ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা

নগরীর সিটি গেইট এলাকায় অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করায় জরিমানা করেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট

মোহাম্মদ নাজিম:
প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ও বিস্তারের শুরু থেকেই চট্টগ্রামে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ রাখতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করছেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষক অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়। পর্যাপ্ত সুরক্ষা থাকার পরও অনেকের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে।
নগরীর ১৬টি থানা এলাকায় দুই শিফটে ভাগ করে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান পরিচালনা করছেন। অন্যদিকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও পুলিশ নিয়ে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন।
জেলা প্রশাসনের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের করোনা শনাক্ত হওয়ায় এবং জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ঢাকার কয়েকজন কর্মকর্তা করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কারণে অভিযান চালানো কর্মকর্তারা করোনা আতঙ্কে ভুগছেন।
সারাদেশের মতো প্রথম থেকে চট্টগ্রাম নগরীসহ বিভিন্ন উপজেলায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কম থাকলেও সপ্তাহ না পেরুতে হু হু করে বাড়তে থাকে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ডাক্তার, পুলিশ, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। নগরীতে করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় সবার মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। শুরু থেকে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা অভিযান চালিয়ে আসলেও মাঝপথে জেলা প্রশাসনের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হওয়ায় এখন অভিযান চালানো কর্মকর্তা ও ম্যাজিস্ট্রেটদের মাঝে করোনার ভয় কাজ করছে। করোনার সুরক্ষার মধ্যে থেকে অভিযান চালালেও করোনার আতঙ্ক বাড়ছে।
এবিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক মো. কামাল হোসেন সুপ্রভাতকে বলেন, জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা করোনা ভাইরাসের পর্যাপ্ত সুরক্ষা নিয়ে মাঠে কাজ করছেন। তারপরও ভয়তো কাজ করবেই। করোনার প্রদুর্ভাবের মধ্যে সতর্ক থেকে চ্যালেঞ্জ নিয়ে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তারা করোনার প্রভাব বিস্তারে শুরু থেকেই নগরীর বিভিন্ন এলাকায় বাজার তদারকি অভিযান পরিচালনা করছেন। তাদের মধ্যেও করোনা ভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ধারাবাহিক অভিযান চালালেও মাঝেমধ্যে অভিযান চালানো হয় না। গত বৃহস্পতিবার (২১ মে) বাজার তদারকি মূলক অভিযান চালানো হয়নি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে ভোক্তা অধিকারের এক কর্মকর্তা সুপ্রভাতকে বলেন, করোনার বিস্তারের কারণে অভিযান চালানো হয়নি। আমাদের ঢাকা অফিসের কর্মকর্তা করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। ঢাকা থেকে আমাদেরকে সাবধানতা অবলম্ব করে অভিযান চালাতে বলছে। আমরাও করোনা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছি।
এবিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাট্টলী সার্কেল) মো. তৌহিদুল ইসলাম সুপ্রভাতকে বলেন, করোনার মধ্যেও ব্যক্তিগত সুরক্ষা নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা যেহেতু মাঠে কাজ করি ভয়তো হবেই। তাপরও দেশের জন্য কাজ করতে হবে। তবে আমরা পর্যাপ্ত সুরক্ষা নিয়ে কাজ করছি।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান সুপ্রভাতকে বলেন, আমরা শুরু থেকেই মাঠে কাজ করছি। আমাদের ঢাকা অফিসের এ পর্যন্ত ১১ জন কর্মকর্তা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। আমরা যারা চট্টগ্রাম বিভাগীয় ও জেলায় কাজ করছি করোনার সুরক্ষা নিয়ে কাজ করছি। তারপরও ভয় হবে। কারণে প্রতিটি স্পটেই মানুষের ভিড় থাকে। অনেকই সামাজিক দূরত্ব মানে না।
তিনি আরো বলেন, নগরীর খাতুনগঞ্জে বাজার তদারকি অভিযান চালাতে এখন ভয় হয়, কারণ ওই এলাকায় অভিযান চালাতে গেলেই সবাই জড়ো হয়ে যায়। কেউ তখন দূরত্ব বজায় রাখে না। তারপরও আমাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।