দেনার দায়ে ডুবতে বসেছে বাপেক্স!

সুপ্রভাত ডেস্ক »

গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের (জিডিএফ) দেনার দায়ে ডুবতে বসেছে রাষ্ট্রীয় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন কোম্পানি বাপেক্স। হিসাবে বলছে, গত আট বছরে ১৯ প্রকল্পের বিপরীতে বাপেক্স ঋণ নিয়েছে তিন হাজার এক কোটি ৮০ লাখ টাকা। কিন্তু এর মাত্র ২৫ কোটি টাকা ফেরত দিয়েছে তারা। বাকি টাকা ফেরত দিতে পারবে কিনা তাও অনিশ্চিত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কার্যক্রমে পরিবর্তন না এনে এভাবে ঋণ নিয়ে চললে দেনার পরিমাণ বেড়ে সংস্থাটির কাজ বন্ধ হয়ে যাবে। খবর বাংলাটিবিউন’র।

গ্যাসের অনুসন্ধান-উত্তোলনে সহায়তা করার জন্য গ্রাহকের অর্থে ২০০৯ সালে গ্যাস উন্নয়ন তহবিল গড়ে তোলা হয়। নীতিমালা তৈরির পর এই তহবিল থেকে ২০১২ সাল থেকে ঋণ দেওয়া হচ্ছে। গ্যাসের উন্নয়ন অনুসন্ধানে আগে সরকার ও বিদেশি সংস্থার ঋণের দিকে তাকিয়ে থাকতে হতো, এখন সেখানে গ্যাস উন্নয়ন তহবিল থেকে ঋণ নিয়েই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু একবার নিলে আর ফেরত না দেওয়ার মানসিকতা তৈরি হচ্ছে কোম্পানিগুলোর মধ্যে। তাই গ্যাস উন্নয়ন তহবিল নীতিমালাতে সুদসহ এই অর্থ ১০ বছরের মধ্যে ফেরত দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে। তবে বাপেক্স যা নিচ্ছে তা থেকে ফেরত দিতে পারছে খুব অল্প অংশ। সম্প্রতি এক অনলাইন সেমিনারে বাপেক্সকে এই অর্থ অনুদান হিসেবে দেওয়ার দাবি জানান বিশেষজ্ঞরা। তবে সরাসরি এই দাবি নাকচ করে দেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি বলেন, ‘অনন্তকাল কোনও কোম্পানি এভাবে অনুদান নিয়ে চলতে পারে না। তাদের স্বাবলম্বী হতে হবে। তিনি এ সময় বিদ্যুৎ বিভাগের বিভিন্ন কোম্পানির কথা উল্লেখ করে বলেন, তারা তো বিদেশ থেকে ঋণ নিয়ে আসছে। পরিশোধও করছে।’

বাপেক্স সূত্র বলছে গত কয়েক বছরে তারা তিন হাজার এক  কোটি ৮০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে। এই টাকায় ১৯টি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। নতুন করে আরও সাতটি প্রকল্পের জন্য তারা ঋণের আবেদন করতে যাচ্ছে। মাত্র দুই ভাগ সার্ভিস চার্জ দিয়েই এই ঋণ পরিশোধ করা যায়। ঋণ পরিশোধের সময় পাওয়া যায় ১০ বছর। এরপর আরও দুই বছরের গ্রেস পিরিয়ড থাকে। এ পর্যন্ত বাপেক্স পরিশোধ করেছে ২৫ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে বাপেক্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মর্তুজা আহমেদ ফারুক চিশতি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত গ্যাস উন্নয়ন তহবিল থেকে বাপেক্স নিয়েছে তিন হাজার এক দশমিক আট কোটি টাকা, আর ফেরত দিতে পেরেছে মাত্র ২৫ কোটি টাকা। আগামী দশ বছরের মধ্যে তাদের এই টাকা শোধ দিতে হবে। এদিকে আরও বেশ কিছু প্রকল্পের জন্য ঋণ হিসেবে তহবিল থেকে টাকা নেবে বাপেক্স। কিছু অনুদান হলেও বেশির ভাগই ঋণ। এভাবে দিনের পর দিন তহবিলের টাকা ঋণ হিসেবে নিতে থাকলে এক সময় বাপেক্সের দেনার পরিমাণ এত বেড়ে যেতে পারে যে তারা কাজই করতে পারবে না। আর অন্য ব্যাংক বা বিনিয়োগকারী সংস্থাও তখন তাকে টাকা দিতে পারবে না। এই টাকা বাপেক্সকে অনুদান হিসেবে দিলে এই সমস্যা তৈরি হতো না।’

তিনি বলেন, ‘বাপেক্সকে দিয়ে এমন সব জায়গায় তহবিলের টাকা দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে যেখান থেকে আগামী দশ বছরের গ্যাস জাতীয় গ্রিডে আসবে না। যেমন—ভোলার গ্যাস খনন কাজ শুরু হয়েছে আবার। এই খননের পর গ্যাস তো পাওয়াই যাবে। তখন এই গ্যাস কী করা হবে? পাইপলাইনই তো হয়নি। পাইপলাইন স্থাপন করে গ্রিডে গ্যাস আনতে কমপক্ষে দশ বছর সময় লাগবে। সে পর্যন্ত গ্যাসক্ষেত্র নিয়ে বসে থাকতে হবে বাপেক্সকে।’ তিনি মনে করেন, তহবিলের টাকা ঋণ হিসেবে নিলে বাপেক্সের উচিত এমন জায়গায় কাজ করা যেখানে গ্যাস পাওয়ার সত্যিই সম্ভাবনা আছে। আর বিদেশি কোম্পানি যখন বাপেক্সের সঙ্গে এই তহবিলের টাকা নিয়েই কাজ করবে তাহলে তাদের পুরনো আবিষ্কৃত ক্ষেত্র না দিয়ে নতুন ক্ষেত্র দেওয়া উচিত। যেমন—পার্বত্য চট্টগ্রামে এই ধরনের অনুসন্ধান হতে পারতো, কিন্তু এমন জায়গাগুলোয় অনুসন্ধান করা হয়নি।’

জানতে চাইলে বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমরা ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যাচ্ছি। এই কাজের জন্য তহবিল থেকে টাকা নেওয়া হচ্ছে, আবার ফেরতও দেওয়া হচ্ছে। এটি একটি ধারাবাহিক বিষয়। আমাদের তহবিলের সব টাকা ফেরত দিতে হবে। কিছু শর্ত আছে। আমরা সব মেনেই কাজ করে যাচ্ছি।’