দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশি হত্যা : দূতাবাসের সক্রিয় ভূমিকা চাই

দক্ষিণ আফ্রিকার অহিংস নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার দেশে সহিংসতা ও নৃশংসতায় খুন হচ্ছে বাংলাদেশিরা। একটি জাতীয় পত্রিকা সরকারি সংস্থা ওয়েজ আর্নার্স বোর্ড ও শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবাসী ডেস্কের বরাত দিয়ে তাদের ৩০ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেছে, ২০১৬ থেকে ২০১৯ এই ৪ বছরে খুন হয়েছেন ৪৫২ বাংলাদেশি। এই হিসাবে গড়ে ১ বছরে ১০০ জনের বেশি বাংলাদেশি খুন হয়েছেন, প্রতি সপ্তাহে গড়ে ৩ জন হত্যাকা-ের শিকার হচ্ছেন। অবশ্য দেশটিতে অবস্থানরত প্রবাসীদের হিসেবে নিহত হওয়ার সংখ্যা আরও বেশি। এদের বড়ো অংশ তরুণ। ২০১৯ সালে গুলিবিদ্ধ হয়ে পঙ্গু হয়েছেন ৫৬ বাংলাদেশি, অপহরণের ঘটনা ১৮টি, দোকানে ডাকাতির ঘটনা ৫৩৩। বাংলাদেশিদের হত্যা, অপহরণ, দোকানে ডাকাতি নিয়তই ঘটে চলেছে। পত্রিকাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২২ সেপ্টেম্বর ফেনীর তাজুল ইসলাম বৈধ কাগজ হাতে পাওয়ার পর বাড়িতে ফেরার কথা জানান অভিভাবকদের। ওইদিন রাতে দক্ষিণ আফ্রিকায় পুমালাঙ্গায় তার দোকানের দুই কর্মি (মালাওয়ের নাগরিক) কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে তাজুলকে। একই দিন দক্ষিণ আফ্রিকার আরেকটি শহর প্রিটোরিয়ার গাড়ি পার্কিং নিয়ে তর্কাতর্কির জেরে এক ভারতীয় নাগরিক গুলি করে হত্যা করে নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা আজাদ মিয়াকে। দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশিদের হত্যা উদ্বেগজনক। জীবিকার সন্ধানে তারা স্বদেশ থেকে বহুদূরে প্রবাস জীবন বেছে নিয়েছেন। তাদের জীবনের এই করুণ পরিণতি প্রত্যাশিত নয়। প্রবাসী বাংলাদেশিদের ওপর নিপীড়নÑনির্যাতনের ঘটনা নিয়মিত হলেও আমাদের দক্ষিণ আফ্রিকার দূতাবাস এই বিষয়টির সুরাহাকল্পে সক্রিয় নয়। অপরাধীরা জামিন নিয়ে পুনরায় অত্যাচার নিপীড়ন করবে এই ভয়ে মামলা করতে চান না বাংলাদেশিরা। অন্য দেশের নাগরিকরাও খুন হচ্ছেন, দক্ষিণ আফ্রিকার যুবকরা সন্ত্রাসে যুক্ত হয়ে এসব হত্যাকা- ঘটাচ্ছেন বলে জানা গেছে। দক্ষিণ আফ্রিকা বর্ণবাদ ও জাতি বিদ্বেষের শাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘকাল লড়াই করেছে অথচ তাদের কিছু নাগরিক জাতিবিদ্বেষ ও সহিংস ঘটনা ঘটাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের দূতাবাস ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব রয়েছে। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক অভিবাসী কল্যাণ সংস্থা এ ধরণের মানবিক বিপর্যয়ের ঘটনায় উদাসীন থাকতে পারে না।
দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্তমানে ৩ লাখ বাংলাদেশি আছেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশি কমিউনিটি সংস্থা শক্তিশালী না হলে এবং দূতাবাস সক্রিয় না হলে পরিস্থিতির এই অবনতি রোধ করা সম্ভব নয়, অথচ দক্ষিণ আফ্রিকায় চীন, পাকিস্তান ও ভারতের নাগরিকদের ওপর আঘাত পড়লে সরকারিভাবে তা সিরিয়াসলি নেওয়া হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রবাসী বাংলাদেশিরা সে দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসা বাণিজ্যে অবদান রাখছেন। তাদের ওপর এ ধরণের নির্যাতনে দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার নিশ্চুপ থাকতে পারে না। অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তি প্রদান বাঞ্ছনীয়। দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশি কমিউনিটি সংস্থাগুলিকে সোচ্চার হতে হবে। ভিকটিমদের আইনি সহায়তা দিতে তাদের এবং আমাদের দূতাবাসকে এগিয়ে আসতে হবে। আন্তর্জাতিক বিধি অনুযায়ী অভিবাসীদের সকল প্রকার সুরক্ষা দেওয়া দক্ষিণ আফ্রিকান সরকারের কর্তব্য।
আমরা চাই সরকার ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশি হত্যাকা- বন্ধে সে দেশের সরকারের সাথে আলোচনা করবে এবং প্রবাসীদের নিরাপত্তা বিধানে সচেষ্ট হবে।