জলাবদ্ধতা : মেগাপ্রকল্পে মেয়াদ বাড়লো দুই বছর

নগরে জলাবদ্ধতা প্রকল্পে কাজ চলছে বিভিন্ন স্থানে-সুপ্রভাত

নিজস্ব প্রতিবেদক :

তিন বছর মেয়াদের প্রকল্পের প্রথম দেড় বছর লেগে যায় পরিকল্পনা প্রণয়নে। পরবর্তী দেড় বছরে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করা সম্ভব ছিল না, যথারীতি তা হয়নিও। আর গত বছর থেকে পুরোদমে কাজ শুরু হতে না হতেই জুনে শেষ হয়ে যায় জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্পের কাজ। পরিকল্পনা অনুযায়ী বাকি কাজ শেষ করতে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত সময় বর্ধিত করে মন্ত্রণালয়।
সময় বাড়ানোর কথা স্বীকার করে জলাবদ্ধতা নিরসন মেগা প্রকল্পের পরিচালক ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ মাঈনুদ্দিন বলেন, ‘প্রকল্পের সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছিলাম। মন্ত্রণালয় সেই অনুমোদন দিয়েছে এবং তা জুন ২০২২ পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে ডিজাইন অনুযায়ী প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ শেষ হবে। আর প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ শেষ হলে নগরীতে জলাবদ্ধতা দুর্ভোগ থাকবে না।’
এদিকে প্রকল্পের অগ্রগতি প্রসঙ্গে জানা গেছে, শহরের ভেতরের নালা ও খালের সাথে সংযোগ দেয়ার কাজ প্রায় শেষ। বড় খালগুলো থেকে মাটি অপসারণের কাজও প্রায় শেষের পথে। তবে ৫টি খালের মুখে রেগুলেটর বসানোর কাজ এখনো শেষ হয়নি। এসব কাজ আগামী বছরের মধ্যে হয়তো শেষ হতে পারে।
এবিষয়ে জলাবদ্ধতা নিরসন মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়ন অংশের পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ শাহ আলী বলেন, ‘পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। তবে আশা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারবো। আর যেভাবে কাজ চলছে তাতে আগামী বর্ষায় নগরবাসী অনেক স্বস্তি পাবে।
তিনি আরো বলেন, চলতি বর্ষায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম হলেও যে কয়েকদিন বৃষ্টি হয়েছে তাতে নগরীর ষোলশহর দুই নম্বর গেট এলাকায় সেভাবে পানি জমেনি। একইসাথে অন্যান্য এলাকায়ও পানি জমেনি। রাস্তা থেকে পানি চলে যাওয়ার কাজগুলো শেষ করায় এর সুফল পাওয়া গেছে।
বৃষ্টির পানিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা কাজে অগ্রগতি দেখা গেলেও জোয়ারের পানিতে ঠিকই নগরীর আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা, ছোটোপুলসহ নগরীর নিচু এলাকাগুলো প্লাবিত হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে লে. কর্নেল মোহাম্মদ শাহ আলী বলেন, ‘প্রকল্পের আওতায় ৫টি রেগুলেটর রয়েছে। এসব রেগুলেটর বসানোর কাজ আগামী বর্ষার আগে শেষ হবে। আর তা হয়ে গেলে জোয়ারের পানিতে নিচু এলাকাগুলো প্লাবিত হওয়া থেকে পরিত্রাণ পাবে।’
কিন্তু প্রকল্পের আওতায় খালগুলো সম্প্রসারণ, খালের একপাশে রাস্তা নির্মাণ, জলাধার নির্মাণ ও সিল্টট্র্যাপ নির্মাণের কাজ রয়েছে।
এসব কাজ কখন শেষ করা হবে জানতে চাইলে জলাবদ্ধতা নিরসন মেগা প্রকল্পের পরিচালক আহমেদ মাঈনুদ্দিন বলেন, ‘এগুলো করার জন্য প্রকল্পের আওতায় ভূমি অধিগ্রহণের কিছু কাজ রয়েছে। এসব কাজ করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে এ অর্থবছরে অর্থ ছাড় পাওয়া গেছে। তাই ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হলেই খালের পাড়ে রাস্তা নির্মাণ ও জলাধার নির্মাণের কাজ শুরু করবো।’
উল্লেখ্য, তিন বছর মেয়াদী প্রকল্পটি ২০১৭ সালে একনেকে অনুমোদন পেলেও বাস্তবে এর কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের শেষের দিকে। তখনো অনেক এলাকার ডিজাইন শেষ হয়নি। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় সেনাবাহিনী। সব মিলিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ পুরোদমে শুরু হয় গত বছর থেকে। প্রকল্পের আওতায় নগরীর ৩৬টি খাল আরএস শিট অনুযায়ী পূর্বের অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি, খালের উভয় পাশে ১৫ ফুট চওড়া রোড ও খালের মুখে ৫টি সøুইস গেট বসানো, ৪২টি বালি জমার স্থান, ৩টি জলাধার নির্মাণ, ৩৬টি খাল খননের মাধ্যমে ৫ লাখ ২৮ হাজার ২১৪ ঘনমিটার মাটি উত্তোলন, ৪২ লাখ ঘনমিটার কাদা অপসারণ, নতুন করে ১০ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ, ১ লাখ ৭৬ হাজার মিটার দীর্ঘ রিটেনিং দেয়াল নির্মাণ এবং খালের উভয় পাশে ৮৫ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করার কাজ রয়েছে।