চালু হলো হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতাল, তবে…

সালাহ উদ্দিন সায়েম :
আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতির সঙ্কট থাকায় আইসিইউ ইউনিট ছাড়া কেবল আইসোলেশন ওয়ার্ড নিয়ে চালু করা হয়েছে চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী এলাকার বেসরকারি হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালটি। সোমবার সন্ধ্যায় আইসোলেশন ওয়ার্ডে ৫ জন করোনা আক্রান্ত রোগী ভর্তির মাধ্যমে হাসপাতালটির সেবা শুরু হয়েছে।
২১ মে হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতাল উদ্বোধন করেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিল্পগ্রুপ ও নগরীর বেসরকারি হাসপাতাল মালিকদের সহায়তায় গত চার বছর ধরে বন্ধ থাকা এই ক্লিনিকটি সংস্কার করে করোনা চিকিৎসার জন্য চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
উদ্বোধনের ১০ দিন পরও হাসপাতালটি চালু হয়েছে জোড়াতালি দিয়ে
নগরীর বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিক-হাসপাতাল থেকে চট্টগ্রাম প্রাইভেট ক্লিনিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন হলি ক্রিসেন্টে পুরাতন চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ করে। এতেও রয়েছে শুভঙ্করের ফাঁকি।
এ হাসপাতালে ১৮ শয্যার আইসিইউ ইউনিট চালু করার কথা বলা হলেও সেখানে ভেন্টিলেটর দেওয়া হয়েছে ৯টি। এরমধ্যে একটি ভেন্টিলেটর নষ্ট। ১৮ শয্যার বিপরীতে ভেন্টিলেটর বসানো হয়েছে ৮টি। বাকি ১০টি শয্যায় ভেন্টিলেটর নেই। এ হাসপাতালে নেই সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট।
এ হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ৮০টি শয্যা থাকার কথা বলা হলেও বসানো হয়েছে মাত্র ২৮টি শয্যা। কিন্তু আইসোলেশন ২৮ শয্যা ও আইসিইউ ১৮ শয্যার বিপরীতে ২০ জন মেডিক্যাল অফিসার নিয়োগ দেওয়া হলেও কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন ১৫ জন। বাকি ৫ জন অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে যোগ দিতে পারবে না বলে জানা গেছে।
এদিকে এ হাসপাতালের জন্য গত ১০ দিন ধরে চেষ্টা করেও চতুর্থ শ্রেণীর কোনো কর্মচারী খুঁজে পাননি কর্তৃপক্ষ। এতে রোগীদের চিকিৎসাসেবার বিঘœ ঘটতে পারে।
হাসপাতালটির এক সহকারী পরিচালক ডা. আবদুল মান্নান করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখনো আইসোলেশনে আছেন।
গত ২০ মে এ হাসপাতালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আবদুল মান্নান ও ফৌজদারহাট ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজিরর সহকারী পরিচালক ডা. মনোয়ার হোসেন চৌধুরীকে হলি ক্রিসেন্ট পরিচালনার দায়িত্ব দেন।
হাসপাতালটির সহকারী পরিচালকের দায়িত্বে থাকা ডা. মনোয়ার হোসেন চৌধুরী সুপ্রভাতকে বলেন, আসলে হাসপাতালটি এখনো পরিপূর্ণভাবে গুছানো হয়নি। অনেক চিকিৎসা সরঞ্জামের সংকট আছে। চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কোনোভাবে আমরা চালু করেছি।
প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা (চট্টগ্রাম প্রাইভেট ক্লিনিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন) আইসিইউ বেড ও ভেন্টিলেটর এনে দিলেও এগুলোর আনুষঙ্গিক অনেক সরঞ্জাম নেই। এগুলো আমাদের নিয়ে আসতে হবে। তাই আইসিইউ ইউনিট ছাড়াই আমরা আপাততে আইসোলেশন ওয়ার্ড দিয়ে চিকিৎসাসেবা শুরু করেছি।
চট্টগ্রামে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিতে গত ৪ এপ্রিল নগরীর বেসরকারি ১২ টি ক্লিনিক নির্বাচন করে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক। কিন্তু ক্লিনিকগুলো করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। এরপর ক্লিনিক মালিকদের সংগঠন প্রাইভেট ক্লিনিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন নগরীর খুলশী জাকির হোসেন সড়কের পরিত্যক্ত হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালকে সংস্কার করে করোনার চিকিৎসার জন্য চালুর উদ্যোগ নেয়। চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিল্পগ্রুপ ও ক্লিনিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের অর্থায়নে হাসপাতালটি সংস্কার করে গত ২৫ মার্চ প্রস্তুত করা হয়।
কিন্তু হাসপাতালটির ব্যবস্থাপনা নিয়ে টানাপোড়েন দেখা দেয়। এই ক্লিনিকটি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের অধীনে পরিচালনার জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য পরিচালক। কিন্তু এই ক্লিনিকটি পরিচালনা করতে অপারগতা প্রকাশ করে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শেষ পর্যন্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জেনারেল হাসপাতালের অধীনে একজন সহকারী পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তার মাধ্যমে ক্লিনিকটি চালু করার নির্দেশ দেয়।