টাকা জোগানদাতা কে? তদন্ত করছে দুদক

প্রদীপের পক্ষে আইনি লড়াইয়ে বিপুল ব্যয়

নিজস্ব প্রতিবেদক :

টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশের পক্ষে আইনি সহায়তা দিতে গত ২৭ আগস্ট একজন ব্যারিস্টারের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম থেকে ৫ জন আইনজীবী ও ২ জন সহকারী কক্সবাজার যান। ১৫ দিন রিমান্ড শেষে গত ২ সেপ্টেম্বর আদালত প্রদীপকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়ার পর এসব আইনজীবী চট্টগ্রামে ফিরে এসেছেন। ২৭ আগস্ট থেকে ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬দিন দুই সহকারীসহ ৭ জন আইনজীবী কক্সবাজারের কলাতলি এলাকার ওয়েস্টিন হোটেলে অবস্থান করেন।

একটি গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, ঢাকার একজন ব্যারিস্টারসহ চট্টগ্রামের ৫ আইনজীবীর কক্সবাজারে হোটেলে থাকা-খাওয়া, আইনি লড়াই করাসহ নানা বিষয়ে অন্তত ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে।

এদিকে গত ১৭ আগস্ট ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকি কারণসহ ৮জনের ব্যাংক হিসাব ৩০ দিনের জন্য ফ্রিজ (স্থগিত) করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইউ)। এদিকে গত ২৩ আগস্ট ওসি প্রদীপ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা করেন দুদকের সহকারী পরিচালক পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন।

ওই মামলার তদন্তকারী সংস্থার প্রশ্ন, ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করার পরও প্রদীপের পক্ষে আইনি লড়াইয়ের পেছনে বিপুল পরিমাণ টাকার জোগান দিচ্ছে কে? বিষয়টি দুদক তদন্ত করে দেখছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির পক্ষে সরকারি কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট মাহমুদুল হক মাহমুদ। তবে এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) বিকালে সুপ্রভাতকে বলেন, ‘মামলার তদন্তকালে প্রতিদিন নতুন নতুন বিষয় সামনে আসছে। এর সবগুলো তদন্তের আওতায় আনা হচ্ছে।’

এদিকে ওসি প্রদীপের পক্ষে আইনি লড়াই করতে ওকালতনামা নিজেই দিয়েছেন বলে দাবি করে অ্যাডভোেকেট আহসানুল হক হেনা বুধবার বিকাল পাঁচটার দিকে সুপ্রভাতকে জানান, ওসি প্রদীপ কারগারে থাকলেও তার জন্য আইনি লড়াইয়ে টাকা খরচের জন্য তার ভাই, আত্মীয়স্বজন ছাড়া আরও কত শুভাকাক্সক্ষী আছে।

আমাদের কক্সবাজার প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ১৫ দিনের রিমান্ড শেষে গত ২ সেপ্টেম্বর প্রদীপকে কক্সবাজার আদালতে উপস্থাপন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র‌্যাবের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. খায়রুল ইসলাম। প্রদীপকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নতুন করে রিমান্ড আবেদনের আইনি সুযোগ না থাকলেও এদিন তার পক্ষে কোন আইনজীবী জামিন আবেদন করেননি।

দুদকের একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রদীপকে জামিন করাতে ৬ দিন যাবৎ কক্সবাজারে অবস্থান করা পাঁচজন আইনজীবীর প্রত্যেককে এককালীন মোটা অঙ্কের টাকা দেওয়া ছাড়াও প্রতিদিন একেকজনের পেছনে ব্যয় করা হয়েছে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা। এদিকে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২৩ আগস্ট দুদক মামলা দায়েরের পর থেকে আত্মগোপনে রয়েছেন প্রদীপের স্ত্রী চুমকি কারণ। তার (চুমকি) দেশ ত্যাগ ঠেকানোর ব্যবস্থা নিতে ৩১ আগস্ট পুলিশ সদর দপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছে দুদক। তবে দুদকের একাধিক কর্মকর্তার ধারণা, প্রদীপের স্ত্রী চুমকি অবৈধ পথে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে চলে গেছেন।

প্রসঙ্গত, প্রদীপের পক্ষে আইনি সহায়তা দিতে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যাওয়া আইনজীবীরা হলেন- অ্যাডভোকেট আহসানুল হক হেনা, মেজবাহউদ্দিন, মহিউদ্দিন, ব্যারিস্টার সাঈদ মঈনুল আহসান। অ্যাডভোকেট আহসানুল হক হেনা তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে পিপি ও সাকা চৌধুরীর প্যানেল আইনজীবী ছিলেন। ব্যারিস্টার সাঈদ মঈনুল আহসান তার ছেলে।

উল্লেখ্য, গত ৩১ জুলাই রাতে  টেকনাফের শামলাপুর তল্লাশি  চৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। তিনি মারিশবুনিয়ার একটি পাহাড়ে ভিডিওচিত্র ধারণ করে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে কক্সবাজারের হিমছড়ির নীলিমা রিসোর্টে  ফেরার সময় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় গত ৫ আগস্ট কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যা মামলা করেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস। এতে ৯ জনকে আসামি করা হয়। মামলার আসামি ৭ পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে তাদেরকে বরখাস্ত করা হয়। সিনহা হত্যার পর পুলিশের করা মামলার তিন সাক্ষীকে গ্রেফতার করে মামলার তদন্ত সংস্থা র‌্যাব। এছাড়া হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে আরও তিন এপিবিএন সদস্যকে গ্রেফতার করে এলিট ফোর্সটি। এনিয়ে মোট ১৩ আসামি কারাগারে রয়েছেন।

অপরদিকে, একই ঘটনায় টেকনাফ থানায় দুটি ও রামু থানায় পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে। সাক্ষী অপহরণের অভিযোগে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় পরে আরেকটি মামলা হয়। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ৫টি মামলা হয়েছে। যার চারটি তদন্ত করছে র‌্যাব-১৫।