নগরীর আরো পাঁচ ওয়ার্ড রেড জোনে

৯টি ওয়ার্ডের রং পরিবর্তন, লাল থেকে হলুদ হলো তিন ওয়ার্ড#
পুরো ওয়ার্ড না করে সংক্রমিত নির্দিষ্ট এলাকা লকডাউনের প্রস্তাব#

রুমন ভট্টাচার্য :
করোনাভাইরাস সংক্রমণে রেড জোন ঘোষিত নগরীর ১০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৭ জুন লকডাউন করা হয় উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডকে। বাকি নয়টি ওয়ার্ডে কবে লকডাউন কার্যকর করা হবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে এই ১৪ দিনে রেড জোন ঘোষিত ওয়ার্ডগুলোর কয়েকটিতে সংক্রমণ কমে আসায় ইয়েলো জোনে পরিবর্তন হয়েছে। সে কারণে আগের তালিকা থেকে নাম বাদ পড়েছে অন্তত তিনটি ওয়ার্ডের। নতুন করে ৫টি ওয়ার্ডের নাম ঢুকেছে।
চসিক সূত্রে জানা যায়, নতুন রেডজোনে যুক্ত হওয়া ওয়ার্ডগুলো হলো-২ নম্বর জালালাবাদ ওয়ার্ড, ৪ নম্বর চান্দগাঁও ওয়ার্ড, ৮ নম্বর শুলকবহর ওয়ার্ড, ২৭ নম্বর দক্ষিণ আগ্রাবাদ ওয়ার্ড ও ৩১ নম্বর আলকরণ ওয়ার্ড। তালিকা থেকে বাদ পড়া ওয়ার্ডগুলো হলো-৩৭ নম্বর উত্তর মধ্যম হালিশহর, ৩৮ নম্বর দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর এবং ৩৯ নং দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ড।
জানা গেছে, রেডজোন ঘোষিত পুরো ওয়ার্ডকে লকডাউন না করে সংক্রমিত বেশি এমন এলাকা চিহ্নিত করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে লকডাউন করার প্রস্তাব করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
লকডাউন কার্যকরে প্রস্তুতির লক্ষ্যে গত ২১ জুন ৯ ওয়ার্ডের প্রতিটি থেকে ২০ জন করে মোট ১৮০ জন স্বেচ্ছাসেবককে প্রশিক্ষণ দিয়েছে চসিক। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরের দুজন চিকিৎসক এই প্রশিক্ষণ প্রদান করেন।
সিভিল সার্জন সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত করোনা শনাক্তের সংখ্যা ৮ হাজারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে। এর মধ্যে পাঁচ হাজার ৫১৫ জন নগরের ও দুই হাজার ৫২০ জন বিভিন্ন উপজেলার এবং করোনায় প্রাণহানি হওয়াদের মধ্যে ১৩১ জন নগরের ও ৪০ জন উপজেলার বাসিন্দা। গত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড পরিমাণ ৩৪৬ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। একদিনে যেটি চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ শনাক্ত। নতুন শনাক্তদের মধ্যে ২৭৪ জনই নগরের, বাকি ৭২ জন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।
জানা গেছে, গত ১৩ জুন পর্যন্ত চট্টগ্রাম ও ঢাকা শহরে প্রতি লাখ জনগোষ্ঠীর মধ্যে সর্বশেষ ১৪ দিনে ৬০ জন সংক্রমিত হওয়া এলাকাকে রেড জোন ঘোষণা করেছে করোনা প্রতিরোধে সেন্ট্রাল কমিটি। তালিকায় চট্টগ্রাম শহরের ১০টি ওয়ার্ডগুলো হচ্ছে-১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী, ১৪ নম্বর লালখান বাজার, ১৬ নম্বর চকবাজার, ২০ নম্বর দেওয়ান বাজার, ২১ নম্বর জামালখান, ২২ নম্বর এনায়েত বাজার, ২৬ নম্বর উত্তর হালিশহর, ৩৭ নম্বর উত্তর মধ্যম হালিশহর, ৩৮ নম্বর দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর এবং ৩৯ নং দক্ষিণ হালিশহর।
রেড জোনের বাকি ওয়ার্ডগুলোর লকডাউন কার্যকর প্রসঙ্গে জানতে চাইলে করোনা প্রতিরোধে গঠিত চট্টগ্রাম শহরের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য ও চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সামসুদ্দোহা সুপ্রভাতকে বলেন, ‘রেডজোন ঘোষিত বাকি ৯টি ওয়ার্ডের তালিকায় কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। তালিকা থেকে ৩৭, ৩৮ ও ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের নাম বাদ পড়েছে। নতুন ২, ৪, ৮, ২৭ ও ৩১ নম্বর ওয়ার্ড যুক্ত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ২ নম্বর ওয়ার্ডের নাম আগের তালিকায় ছিল। এছাড়া স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রস্তাব এসেছে রেডজোনের পুরো ওয়ার্ড লকডাউন না করে যে এলাকায় আক্রান্ত বেশি সেটি করার। এজন্য অপেক্ষা করছি। তবে আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। ৯ ওয়ার্ডের ১৮০ জন স্বেচ্ছাসেবকের ট্রেনিং সম্পন্ন হয়েছে। এখন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে যে সিদ্ধান্ত দেয়া হবে সেটা আমরা কার্যকর করব।’
চলতি সপ্তাহে কোনো ওয়ার্ডে লকডাউন কার্যকরের সম্ভাবনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে। এখনও পর্যন্ত সেরকম কোনো নির্দেশনা পায়নি।’
জানা যায়, লকডাউন কার্যকরে প্রথমে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জোনিং করবে। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে রেড জোন ঘোষণা করবে সিভিল সার্জন। সিটি করপোরেশন কেবল জেলা প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সমন্বয়ে লকডাউন কার্যকর করবে।
এ বিষয়ে জানতে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীরের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোনকল ধরেননি।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি সুপ্রভাতকে বলেন, ‘উপর মহল থেকে সিদ্ধান্ত না আসলে আমরা তো কিছু করতে পারি না। এই ১৪ দিনে জোন অনেক পরিবর্তন হয়ে যাবে। বর্তমানে যে হারে রোগী পাওয়া যাচ্ছে সেক্ষেত্রে অনেক ওয়ার্ড ইয়েলো জোনে চলে গেছে অলরেডি। সে কারণে রেডজোনের তালিকায় থাকা ৯টি ওয়ার্ড থেকে কিছু নাম বাদ যাবে এবং নতুন করে কিছু নাম যুক্ত হবে।’