‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ : বাধ্যতামূলক করতে হবে

করোনা থেকে প্রতিকার পেতে বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা মাস্ক পরা, হাত ধোয়া, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, সামাজিক দূরত্ব এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর যে গুরুত্ব দিয়েছে তা করোনার বর্তমান পরিস্থিতিতে অবশ্য পালনীয় কর্তব্য হিসেবে উপস্থিত হয়েছে। বিশ্বের কোথাও করোনা নিয়ন্ত্রণে আসেনি বরং এর দ্বিতীয় ঢেউ অনেক দেশে তীব্রতা নিয়ে দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে আগামী কয়েক মাস যে সংকটপূর্ণ হতে পারে তা বিশ্বসংস্থার মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রেয়াসুস সতর্ক করে দিয়েছেন।
আসন্ন শীতকালে আমাদের দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর প্রতিকারে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে প্রতিপালনের কথা দেশবাসীকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। বিশেষ করে মাস্ক পরার ব্যাপারে তিনি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে বলেছেন। গত রোববার মন্ত্রিসভার বৈঠকেও সরকারিÑ বেসরকারি অফিসগুলিতে মাস্ক ছাড়া প্রবেশ করতে না দেওয়া এবং মাস্ক ছাড়া সেবার জন্য গেলে সেবা না দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, সরকারিÑ বেসরকারি অফিসে মাস্ক পরা সম্পর্কিত পোস্টার সাঁটিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সব জায়গায় সব প্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার, শপিংমল বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সামাজিক ও ধর্মীয় সম্মেলন সব জায়গায় মাস্ক পরতে হবে।
মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে আগেও সরকার থেকে নির্দেশনা, বিজ্ঞপ্তি এসেছে, কিন্তু এটিকে ফলপ্রসূ রাখতে যেরূপ প্রচারণা, উদ্যোগ, কিংবা না মানায় শাস্তির ব্যবস্থা এসব ভাল ভাবে করা যায়নি। দামে সামান্য অথচ সুরক্ষার জন্য অপরিহার্য জিনিসটি পরার ব্যাপারে অবহেলা করার প্রবণতা আমাদের জন্য এখন আত্মঘাতি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা করোনার দ্বিতীয় ঢেউ তীব্র হবে বলছেন শীতকালের কথা ভেবেই। সুতরাং জীবন জীবিকা, ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজে অন্যদের সুরক্ষায় মাস্কপরা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ছাড়া বিকল্প নেই।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত সরকারি এক গবেষণা সংস্থার জরিপে বলা হয়, দেশের ৪৮ শতাংশ মানুষ অর্থাৎ প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী মাস্ক ব্যবহার করেন না, বেসরকারি কয়েকটি সংস্থার জরিপে বলা হয়, গরম ও অস্বস্তির কারণে ৬৭ শতাংশ মানুষ মাস্ক পরেন না। নানা নির্দেশনা এবং কিছু শাস্তিমূলক ব্যবস্থা সত্ত্বেও জনগণের মধ্যে মাস্ক পরার প্রবণতা বাড়ছে না বরং তা নি¤œগামী। পরিবহন, হাটবাজার, হোটেল রেস্টুরেন্ট, শপিংমল, জনসমাগমে মাস্ক পরা, নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা হচ্ছে সামান্যই।
এখন সরকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে যে নির্দেশনা দিয়েছে তার ব্যাপক প্রচার প্রচারণা প্রয়োজন; গ্রাম-শহরের সর্বত্রই নজরদারি, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মচারী ও স্বেচ্ছাসেবকদের যুক্ত করতে হবে। এটি করোনাকালীন স্বাস্থ্যসেবা ও অন্যান্য সহায়-সাহায্য দিতেও কাজে লাগবে। এছাড়া ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, শিক্ষক ও এলাকার গণ্যমান্য মানুষের সাহায্য নিয়ে মানুষকে করোনার বিপদ সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে হবে।
জনগণ স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সংক্রমণ তীব্র হবে। আমাদের স্বাসস্থ্যসেবার যে বেহাল দশা তাতে নিজেকে এবং অন্যকে সুরক্ষা দিতে আমাদের মাস্ক পরা, বারবার হাত ধোয়া, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা, প্রতিকারমূলক স্বাস্থ্যবিধির পরিচর্যাÑএসব বিষয়ে সকলকে মনোযোগী হতে হবে।