দৃশ্যমান হলো পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল

চট্টগ্রাম বন্দর

শেষ হলো ফ্লাইওভারের কাজ, জুনের মধ্যে
চালু হবে জেটি : বন্দর চেয়ারম্যান

ভূঁইয়া নজরুল :
৮৫০ পাইপে গড়ে উঠছে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের ৮২০ মিটার দীর্ঘ জেটি। ৪০ ইঞ্চি ব্যাসের ৩৫ মিটার দীর্ঘ পাইপগুলো নদীর তলদেশ থেকে ৩০ ফুট গভীরে প্রবেশ করছে। আর এসব পাইপের উপরেই নির্মিত হচ্ছে জেটি। আগামী জুনে এ জেটিতে জাহাজ ভেড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে পতেঙ্গায় চিটাগাং ড্রাইডক থেকে বোট ক্লাব পর্যন্ত কর্ণফুলীর তীরে ১২০০ মিটার দীর্ঘ এলাকায় চলছে ‘পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল’ নির্মাণের কাজ।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘করোনার কারণে প্রকল্পের কাজে কিছুটা ধীরগতি দেখা গেলেও এখন পুরোদমে কাজ চলছে। আগামী জুনে প্রকল্প চালু করার আশা করছি। এটি চালু হলে চট্টগ্রামের অপারেশন কার্যক্রমে আরো গতি পাবে।’
তিনি আরো বলেন, প্রকল্পে গতি আনতে রেললাইন যুক্ত করা হচ্ছে এবং তা করা হলে কনটেইনার স্থানান্তর সহজ হবে।
এদিকে গতকাল প্রকল্প এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বিএএফ শাহীন কলেজ গেট থেকে বিমানবন্দরের দিকে যাওয়ার জন্য নতুনভাবে সোজা একটি রোড নির্মাণ করা হয়েছে। একইসাথে টার্মিনালের ভেতর দিয়ে যাতে বিমানবন্দরমুখী গাড়িগুলো দ্রুত যাতায়াত করতে পারে সেজন্য ৪২০ মিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ শেষ। ফ্লাইওভারটি টার্মিনালের ভেতর থেকে শুরু হয়ে বোট ক্লাবের সামনে গিয়ে নেমেছে। এখন শুধু উদ্বোধনের অপেক্ষা। অপরদিকে ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে দুই লেনের রোডেরও নির্মাণ কাজ শেষ। নতুন এ রোড চালু হলে বিমানবন্দরমুখী গাড়িগুলোকে আর বাম দিকে বেঁকে পুরনো রোড দিয়ে যাতায়াত করতে হবে না।
ফ্লাইওভার ছাড়াও নদীর ভেতরের অংশে জেটির নির্মাণ কাজ চলছে দ্রুতগতিতে। জেটি ছাড়াও কনটেইনার শেড, প্রশাসনিকভবনসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রমও চলছে। প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, ইতিমধ্যে প্রকল্পের ৬৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়া ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ শেষ, এখন শুধু উদ্বোধনের অপেক্ষা। এ ফ্লাইওভার দিয়ে বিমানবন্দরমুখী গাড়িগুলো নির্বিঘেœ যাতায়াত করতে পারবে। এছাড়া ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে আরো দুটি লেনও রাখা হয়েছে।
কিন্তু নদী তীরবর্তী এই টার্মিনালে একটি ডলফিন জেটি এবং তিনটি কনটেইনার জাহাজ ভেড়ানোর জেটি নির্মিত হবে। এসব জেটি দিয়ে বছরে ৪ লাখ ৪৫ হাজার একক কনটেইনার হ্যান্ডেলিং করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। জাহাজ থেকে এসব কনটেইনার নামিয়ে রাখার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা ইয়ার্ডটিতে নেই। এই সমস্যার সমাধান কিভাবে করা হবে? এ বিষয়ে প্রকল্পের পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, ‘এজন্য রুবি সিমেন্টের পাশে ১৬ একর জায়গায় একটি ইয়ার্ড নির্মাণ করা হয়েছে। পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল থেকে কনটেইনারগুলোকে রেলওয়ের মাধ্যমে ওই ইয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হবে। এতে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে কনটেইনার কনজেশন হবে না।’
এদিকে গত ডিসেম্বরের শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে শুরু হওয়া প্রকল্পের কাজের ভিত্তিপ্রস্তর ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে হলেও এর কাজ শুরু হয়েছিল পাঁচ মাস পর ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে। ডিপিএম (সরাসরি সংগ্রহ পদ্ধতি) পদ্ধতিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর প্রায় ১৮০০ কোটি টাকায় বাস্তবায়ন করছে প্রকল্পটি।
প্রকল্পের সাথে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এই টার্মিনালে চারটি জেটি হচ্ছে। এরমধ্যে তিনটি জেটি ( প্রতিটি ২০০ মিটার দীর্ঘ) হবে কনটেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের জন্য এবং বাকি একটি জেটি হবে ডলফিন জেটি (২২০ মিটার দীর্ঘ)। ২৬ একর জায়গায় গড়ে তোলা হচ্ছে টার্মিনালটি। বন্দরের মূল জেটির সাথে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের কনটেইনার পরিবহনের জন্য পৃথক রেললাইন, লোকোমেটিভ ও বগি থাকবে। ট্রেনগুলো কিছুক্ষণ পরপর কনটেইনার নিয়ে বন্দরের মূল জেটিতে যাতায়াত করবে। পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণের জায়গায় নদীর গভীরতা বেশি থাকায় সাড়ে ৯ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারবে বলে এই টার্মিনাল নিয়ে বন্দর ব্যবহারকারীরা বেশ আশাবাদী।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে গত বছর ২০১৯ সালে ৩০ লাখ ৮৮ হাজার ১৮৭ একক কনটেইনার হ্যান্ডেলিং করে। আর এই হ্যান্ডেলিংয়ের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর বিশ্বের শীর্ষ ১০০ বন্দরের মধ্যে ৫৮তম স্থান দখল করে। ২০০৭ সালের পর চট্টগ্রাম বন্দরে নতুন কোনো জেটি নির্মাণ না হওয়ায় জরুরি ভিত্তিতে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়। বন্দরের চলমান প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে নতুন এই টার্মিনালের পাশাপাশি বে টার্মিনাল, লালদিয়া মাল্টিপারপাস টার্মিনাল ও কর্ণফুলী কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পও পাইপলাইনে রয়েছে।