিভিন্ন কোম্পানির নানা ধরনের ওষুধ ব্যবহার করা পরও পান রোগ মুক্ত হয়নি। তিনি ক্ষোভের সহিত জানান কৃষি সংশ্লিষ্ট কোন কর্মকর্তা আজ পর্যন্ত দেখা পাননি। পরামর্শের জন্য উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের দায়িত্ব থাকলেও তারা এই পর্যন্ত আসেনি। ফলে পানের বরজ নিয়ে আমি দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি। ওই ইউনিয়নের একাধিক পান চাষি জানান, পানের বরজের সামগ্রী যেমন বাঁশ, ঝন ও শ্রমিকদের মজুরির দাম বেড়ে যাওয়া এখন পান চাষে আগের মতো লাভ হয় না। কিন্তু পানে মড়ক লাগায় এই বছর ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আশংকা রয়েছে বলে জানান তারা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রঘুনাথ নাহা বলেন, পানক্ষেতে পানের লতা ও গোড়া পচা রোগ সাধারণত হয়ে থাকে। এই রোগগুলো থেকে প্রতিরোধ করার জন্য ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া নাশক ওষুধ ব্যবহার করা পরামর্শ দিয়ে থাকি কৃষকদের।