জে এম সেন ভবনকে ১৮ জানুয়ারির মধ্যে যাদুঘর ঘোষণার দাবি

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জে এম সেন ভবনকে যে কোন মূল্যে রক্ষা করে ব্রিটিশ আমলের স্বাধীনতা সংগ্রামী ও বিপ্লবীদের স্মৃতি রক্ষার্থে ‘স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর’ হিসেবে প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে সর্বস্তরের রাজনৈতিক নেতা ও সুধীজন। তাঁরা ভবন দখল, ভাঙচুরের অপতৎপরতার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
ঐতিহাসিক এ ভবন ভাঙার চক্রান্তের প্রতিবাদে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ আয়োজিত দেশব্যাপী আন্দোলনের অংশ হিসেবে গতকাল শনিবার সকালে রহমতগঞ্জ সড়কে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে।
বিক্ষোভ মিছিলপূর্ব সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন প্রকৌশলী পরিমল কান্তি চৌধুরী। সঞ্চালনা করেন কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক শ্যামল কুমার পালিত। এতে মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহাতাবউদ্দিন চৌধুরী গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেন বলেন, ঐতিহাসিক জে এম সেন ভবন বাংলা ও বাঙালির ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশ। কোনভাবে এটিকে ভাঙা যাবে না। পুরাকীর্তির মর্যাদা দিয়ে এটিকে সংরক্ষণ করে যাদুঘর প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তিনি দুঃখ করে বলেন, পুরাকীর্তি ঐতিহ্য একে একে ধ্বংসের পথে। নতুন প্রজন্মের সামনে অতীতের ইতিহাস তুলে ধরার জন্যে এসবের সংরক্ষণের আবশ্যকীয়তা দেখা দিয়েছে।
সাবেক মেয়র, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, অর্পিত সম্পত্তি কেনা-বেচার কোন সুযোগ না থাকলেও কিভাবে ভূমিদস্যুরা তা কেনার দাবি তোলে? তিনি এসব জাল-জালিয়তিপূর্ণ দলিল যারা সৃজন করে আদালতকে ভ্রমে ফেলে ভুয়া আদেশ হাসিল করেছে তাদের এসব অপকর্মের তদন্তপূর্বক কঠোর শাস্তিদানের দাবি জানান। জে এম সেন ভবন রক্ষা করে এতে যাদুঘর প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে তিনি সব ধরনের সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেন।
সমাবেশে জানানো হয়, মহানগর বিএনপি সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন ইতোমধ্যে জে এম সেন ভবন ভাঙার চক্রান্তের বিরোধিতা করে এতে যাদুঘর প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের প্রতি পূর্ণ সংহতি ও একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির তপন চক্রবর্তী, জাসদের ইন্দু নন্দন দত্ত, মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান, শ্রমিক নেতা সফর আলী, আওয়ামী লীগ নেতা খোরশেদ আলম, মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার সচিব মোহাম্মদ ইউনুস, ঐক্য পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. জিনবোধি ভিক্ষু, উত্তর জেলার সভাপতি অধ্যাপক রণজিৎ কুমার দে, দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক তাপস হোড়, সাংবাদিক আলীউর রহমান, কেন্দ্রীয় সদস্য অ্যাডভোকেট প্রদীপ চৌধুরী, ট্রাস্টি উত্তম শর্মা, মহানগর সহসভাপতি দীপংকর চৌধুরী কাজল, মহানগর পূজা পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট চন্দন তালুকদার, জেলার সাধারণ সম্পাদক অসীম কুমার দেব, মহানগর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিলাল দেওয়ানজী, সুমন কান্তি দে, সুকান্ত দত্ত, রুমা কান্তি সিংহ, সাংগঠনিক সম্পাদক দেবাশীষ নাথ দেবু ও সাগর মিত্র, সহ-সম্পাদক বিশ^জিৎ পালিত, বিকাশ মজুমদার প্রমুখ।
সমাবেশে অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বলেন, ভূমিদস্যুরা জনৈক মিলন সেনগুপ্তের কাছ থেকে জে এম সেন ভবন ও এর ভূমি ক্রয়ের দাবি করেছেন। অথচ সামাজিক গণমাধ্যমে সাংবাদিকের সাথে তার এক সাক্ষাতকার প্রচারিত হয়েছে, যেখানে তিনি বলেছেন এ ভূমির মালিক তিনি নন। কারো কাছে জমি বিক্রির কোন ধরনের দলিলে তিনি স্বাক্ষর করেন নি। রানা দাশগুপ্ত প্রশ্ন রেখে বলেন, এহেন মূল্যবান জমি যদি কারো কাছে মিলন সেন বিক্রি করে থাকেন তাহলে গ্রামের কুঠিরে অনাহারে-অর্ধহারে তাঁর মানবতার জীবন যাপন করতে হয় কেন? তিনি এ ব্যাপারে প্রশাসনিক তদন্তের এবং মিলন সেনের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্যে সরকার ও প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানান।
তিনি ঐতিহ্যসমৃদ্ধ জে এম সেনের বাড়িটি রক্ষা করে ১৮ জানুয়ারির মধ্যে এতে ‘স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের যাদুঘর’ প্রতিষ্ঠার দাবি করেন। অন্যথায় এটা বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান ধর্মঘট, প্রয়োজনে বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে উল্লেখ করেন। বিজ্ঞপ্তি