দীঘিনালার গুচ্ছগ্রামে ব্রাশফায়ারে বাঙালি নেতার স্ত্রীর মৃত্যু

উদ্ধারকৃত গুলির খোসা
নেপথ্যে আঞ্চলিক দল

নিজস্ব প্রতিবেদক, খাগডাছড়ি :

খাগড়াছড়ির দীঘিনালার সোনামিয়া বাবুছড়া গুচ্ছগ্রামে সন্ত্রাসীদের ব্রাশফায়ারে মোর্শেদা বেগম (৪২) নিহত ও ছেলে মো. আহাদ (১০) গুলিতে আহত হয়েছেন। আহত মো. আহাদ দীঘিনালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরেছেন। মোর্শেদা বেগম সোনামিয়া টিলা, গুচ্ছগ্রাম ভূমিরক্ষা কমিটির সভাপতি আব্দুল মালেকের স্ত্রী। গত শুক্রবার রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে বাবুছড়া পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন গুচ্ছগ্রামে ঢুকে আব্দুল মালেকের বাড়ি লক্ষ্য করে সন্ত্রাসীরা এলোপাথাাড়ি গুলি ছুঁড়লে প্রাণহানির এ ঘটনা ঘটে।
আব্দুল মালেকের বাড়িতে হামলা করে চলে যাওয়ার সময় সন্ত্রাসীরা আশপাশের ৩টি বাড়িতেও গুলি ছুঁড়ে। এতে কেউ হতাহত না হলেও বাড়িঘরের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আব্দুল মালেকের বাড়ির পাশে ইটের দেয়াল ও টিনশেড একটি বাড়ি। সে বাড়ির পাশে দেয়ালের সাথে একটি পর্যবেক্ষণ চৌকি। স্থানীয়রা জানান, পাশের বাড়িতে যে-কয়েকজন পাহাড়ি যুবক থাকে তারা মাঝেমধ্যে পর্যবেক্ষণ চৌকিতে দাঁড়িয়ে থাকে। তবে পাহাড়ি যুবকেরা কারা, এ বিষয়ে স্থানীয়রা কেউ কিছু জানেন না বলে দাবি করেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী একজন নাম না-প্রকাশের শর্তে জানান, সেদিন রাত একটা ২০ মিনিটের দিকে হঠাৎ গুলির শব্দে তিনি উঁকি দিয়ে দেখেন, সভাপতির বাড়ির দিকে গুলি ছুঁড়তে-ছুঁড়তে ৫ যুবক ধানখেত দিয়ে বের হয়ে যায়। তার কিছু পরও গুলির শব্দ শোনা যায়।
বাবুছড়া গুচ্ছগ্রামের আরেক বাসিন্দা হোসনে আরা বেগম জানান, কিছুদিন পরপর এলাকায় এমন গোলাগুলি হয়। গতরাতে সন্ত্রাসীরা আমাদের বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ে। গুলির শব্দে মাটিতে শুয়ে পড়ায় ছেলের বউ ও নাতিকে নিয়ে প্রাণে রক্ষা পাই। এখনও আতঙ্ক কাটছে না।
মো. আবুল নামে আরেকজন জানান, পার্বত্য চুক্তির পর এমন ঘটনা তিনি আর দেখেননি। সভাপতি আব্দুল মালেকের বাড়িতে হামলা করে চলে যাওয়ার সময় তার বাড়িসহ আশপাশের বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ে ধানখেত দিয়ে পাহাড়ের দিকে চলে যায় সন্ত্রাসীরা। গুলিতে বাড়ির টিন, আসবাবপত্র ও গৃহস্থালী সামগ্রী নষ্ট হয়েছে।
সোনামিয়া টিলা ভূমিরক্ষা কমিটির সভাপতি আব্দুল মালেক অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে বাবুছড়া গুচ্ছগ্রামে আঞ্চলিক সংগঠনের বেশকিছু কর্মী অবস্থান করছিল। তবে তারা কোন্ দলের তিনি তা জানাতে অস্বীকৃতি জানান। গুচ্ছগ্রামে থাকাদের ‘মেহমান’ জানিয়ে আব্দুল মালেক আরও বলেন, মেহমানদের যেন বের করা দেয়া হয়, সে লক্ষ্যে ইউপিডিএফ প্রসীত গ্রুপের লোকজন একাধিকবার হুমকি দেয়। বিষয়টি প্রশাসনকে একাধিকবার জানানোর পরও কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় এমন ঘটনা।
তবে ইউপিডিএফ প্রসীত গ্রুপের সংগঠক অংগ্য মারমা হামলা ও হুমকির বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, ইউপিডিএফ দীর্ঘদিন ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে অগণতান্ত্রিক কর্মকা-ের বিরোধিতা করে আসছে। হত্যা, গুম ও অপহরণের রাজনীতিতে ইউপিডিএফ বিশ^াস করে না। ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ইউপিডিএফ’কে দায়ী করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার আব্দুল আজিজ জানান, আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর আধিপত্য বিস্তারের জেরে এমন ঘটনা ঘটতে পারে। মামলা হলে এ বিষয়ে পুলিশ তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেবে।
প্রসঙ্গত, ১৯৮৬ সাল থেকে নিরাপত্তাজনিত কারণে দীঘিনালার বাবুছড়া এলাকার সোনামিয়া টিলা এলাকার পুনর্বাসিত বাঙালি পরিবারদের সরিয়ে বাবুছড়া বাজারে নিয়ে আসা হয়। এরপর বাঙালিরা আর জমি ও বসতভিটায় ফিরতে পারেনি। এরপর থেকে ভূমি ফিরে পাওয়ার আন্দোলনে নামে বাঙালিরা। সোনামিয়া টিলা ভূমি রক্ষা কমিটির নামে সংগঠন গঠন করা হয়।