দুই মেয়র প্রার্থীর প্রতিশ্রুতি : চাওয়া-পাওয়ার ব্যবধান

আসন্ন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনী প্রচারণায় নগর সরগরম হয়ে উঠেছে পুরোদমে। আগামী ২৭ জানুয়ারি এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এবারের প্রধান দুই মেয়র প্রার্থী আওয়ামী লীগের রেজাউল করিম চৌধুরী ও বিএনপির ডা. শাহাদাত হোসেন। গত শনিবার এই দুই প্রার্থী তাদের নির্বাচনী ইশেতহার প্রকাশ করেছেন। ৩৭টি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন রেজাউল করিম আর ৭৫টি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন শাহাদাত হোসেন। তাঁদের প্রতিশ্রুতিতে নগরের প্রধান সমস্যাগুলো প্রাধান্য পেয়েছে, তাতে সন্দেহ নেই। প্রতিশ্রুতিগুলোর মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্ব পেয়েছে জলাবদ্ধতা নিরসন। আরও যা গুরুত্ব পেয়েছে, তা হলো, নগরীর দখলকৃত খাল, নালা ও নদী পুনরুদ্ধার। খাল, নালা-নর্দমা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সংস্কার করা। নগরের আরেক বড় সমস্যা যানজট নিরসনের কথাও ইশতেহার দুটিতে গুরুত্বের সাথেই বলা হয়েছে।
দেখা যাচ্ছে, মেয়র প্রার্থীগণ সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত নয়, এমন কিছু বিষয়েও ঢালাও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। যেমন নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন, যানজট, বিদ্যুৎ গ্যাস পানি সমস্যা, সন্ত্রাস, মাদক চাঁদাবাজি ও ও পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখা ইত্যাদি। এদিকে স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন ২০০৯ অনুসারে সিটি করপোরেশনের মূল কাজ নগর পরিষ্কার রাখা, রাস্তাঘাট ঠিক রেখে আলোকায়নের ব্যবস্থা করা, জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষা দেওয়া। করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলরদের কাজের মধ্যে রয়েছে নতুন হোল্ডিং নাম্বার দেওয়া ও ট্যাক্স নেওয়া, ট্রেড লাইসেন্স প্রদান ও নবায়ন, জন্ম-মৃত্যু-বিয়ে নিবন্ধন, রাস্তাখননের অনুমতি, কবরস্থান ব্যবস্থাপনা, রাস্তা-নর্দমা-ফুটপাত নির্মাণ করা, বহুতল ভবনের জন্য অনাপত্তি পত্র দেওয়া, সংক্রামক ব্যাধি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া, পর্যাপ্ত গণশৌচাগার বসানো এবং নগরবাসীকে পার্ক ও খেলার মাঠ বিষয়ে সেবা দেওয়া।
অথচ দীর্ঘকাল ধরে নগরবাসী মশকের যন্ত্রণায় স্বাভাবিক জীবনযাপন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বাড়তি ব্যয় ও যন্ত্রণার ভেতরে। নগরে নান্দনিক পার্কের ঘাটতি রয়েছে প্রচুর। নগরের মূল এলাকার বাইরে আলোকায়নের অভাব আরও প্রকট।
প্রার্থীদ্বয় এমন সব বড় বড় প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যা নির্বাচিত হলেও মেয়র পদের বৃহত্তর ক্ষমতায়ন ছাড়া তাদের পক্ষে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। এ বিষয়ে সিটি গভর্নমেন্টের কথা উল্লেখ করা যায়। এক সময় এ নিয়ে কথা উঠেছিল। কিন্তু আমলাতন্ত্রের ব্যূহ ভেদ করে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছাড়া এটি কখনো বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এবং হয়ওনি।
চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনের বিষয়টি নিঃসন্দেহে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে একটি মেগা প্রকল্প চলমান রয়েছে। নগরবাসীরও প্রত্যাশা, প্রকল্পটি সুষ্ঠু ও দ্রুতগতিতে সম্পন্ন হোক। সেই সাথে এ প্রকল্পে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে অতি অবশ্যই সহযোগী মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিত্বের দায় ও দায়িত্ব নিয়ে নির্বাচিত মেয়র নিশ্চয় প্রভাবশালী ভূমিকা রাখতে পারেন।