নির্মাণ কাজে গাফেলতি কর্তব্যে অবহেলা : এ কিসের আলামত

গতকাল রোববারের দৈনিক সুপ্রভাতের প্রথম পৃষ্ঠার দুটি খবর সচেতন মানুষকে কিছু প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে নিশ্চয়। খবর দুটির শিরোনাম ছিল ‘লাভলেনে দেয়ালধসে দুই শ্রমিকের মৃত্যু’, অন্যটি ‘দীঘিনালায় বেইলি ব্রিজ ভেঙে ৭জন গুরুতর আহত’। দুটি খবরই আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও নিজস্ব প্রতিনিধির পরিবেশিত। দুটি খবরই চরম দায়িত্বহীনতা, অবহেলা ও উপেক্ষার বিষয়কে সামনে নিয়ে আসে।
মহানগরের কেন্দ্রে লাভলেনের মতো জায়গায় শুধু গাফিলতির কারণে দুজন শ্রমিকের জীবনের মর্মন্তুদ অবসান কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। একজন তো ঘটনাস্থলেই, অন্যজন চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা নির্মাণকাজে গাফিলতিকে এ মৃত্যুর জন্যে দায়ী বলে মনে করেন।
জানা যাচ্ছে, নির্মাণাধীন দেয়ালটি শক্ত হবার আগেই সেখানে মাটিভরাটের তোড়জোড় চলছিল। দুবাই-বাংলা করপোরেশ নামে একটি আবাসন ও ইটভাটা কোম্পানি এখানে ভাড়া দেবার জন্যে গুদাম নির্মাণ করছিল।
অন্যদিকে খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলার বোয়ালখালী ইউনিয়নের চৌরাস্তার মোড়ের বেইলি ব্রিজটি ভেঙে পড়লে একটি যাত্রীবোঝাই মাহেন্দ্র গাড়ির ড্রাইভারসহ ৭ যাত্রী আহত হন। এখানে সড়ক পরিবহনের সাথে সংশ্লিষ্ট ড্রাইভারদের চরম বেখেয়ালিপনার নজির স্পষ্ট হয়েছে। জানা যাচ্ছে, বেইলি ব্রিজটিতে দুটি কাঠবোঝাই ট্রাক ও একটি যাত্রীবোঝাই মাহিন্দ্র একই সময়ে ওঠে আসে। এবং তারা কেউই আগের গাড়িকে ব্রিজটি পার হয়ে যাবার মতো সময় বা সুযোগ দিতে না-চাওয়ায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। এখানেও সড়কপথের পরিবহন সংশ্লিষ্ট মানুষগুলোর দায়িত্ব ও কর্তব্যের প্রতি ভ্রƒক্ষেপহীনতা এবং মানুষের জানমালের প্রতি অবজ্ঞার ভঙ্গিই প্রধান হয়ে উঠেছে।
এটি শুধু মফস্বলেই নয়, ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের মহাসড়কগুলোতেও সমানতালে চলছে।
এই সেকটরের ড্রাইভার আর পরিবহন শ্রমিকেরা দেশের আইন-কানুনেরও তেমন তোয়াক্কা করে না, এমনটিও বারবার লক্ষ করা যাচ্ছে। এক্ষেত্রে সরকারের নমনীয় মনোভাবও কম দায়ী নয়। পরিবহন সেকটরের রাঘব-বোয়ালেরা সরকারের অন্দরমহলে জায়গা করে নিয়ে ধরাকে সরা জ্ঞান করে চলেছে বলে সচেতনমহলে গুঞ্জন রয়েছে। সরকার এ বিষয়ে কঠোরতার দিকে যেতে চাইলে এর ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা রাঘব-বোয়ালদের অঙ্গুলি নির্দেশে দেশব্যাপী পরিবহন ধর্মঘট ইত্যাদির মাধ্যমে জনজীবনে বিপর্যয় ডেকে আনতে কসুর করে না। এই ধিক্কারযোগ্য ও জনভোগান্তির সংস্কৃতির বৃত্ত থেকে আমরা কি বেরিয়ে আসতে পারবো আদৌ? আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, আমাদের নাগরিক সমাজও এ ব্যাপারে গণমাধ্যমসমূহে সামান্যমাত্র উচ্চবাচ্য সেরেই একেবারে কুম্ভকর্ণের নিদ্রাযাপনে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন। এ কিসের আলামত?