টেকনাফ স্থলবন্দর ২২ দিন বন্ধের পর আবার চালু

নিজস্ব প্রতিনিধি, টেকনাফ :

কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দর বন্ধের ২২ দিন পর কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে মিয়ানমারের আকিয়াব বন্দর থেকে একটি আদাবোঝাই ট্রলার এসেছে। মিয়ানমার সরকার করোনার প্রভাবে ২২ দিন বন্ধ ঘোষণা করেছিল। এরপর মিয়ানমার থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে কোন প্রকার ট্রলার আসেনি। ফলে বন্ধের ২২ দিন পর ১৭ জুলাই শুক্রবার রাত ৭টার দিকে দু’জন ব্যবসায়ীর কাছে পণ্যবোঝাই ট্রলার ঘাটে এসে ভিড়ে।

জানা যায়, গত ২৫ জুন মিয়ানমারের আকিয়াব বন্দরে কয়েকজন মাঝিমাল্লার দেহে করোনাভাইরাস শনাক্তের পর বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত বাণিজ্যের আমদানি-রফতানি বন্ধ করে দেয়। তবে মংডু থেকে গত ৩ জুলাই পর্যন্ত পণ্যবোঝাই ট্রলার এসেছিল। মূলত মিয়ানমারের মংডু ও আকিয়াব এই দুই জায়গা থেকে পণ্যের চালান এসে থাকে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে টেকনাফ স্থলবন্দরের ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দীন চৌধুরী জানান, ‘২২ দিন পর মিয়ানমারের আকিয়াব বন্দর থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দরে একটি পণ্যবোঝাই ট্রলার এসেছে। ব্যবসায়ীরা আইজিএম জমা দিলে ১৯ জুলাই রোববার রাজস্ব প্রদান করে আমদানিকৃত পণ্য খালাস ও সরবরাহ করা হবে।

এদিকে ১৭ জুলাই আমদানিকারক আবু ছালেকের ৬০ টন ও নাছির উদ্দিনের কাছে ৬০ টন মোট ১২০ টনের একটি আদাবাহী ট্রলার টেকনাফ স্থলবন্দর জেটিতে এসে পৌঁছায়। অনেক দিন পর বন্দরের জেটিতে পণ্যবোঝাই ট্রলা আসায় সংশ্লিষ্টদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে।

এ বিষয়ে আমদানিকারক আবু ছালেক জানান, ‘দীর্ঘদিন পর মিয়ানমার থেকে ১২০ টন (১ লাখ ২০ হাজার কেজি) আদাবাহি একটি ট্রলার আসে। এর মধ্যে তার ৬০ টন রয়েছে। বাকিগুলো অন্য এক ব্যবসায়ীর। কোরবানির সময়ে বিশেষ করে আদাসহ নিত্যপ্রয়োজনী পণ্যসামগ্রী আমদানি করা হয়ে থাকে। কিন্তু করোনার প্রভাবে সবকিছু থমকে আছে।’

তিনি আরও বলেন, মিয়ানমারে কিনে রাখা শত শত টন আদা আকিয়াব বন্দরে রয়েছে। এগুলো আনা যাচ্ছিল না। ফলে অনেক ব্যবসায়ীর আদা পঁচে গেছে। এতে ব্যবসায়ীদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। মিয়ানমারে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ায় বন্দর লকডাউন ছিল।

টেকনাফ স্থলবন্দরের শুল্ক কর্মকর্তা আবছার উদ্দীন জানান, মিয়ানমারে করোনাভাইরাসের কারণে ২২ দিন বন্ধের পর শুক্রবার রাত ৭টার দিকে আদাবোঝায় একটি ট্রলার এসেছে। এসব আদা আমদানি করেছেন আবু ছালেক ও নাছির উদ্দীন নামক দুই ব্যবসায়ী। এসব পণ্য আগামী রোববার রাজস্ব প্রদান করে খালাস ও সরবরাহের প্রক্রিয়া চলবে।

তিনি আরও বলেন, সর্বশেষ গত ৩ জুলাই মিয়ানমার মংডু এবং গত ২৫ জুন আকিয়াব বন্দর থেকে টেকনাফ স্থল বন্দরে পণ্য এসেছিল। এর পর থেকে আর কোন পণ্যবোঝায় ট্রলার বন্দরে আসেনি।

টেকনাফ স্থলবন্দর সুত্রে জানা যায় , মিয়ানমারের মংডু ও আকিয়াব থেকেই মূলত পণ্য আসে। গত ২৫ জুন আকিয়াব বন্দরে কয়েকজন মাঝিমাল্লার করোনা পাওয়া গেছে। এরপরই সেখানে লকডাউন শুরু হলে পণ্যের চালান আসা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ৩ জুলাই মংডু লকডাউন দেওয়ায় পণ্যবাহী ট্রলার আসছে না। তবে একই দিন সকালে টেকনাফ স্থলবন্দর থেকে একটি পণ্যবাহী ট্রলার রওনা দিয়েছিল মিয়ানমারে।

টেকনাফ হলো মিয়ানমারের সঙ্গে আমদানি-রফতানির একমাত্র স্থলবন্দর। টেকনাফ স্থলবন্দর হলেও মূলত নদীপথ ব্যবহার করেই এই পথে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য হয়।

এটি একটি আমদানিনির্ভর স্থলবন্দর। মিয়ানমার থেকে কাঠ, চাল, মাছ, শুঁটকি, আদা, হলুদ, আচার, তেঁতুল, চকলেট, মসলা, মৌসুমি ফল আমদানি হয়। আর বাংলাদেশ থেকে বেশি যায় প্লাস্টিক পণ্য। এছাড়া সীমিত পরিসরে তৈরি পোশাক, সিমেন্ট এবং ওষুধও রফতানি হয়। মিয়ানমারের মংডু ও আকিয়াব থেকেই মূলত পণ্য আসে।