চার শর্তে আগের নকশায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে

বারিক বিল্ডিং থেকে কাস্টমস

জায়গা অধিগ্রহণ না করায় ৪০০ কোটি টাকা সাশ্রয়

নিজস্ব প্রতিবেদক :
বারিক বিল্ডিং থেকে কাস্টমস পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নকশায় নানা জটিলতা ছিল। কখনও অনুমোদিত ডিপিপি অনুযায়ী রাস্তার মাঝখানের ডিভাইডারের উপরে আবার কখনও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তার স্বার্থে সাধারণের জায়গার উপর দিয়ে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। কয়েকমাস আগে সাধারণের জায়গায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও গতকালের সমন্বয় সভায় তা পরিবর্তন করা হয়। এতে আগের অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী বিদ্যমান রাস্তার উপর দিয়ে নির্মিত হবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। গতকাল বিকেলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সম্মেলন কক্ষে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহানের সভাপতিত্বে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ, চট্টগ্রাম নৌ অঞ্চলের এরিয়া কমান্ডার রিয়ার অ্যাডমিরাল এম মোজাম্মেল হকসহ উভয় সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
যেসব শর্তে আগের নকশায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সেগুলো হলো নির্মাণকালীন সময়ে উভয় দিকে যান চলাচলের জন্য দু’লেন করে চার লেন খালি রাখতে হবে, ফ্লাইওভারের যে পাশে কেপিআই থাকবে সেপাশে শব্দ নিরোধক ফেন্সিং দিতে হবে, নির্মাণকালীন সময়ে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ এবং বন্দর কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে হবে, বন্দরের বিদ্যমান গেটসমূহের মুখে যাতে কোনো পিলার না থাকে সেজন্য স্প্যানের দূরত্ব সমন্বয় করতে হবে।
সভায় আরো জানানো হয়, নতুন করে জায়গা অধিগ্রহণ করতে হবে না বলে এতে সিডিএ’র প্রায় ৪০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।
এ বিষয়ে কথা হয় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের পরিচালক ও সিডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমানের সাথে। তিনি বলেন,‘বৈঠকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের এলাইনমেন্ট নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর আগে বারিক বিল্ডিং থেকে কাস্টমস পর্যন্ত অংশে সাধারণ মানুষের জায়গার উপর দিয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এতে প্রায় শতাধিক ভবন ভাঙা পড়তো এবং মানুষ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতো। একইসাথে প্রকল্পের খরচও বাড়তো। এখন আর সাধারণ মানুষের জায়গা বেশি অধিগ্রহণ করতে হবে না। ৮ থেকে ১০ ফুট চওড়া পরিমাণ জায়গা অধিগ্রহণ করা লাগতে পারে।
তিনি আরো বলেন, এখন বিদ্যমান রাস্তার রোড ডিভাইডারের উপর দিয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মিত হবে। তবে রাস্তা চওড়া করতে বন্দরের বিপরীতে দিকের অংশে সামান্য জায়গা অধিগ্রহণ করা লাগতে পারে। আর এতে কিছু ভবনের বড়জোর কার্নিশ ভাঙা পড়তে পারে, এর বেশি কিছু নয়।
কাস্টমসের পর থেকে সল্টগোলা পর্যন্ত কোন দিক দিয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মিত হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই অংশে বন্দরের জায়গার উপর দিয়ে নির্মিত হবে। ওই অংশে খালি জায়গা থাকায় কারো ভবন ভাঙা পড়বে না।
এদিকে লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। ইতিমধ্যে সিমেন্ট ক্রসিং থেকে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত পর্যন্ত এলাকায় নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ। ইপিজেড থেকে সিমেন্ট ক্রসিং পর্যন্ত পিলার স্থাপনের কাজ প্রায় শেষ। সল্টগোলা থেকে ইপিজেড পর্যন্ত এলাকায় চলছে পিলার স্থাপনের কাজ। বারিক বিল্ডিং থেকে আগ্রাবাদ পর্যন্ত এলাকায় চলছে পাইলিং ও পিলার নির্মাণ কার্যক্রম। ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ৯টি পয়েন্টে উঠা-নামার জন্য ১৪টি র‌্যাম রয়েছে।
উল্লেখ্য, সরকারি অর্থায়নে ৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকা ব্যায়ে লালখান বাজার থেকে বিমান বন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পের বাস্তবায়ন করছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স রেনকিন জেভি। প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রাম শহর থেকে বিমানবন্দরমুখী মানুষ দ্রুত যাতায়াত করতে পারবে। একইসাথে সাগরপাড়ে আউটার রিং রোড চালু হচ্ছে, সেই রোড দিয়েও মানুষ সহজে বিমান বন্দর যেতে পারবে। অর্থাৎ, বিমানবন্দরমুখি যাতায়াতের আগে যেখানে মাত্র একটি রাস্তা ছিল, এখন বিকল্প রাস্তাও তৈরি হচ্ছে। এতে চট্টগ্রাম মহানগরীর যাতায়াত ব্যবস্থায় পরিবর্তন আসবে।