ডজনখানেক নব্য প্রতিপত্তিশালী ইয়াবা কারবারি নজরদারিতে

আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা হাটলাইনে

নিজস্ব প্রতিনিধি, উখিয়া

উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিত্তিক ডজনখানেক নব্য প্রতিপত্তিশালী ইয়াবা কারবারি গাড়ি-বাড়িসহ অঢেল সহায়-সম্পত্তির মালিক হয়েছে। বর্তমানে তারা আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার শক্ত নজরদারিতে রয়েছে। এদের মধ্যে জনপ্রতিনিধি, প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাও রয়েছে। তাদের পেছনে লেগে থাকা আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন এসব সমাজ ও রাষ্ট্রবিধ্বংসী ইয়াবা কারবারিদের সম্পদের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছেন। সম্প্রতি কক্সবাজার চেইন্দা অ্যামিউজমেন্ট ক্লাবে অনুষ্ঠিত ইয়াবা প্রতিরোধ বিষয়ক সেমিনারে উখিয়া ও কক্সবাজারে দায়িত্বরত সাংবাদিকদের সহযোগিতা করার জন্য র‌্যাব-১৫ এর পক্ষ থেকে উদাত্ত আহ্বান জানানো হয়।

বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি রোহিঙ্গার আবাসস্থল হিসেবে উখিয়ার কুতুপালং সারাবিশে^ পরিচিত। এসব রোহিঙ্গার মাধ্যমে ইয়াবার লেনদেন অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় ইয়াবা সরবরাহ ও সেবনও বেড়েছে মাত্রাতিরিক্ত। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা এসব রোহিঙ্গা সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা প্রদত্ত ত্রাণসামগ্রী ভোগের পাশাপাশি অতিরিক্ত আয়ের উৎস হিসেবে ইয়াবা সরবরাহকে বেছে নেয়ায় শত চেষ্টা করেও ইয়াবা পাচার দমন করা যাচ্ছে না।

কক্সবাজার র‌্যাব-১৫ অধিনায়ক উইং কমান্ডার আজিম উদ্দিন সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, উখিয়া-টেকনাফে ১৬ মাস ধরে মাদকবিরোধী অভিযান চালিয়েও সফল হয়েছি বলে নিজের ওপর আস্থা আনতে পারছি না। তিনি বলেন, সাংবাদিকেরা লেখনির মাধ্যমে তাদেরকে অনেক সহযোগিতা করেছেন। এখনো করছেন। ভবিষ্যতেও করবেন, এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, যেখানে ইয়াবার খবর পাবেন তথ্যভিত্তিক সংবাদ পাঠালে তাৎক্ষণিক র‌্যাব সেখানে উপস্থিত হবে। যদিও-বা বর্তমানে কক্সবাজারে র‌্যাব-১৫ এর জনবল মাত্র ২৫০জন বলে তিনি কিছুটা হতাশা প্রকাশ করেন। বাদ বাকি কিছু সংখ্যক র‌্যাব সদস্য সরকারি বিভিন্ন দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত থাকায় তারা অপারেশন থেকে বিরত থাকেন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্যমতে, রোহিঙ্গাদের ইয়াবার অর্থের পুরোটাই দিচ্ছে উখিয়ার প্রভাবশালী কিছু জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক ব্যক্তি। তারা সবাই ওই এলাকার সাবেক বিতর্কিত জনপ্রতিনিধির অনুসারী। সাম্প্রতিক সময়ে উখিয়ার কুতুপালং-এর প্রভাবশালী ইউপি সদস্য বখতিয়ার বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার আগে পুলিশের কাছে অনেক প্রভাবশালীর তথ্য দিয়ে গেছে। ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত ওই জনপ্রতিনিধি সাবেক বিতর্কিত এক জনপ্রতিনিধির আস্থাভাজন ছিলেন।

সেমিনারে সাংবাদিক বক্তারা বলেন, হলদিয়াপালং-এর মরিচ্যা এলাকার সাবেক চেয়ারম্যানের (বিতর্কিত জনপ্রতিনিধির ঘনিষ্ঠ হিসেবে প্রভাবশালী) গত দুবছরে বিপুল অর্থসম্পদ অর্জনের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। উখিয়ার বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা ও ইউপি সদস্য কঠোর নজরদারিতে আছেন। এছাড়া রাজাপালং, পালংখালী ও জালিয়াপালং ইউনিয়নের আরো কয়েকজন ইউপি সদস্যকে নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। বক্তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিত্তিক চালু করা ওয়াফাই বন্ধ করে দেবার দাবি জানিয়ে বলেন, রোহিঙ্গারা আধুনিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইয়াবার বড় বড় চালান পাচার করছে। সেসব চালানের অধিকাংশ ধরাছোঁয়ার বাইরে  থেকে যাচ্ছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বখতিয়ার মেম্বার দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গাদের মাদক ব্যবসায় পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছিল। সহযোগী আবু তাহেরের ইয়াবা ব্যাবসায় বখতিয়ার কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে। কুতুপালং কেন্দ্রিক রোহিঙ্গাদের সকল বড় বড় চালানের সাথে এই বখতিয়ার জড়িত। বখতিয়ার মেম্বারের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলায় এজাহারনামীয় ৩৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। গ্রেফতার আতংকে বর্তমানে অনেক শীর্ষ ইয়াবা কারবারি গা ঢাকা দিয়েছে। যদিও-বা পুলিশ প্রতি রাতেই এসব ইয়াবা কারবারিদের গ্রেফতারে সচেষ্ট বলে জানিয়েছেন উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মর্জিনা আকতার মরজু।

উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, যারা মাদক ব্যবসার মতো ঘৃণ্যতম কাজের সাথে ন্যূনতম জড়িত, তিনি তাদের মনপ্রাণ থেকে ঘৃণা করেন। তিনি বলেন, ইয়াবা কারবারের অপরাধে র‌্যাবের হাতে নিহত বখতিয়ার মেম্বারের ছেলে হেলাল উদ্দিন একজন শিবির নেতা হয়ে তিনি কীভাবে আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সাথে উঠাবসা করেন, তা খতিয়ে দেখা উচিত। সে কখনো আওয়ামী লীগ নেতা, কখনো সরকারদলীয় নেতার পিএস, কখনো রাজনৈতিক দলীয় নেতা হিসেবে পরিচয় দিয়ে আসছে। এসব প্রভাব-প্রতিপত্তির কারণে তাদের অবৈধ ব্যবসার মাধ্যমে অর্থবিত্ত বেড়েছে তিনগুণ। এসব লোকজন বা তাদের সহকর্মীদের শায়েস্তা করা প্রয়োজন বলে দাবি করেন তিনি।