নগরে কেনাকাটায় হুমড়ি খাচ্ছে মানুষ

রিয়াজউদ্দিন বাজারে ক্রেতাদের ভিড়-সুপ্রভাত
স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই :

মোহাম্মদ রফিক:

নগরের রাস্তাঘাট ও হাটবাজারে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে মানুষ। ঈদের কেনাকাটা করতে কিছু শপিংমল কেন্দ্রিক ক্রেতার ভিড় লক্ষ করা গেছে। কিছু সুপারশপে ক্রেতার উপস্থিতি ছিল বেশি।

ঈদের আগ মুহুর্তে নগরের সড়ক এবং উপসড়কগুলোয় প্রাইভেট কারের চলাচল বেড়েছে। রিকশা ও রাইড শেয়ারিং পাঠাও ও সহজ ত আছেই।

কাঁচাবাজার কেন্দ্রিক মানুষের ভিড় দেখা গেছে সবচেয়ে বেশি। সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না।

সুপারশপেগুলোয় স্বাস্থ্যবিধি মেনেই কেনাবেচা হচ্ছে। নগরে রিকশা ও রাইড শেয়ারিংয়ে যাত্রী আনা-নেয়ার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না । এক রিকশায় ৫-৬জন এবং পাঠাও, সহজে দুজন যাত্রী নিয়ে চালককে গন্তব্যে ছুটতে দেখা গেছে।

স্বাস্থ্যবিধি না মানার সবচেয়ে খারাপ নজির দেখাগেছে রিয়াজুদ্দিন বাজার এলাকায়। সরকার বন্ধ ঘোষণার প্রায় দেড়মাস পর গত ১০ মে থেকে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে শপিংমল-দোকান বিকাল ৫টা পযন্ত খোলা রাখার নিদ্দেশ দেয়।

কিন্তু করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে নগরের শপিংমল-দোকান মালিক সমিতির নেতারা সম্প্রতি এক বৈঠকে ঈদের আগে মার্কেট-শপিংমল না খোলার সিদ্ধান্ত নেন। করোনাকালে তাদের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগতও জানান নগরবাসী।

আজ শনিবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, নিউমার্কেট, দুই নম্বর গেইট এলাকার ফিনলে টাওয়ার, চিটাগাং শপিং কমপ্লেক্স, মিমি সুপার মার্কেট, আমিন সেন্টারসহ প্রায় সব বিপণিকেন্দ্র বন্ধ আছে। ব্যতিক্রম শুধু রিয়াজুদ্দিন বাজার।

রিয়াজুদ্দিন বাজার-তামাকুমণ্ডী লেইন ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা ঈদের আগে দোকানপাট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিলেও সংগঠনটির কিছু সদস্য তা মানছেন না।
তারা দোকানপাট খুলে কাপড়চোপড়, জুতা, প্রসাধন সামগ্রীসহ বিভিন্ন পণ্য দেদার বিক্রি করছেন।

ক্রেতা এবং বিক্রেতা কেউই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। ঈদের কেনাকাটার জন্য ক্রেতারা দোকানে দোকানে হুমড়ি খেয়ে পড়তে দেখা যায়। স্বাস্থ্যবিধি না মানার চিত্র দেখা গেছে, আমতল গলির সাইদুল হক এন্ড সন্স, জুয়েল কোয়ালিটি, ভাইভাই জুতা, মুনতাসির ক্লথস্টোরসহ রিয়াজুদ্দিন বাজারের শত শত দোকানে।

দেখা গেছে, পঙ্গপালের মতো বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ ছুটে আসছেন রিয়াজুদ্দিন বাজারে। বেশিরভাগ দোকানে সাটারের কিছু অংশ খোলা। কিন্তু ভেতরে ক্রেতায় ঠাসা। কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। একজন আরেকজনের গা ঘেঁষে দাড়িয়ে কাপড়চোপড় দেখছেন। অনেক ক্রেতা বিক্রেতার মুখে কিম্বা হাতে গ্লাভস নেই।

স্বাস্থ্যবিধি কেন মানছেন না জানতে চাইলে ‘মুনতাসির ক্লথ স্টোরের’ এর বিক্রিয়কর্মী নিজের পরিচয় গোপন রেখে বলেন, ‘পেটের ক্ষিদে করোনা ভাইরাসের চেয়েও ভয়ংকর। লকডাউন পরিস্থিতির মধ্যে চাকুরি করতে হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে আমাদের মালিক তেমন সচেতন নন। দোকান মালিকেরা ঈদের আগে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিলেও তারা নিজেরাই এ নিয়ম ভেঙে দোকান খুলেছেন।’

জুয়েল কোয়ালিটির বিক্রয়কর্মী আমজাদ বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কিনা তা নিয়মিত তদারকি করছে পুলিশ। হাতেগোনা কিছু দোকানদার সরকারি নির্দেশ মানলেও অধিকাংশরা মানছেন না। পুলিশ এলে সব ঠিকঠাক। চলেগেলে স্বাস্থ্যবিধি না মানার সেই পুরনো চেহেরায় ফিরে যায়।’

অক্সিজেন এলাকা থেকে রিয়াজুদ্দিন বাজারে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছেন হায়দার আলী। পেশায় তিনি মাংস ব্যবসায়ী। নিজের মুখে মাস্ক লাগালেও তার স্ত্রী ও সন্তানদের মুখে মাস্ক বা হ্যান্ড গ্লাভস ছিল না।

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে আপনি সচেতন কিনা জানতে চাইলে হায়দার আলী বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মানার দরকার ছিল। আমাদের গাফিলতির কারণে হু হু করে প্রতিদিন লাফাচ্ছে করোনা ভাইরাস।’

কোতোয়ালী থানার ওসি মো. মহসীন জানান, গত সোমবার রিয়াজুদ্দিন বাজারের বিভিন্ন মার্কেটে অভিযান চালিয়ে ৯ জন আটক করে পুলিশ। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে বেচাকেনার দায়ে তাদের আটক করা হয়। আটককৃতদের মধ্যে ৪ জন বিক্রেতা ও ৫ জন ক্রেতা। তাদের বিরুদ্ধে সংক্রমণ আইনে মামলা করা হয়েছে।’

নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার শ্যামল কুমার নাথ বলেন, করোনা ভাইরাসে সংক্রমণ ঠেকাতে শহরের বিভিন্ন মার্কেটে কেনাকাটার সময় স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে পুলিশ অভিযান পরিচালনা করছে।

বেলা দেড়টার দিকে নিউমার্কেট এর বিপরীতে জলসা কমপ্লেক্সের সামনে গিয়ে দেখা যায়, মার্কেটটির মূল ফটকের সামনে লাঠি নিয়ে দাড়িয়ে আছেন কিছু যুবক। এর মধ্যে ফরিদ নামের এক যুবক বলেন, ‘ স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে একটু আগে মার্কেটের ভেতরে দুজন পুলিশ ঢুকেছেন।

কাজির দেউড়ি মার্কেটে ক্রেতাদের ভিড়-সুপ্রভাত

এসময় বেশ কিছু ক্রেতা ওই মার্কেটে ঢোকার জন্য মূল সড়কে অপেক্ষা করতে থাকেন। দশ মিনিট পর দুই পুলিশ ওই মার্কেট থেকে বেরিয়ে আসেন। পুলিশ সরে যাওয়ার পর একের পর এক ক্রেতাকে লাঠি হাতে থাকা যুবকগুলো ঢুকতে দেন।

আজ বেলা ১১টা থেকে বিকাল ৩টা পযন্ত নিউমার্কেট, তিন পুলের মাথা, এনায়েত বাজার এলাকায় অবস্থান করে ঈদের কেনাকাটায় ক্রেতা বিক্রেতারা স্বাস্থ্যবিধি না মানার চিত্র দেখতে পান এ প্রতিবেদক।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার শতভাগ দৃশ্য দেখা গেছে কাজির দেউরি এলাকার কনভেনশন সেন্টার একাকায় অবস্থিত সুপারশপ ‘শপিং ব্যাগে’। দেখা গেছে, এ সুপারশপে স্বাস্থ্যবিধি ক্রেতাদের ঢুকতে দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। ফটকে যন্ত্র দিয়ে জর মেপে ক্রেতাদের ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছেন নিরাপত্তা কর্মী জাহেদুল ইসলাম। তিনি জানান, যেসব ক্রেতার শরীরের তাপমাত্রা ৯৯ ডিগ্রির নিচে কেবল সেসব ক্রেতারা সুপারশপে ঢুকার অনুমতি পাচ্ছেন। এ সুপারশপের ভেতরেও ক্রেতারা কেনাকাটা করছেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে।

জুবলি রোডে বি এম সুপার মার্কেটে জুতার দোকানে ভিড়

অপরদিকে কাজির দেউরি কাচা বাজারে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। এ বাজারে জীবাণু মুক্তকরণ গেট দিয়ে ক্রেতারা প্রবেশ করলেও ভেতরের মাছ বাজারে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। একই চিত্র দেখা গেছে ষোলশহর কাচা বাজারেও। এছাড়া নগরের বায়েজিদ বস্তামি, বালুচড়া এলাকার ফুটপাতে এবং চকবাজার, রিয়াজুদ্দিন বাজারের কাচা বাজারে বিপুল সংখ্যক ক্রেতা দেখা গেছে যারা স্বাস্থ্যবিধি মানছে না।

এদিকে শহরের অভ্যন্তরে পুলিশের টহল ব্যবস্থা জোরদার দেখা না গেলেও প্রবেশ পথগুলোয় শহরে ঢোকা ও বের হওয়ার ক্ষেত্রে পুলিশের কড়া নজরদারি লক্ষ করা গেছে।